ঢাকা, শুক্রবার, ১২ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ২৮ ভাদ্র ১৪৩২

MD. Razib Ali

Senior Reporter

বিয়েতে মোহরানা: জানুন শরীয়তের নিয়ম, ভুল ধারণা ও সমাধান

ধর্ম ডেস্ক . ২৪আপডেটনিউজ
২০২৫ সেপ্টেম্বর ১২ ২২:১১:৪৪
বিয়েতে মোহরানা: জানুন শরীয়তের নিয়ম, ভুল ধারণা ও সমাধান

বিবাহের গুরুত্বপূর্ণ অনুষঙ্গ মোহরানা পরিশোধের বিষয়টি ইসলামী শরীয়তে অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ। যদিও এটি স্ত্রীর অধিকার এবং দ্রুত পরিশোধের নির্দেশ রয়েছে, বর্তমান সমাজে এর বাস্তবায়নে প্রায়শই বিচ্যুতি লক্ষ্য করা যায়। মোহরানার সঠিক বিধান এবং এর গুরুত্ব নিয়ে সম্প্রতি একটি আলোচনা ব্যাপক মনোযোগ আকর্ষণ করেছে।

মোহরানা: স্ত্রীর অপরিহার্য অধিকার

ইসলামী শরীয়ত অনুযায়ী, মোহরানা স্ত্রীর একটি অপরিহার্য অধিকার। পবিত্র কোরআনে আল্লাহ তায়ালা ইরশাদ করেছেন, "তোমরা তোমাদের স্ত্রীদের মোহরানাগুলো অপরিহার্য রূপে পরিশোধ করবে।" অর্থাৎ, এটি মেয়েদের অধিকার এবং বিবাহের সময়ই তা পরিশোধ করে দেওয়া উচিত। রাসুলুল্লাহ (সা.) নিজেও তার তত্ত্বাবধানে অনুষ্ঠিত বিয়েগুলোতে মজলিসেই মোহরানা পরিশোধের বিষয়টি নিশ্চিত করতেন, যা নগদ মোহরানা পরিশোধের গুরুত্বকে তুলে ধরে। এটি সুন্নত এবং সর্বোত্তম পদ্ধতি হিসেবে বিবেচিত।

বাকি মোহরানা ও স্ত্রীর অধিকার

তবে, ইসলামে স্ত্রীর সম্মতিক্রমে মোহরানা পরে পরিশোধের সুযোগও রাখা হয়েছে। যদি স্ত্রী স্বেচ্ছায় সম্পূর্ণ বা আংশিক মোহরানা মাফ করে দেন, তবে স্বামী তা গ্রহণ করতে পারবেন। পবিত্র কোরআনে বলা হয়েছে, "তোমাদের স্ত্রীগণ তোমাদেরকে যদি কোনো ছাড় দেন তাদের মোহরানা থেকে, তাদের অধিকার থেকে, তবে তোমরা তা ভোগ করতে পারো।" এই ছাড় অবশ্যই স্ত্রীর স্বতঃস্ফূর্ত সম্মতিতে হতে হবে।

বর্তমান সমাজের চিত্র ও ইসলামী ব্যাখ্যা

দুঃখজনক হলেও সত্য, বর্তমান সমাজে অধিকাংশ বিয়েতেই মোহরানা বাকি রাখার প্রবণতা দেখা যায় এবং নগদ পরিশোধের ঘটনা খুবই কম। এই প্রবণতা ইসলামী শরীয়তের দৃষ্টিকোণ থেকে মোটেই কাম্য নয়। কারণ, একজন পুরুষ তখনই বিয়ের জন্য অগ্রসর হবেন যখন তার কাছে মোহরানা পরিশোধের সক্ষমতা থাকবে।

প্রশ্ন ওঠে, যদি স্ত্রী মোহরানা পরে পরিশোধের সুযোগ দেন, কিন্তু স্বামী তা পরিশোধে গড়িমসি করেন, সেক্ষেত্রে স্ত্রীর অধিকার কী? এক্ষেত্রে ওলামায়ে কেরামের মধ্যে দুটি মত প্রচলিত রয়েছে। অধিকাংশ ওলামায়ে কেরাম, যেমন ইমাম আবু ইউসুফ, ইমাম মুহাম্মদ, ইমাম শাফি ও ইমাম আহমদ ইবনে হাম্বল (রহ.), মনে করেন যে, একবার সুযোগ দিলে দ্বিতীয়বার স্ত্রীকে বাধা দেওয়ার অধিকার থাকে না।

তবে, ইমাম আবু হানিফা (রহ.) এর মত এক্ষেত্রে ভিন্ন। তাঁর মতে, যদি স্ত্রী দেখেন যে স্বামী মোহরানা পরিশোধে টালবাহানা করছেন বা বিশ্বাস ভঙ্গ করছেন, তাহলে স্ত্রী স্বামীকে শারীরিক সম্পর্ক থেকে বিরত রাখতে পারবেন। এই মতটি দলিলের দিক থেকে অধিকতর শক্তিশালী বলে মত দিয়েছেন একজন বিশিষ্ট আলেম। রাসুলুল্লাহ (সা.) এর কন্যা ফাতিমা (রা.) এর দৃষ্টান্তও এক্ষেত্রে উল্লেখ করা হয়, যেখানে তিনি বাসর রাতে আলী (রা.) কে মোহরানা পরিশোধের জন্য বাধ্য করেছিলেন।

দায়িত্বশীলতার গুরুত্ব

সর্বোপরি, মোহরানা পরিশোধের ক্ষেত্রে স্বামী ও স্ত্রী উভয়কেই দায়িত্বশীল হতে হবে। এটি শুধুমাত্র একটি আর্থিক লেনদেন নয়, বরং স্ত্রীর প্রতি সম্মান ও অধিকারের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ। একান্ত বাধ্য না হলে মোহরানা বাকি রাখা উচিত নয়, এবং বাকি রাখলে তা দ্রুত পরিশোধ করা আবশ্যক। আবেগের বশে বা বিশেষ পরিস্থিতিতে তাৎক্ষণিক সিদ্ধান্তে মোহরানা মাফ না করে, সুচিন্তিতভাবে সিদ্ধান্ত নেওয়া উচিত। আল্লাহ তায়ালা আমাদের সকলকে কোরআন ও সুন্নাহর সমস্ত বিধি-বিধান মেনে চলার তৌফিক দান করুন।

আব্দুর রহিম/

পাঠকের মতামত:

আপনার জন্য বাছাই করা কিছু নিউজ