ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ৪ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ২০ ভাদ্র ১৪৩২

Alamin Islam

Senior Reporter

নতুন ভূমি আইন: দলিল থাকলেও ছাড়তে হবে ৫ ধরনের জমি

জাতীয় ডেস্ক . ২৪আপডেটনিউজ
২০২৫ সেপ্টেম্বর ০৪ ১১:৫৮:০৭
নতুন ভূমি আইন: দলিল থাকলেও ছাড়তে হবে ৫ ধরনের জমি

দেশের ভূমি ব্যবস্থাপনায় এক বিশাল পরিবর্তন আসতে চলেছে। ভূমি মন্ত্রণালয় সম্প্রতি ঘোষণা করেছে যে, ২০২৫ সালের মধ্যে নির্দিষ্ট পাঁচ ধরনের জমির ওপর থেকে বর্তমান দখলদারদের মালিকানা বাতিল হতে পারে, এমনকি তাদের কাছে বৈধ দলিল থাকলেও। মন্ত্রণালয় জোর দিয়ে বলছে, শুধু দলিল থাকলেই এখন আর জমির মালিকানা সুপ্রতিষ্ঠিত হবে না।

সরকারি প্রজ্ঞাপন ও পরিপত্রে ইতিমধ্যে জানানো হয়েছে যে, অবৈধভাবে দখলকৃত এসব জমি স্বেচ্ছায় ফেরত না দিলে প্রশাসন ও আদালত কঠোর আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করবে।

কোন ৫ ধরনের জমি মালিকানা হারাতে পারে?

ভূমি মন্ত্রণালয়ের তথ্যানুযায়ী, যেসব জমি এখন ঝুঁকির মুখে রয়েছে এবং দখলদারদের ছাড়তে হতে পারে, সেগুলো হলো:

উত্তরাধিকার বন্টন না হওয়া সাব-কবলা দলিল: পরিবারের সদস্যদের মধ্যে উত্তরাধিকার সম্পত্তি সঠিকভাবে বন্টন না করেই যদি সাব-কবলা দলিল করা হয়, তবে তা বাতিল হয়ে যেতে পারে। কোনো বঞ্চিত উত্তরাধিকারী আদালতে অভিযোগ জানালে এই ধরনের দলিল সহজেই খারিজ হয়ে যাবে।

ত্রুটিপূর্ণ হেবা দলিল: হেবা দলিল (দানপত্র) করার ক্ষেত্রে দাতার সম্পূর্ণ মালিকানা না থাকলে, শর্ত ভঙ্গ হলে বা আইনি প্রক্রিয়া অনুসরণ না করা হলে সেই দলিল বৈধতা হারাবে।

জাল দলিল: ডিজিটাল ভূমি ব্যবস্থার কল্যাণে এখন জাল দলিল শনাক্ত করা অনেক সহজ হয়ে গেছে। সাব-রেজিস্ট্রি অফিসে দুর্নীতি করে তৈরি করা কোনো দলিল ধরা পড়লে তা আদালত কর্তৃক বাতিল বলে গণ্য হবে।

খাস খতিয়ানের জমি: সরকারি খাস জমি যদি কোনো ব্যক্তি অবৈধভাবে ব্যক্তিগত দখলে রাখেন, তবে তা পুনরুদ্ধার করা হবে। জেলা প্রশাসকদের নির্দেশনায় এসব জমি সরকারের নিয়ন্ত্রণে ফিরিয়ে আনা হবে।

অর্পিত সম্পত্তি: ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধ পরবর্তী সময়ে যেসব সম্পত্তি পরিত্যক্ত বা অর্পিত ঘোষণা করা হয়েছিল, তা কোনো ব্যক্তিগত দখলে থাকতে পারবে না। সহকারী কমিশনার (ভূমি) বা এসিল্যান্ড এই ধরনের জমি চিহ্নিত করে সরকারের কাছে ফেরত দেবেন।

সরকারের পরিষ্কার বার্তা:

ভূমি মন্ত্রণালয় দ্ব্যর্থহীন ভাষায় জানিয়েছে, আদালতের বৈধ রায় ছাড়া এই পাঁচ ধরনের জমির ওপর কোনো দখলই স্থায়ী হবে না। বহু পুরনো দলিল থাকলেও যদি তার আইনি বৈধতা প্রশ্নবিদ্ধ হয়, তবে জমিটি তার প্রকৃত মালিক বা সরাসরি সরকারের নিয়ন্ত্রণে চলে যাবে।

এই যুগান্তকারী পদক্ষেপের মাধ্যমে দেশের সাধারণ মানুষের ন্যায্য অধিকার সুরক্ষিত হবে এবং সরকারের রাজস্ব আয়ও উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি পাবে বলে আশা করা হচ্ছে।

আইন বিশেষজ্ঞদের সতর্কতা:

আইন বিশেষজ্ঞরা বর্তমান দখলদারদের দ্রুত সতর্ক হওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন। তারা বলছেন, দলিল থাকলেই সব শেষ নয়—আদালতে যদি জমির বৈধতা প্রমাণ করা না যায়, তবে তা হাতছাড়া হওয়া অবশ্যম্ভাবী।

FAQ:

নতুন ভূমি আইন কী?

উত্তর: নতুন ভূমি আইন অনুযায়ী, দলিল থাকলেও নির্দিষ্ট ৫ ধরনের জমি ২০২৫ সালের মধ্যে দখলদারদের ছাড়তে হতে পারে। এর উদ্দেশ্য হল ভূমি ব্যবস্থাপনায় স্বচ্ছতা আনা এবং অবৈধ দখল রোধ করা।

কোন ৫ ধরনের জমি ঝুঁকিতে আছে?

উত্তর: উত্তরাধিকার বন্টন না হওয়া সাব-কবলা দলিল, ত্রুটিপূর্ণ হেবা দলিল, জাল দলিল, খাস খতিয়ানের জমি এবং অর্পিত সম্পত্তি এই ৫ ধরনের জমির অন্তর্ভুক্ত।

দলিল থাকলে কি জমি হারানো সম্ভব?

উত্তর: হ্যাঁ, নতুন আইন অনুযায়ী, দলিল থাকলেও যদি জমির উৎস, আইনি প্রক্রিয়া বা দখলের বৈধতা প্রশ্নবিদ্ধ হয় (যেমন জাল দলিল বা খাস জমি), তাহলে সেই জমি হারানো সম্ভব।

কবে থেকে এই আইন কার্যকর হবে?

উত্তর: ভূমি মন্ত্রণালয় ২০২৫ সালের মধ্যে এই প্রক্রিয়া সম্পন্ন করার ঘোষণা দিয়েছে। তবে এর প্রস্তুতি ও নির্দেশনা ইতিমধ্যে দেওয়া হয়েছে।

এই আইন সম্পর্কে আরও তথ্য কোথায় পাব?

উত্তর: ভূমি মন্ত্রণালয়ের ওয়েবসাইট, সরকারি প্রজ্ঞাপন ও পরিপত্রে এই বিষয়ে বিস্তারিত তথ্য পাওয়া যাবে। এছাড়া, অভিজ্ঞ ভূমি আইনজীবীর পরামর্শ নেওয়া যেতে পারে।

আমিনুল ইসলাম/

পাঠকের মতামত:

আপনার জন্য বাছাই করা কিছু নিউজ

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ