ঢাকা, রবিবার, ১৪ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ৩০ ভাদ্র ১৪৩২

MD. Razib Ali

Senior Reporter

শোক সংবাদ: মারা গেলেন মুফতি আহমদুল্লাহ

ধর্ম ডেস্ক . ২৪আপডেটনিউজ
২০২৫ সেপ্টেম্বর ১৪ ১৬:০২:৫৪
শোক সংবাদ: মারা গেলেন মুফতি আহমদুল্লাহ

এক অপূরণীয় ক্ষতির মুখোমুখি দেশের ইসলামি অঙ্গন। প্রবীণ আলেম, বর্ষীয়ান মুহাদ্দিস এবং শায়খুল হাদিস আল্লামা মুফতি আহমদুল্লাহ আজ (রোববার) সকালে ইন্তেকাল করেছেন। ৮১ বছর বয়সী এই জ্ঞানতাপস চট্টগ্রামের একটি বেসরকারি হাসপাতালে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন সকাল ৬টা ৫৫ মিনিটে (ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন)।

মরহুমের জানাজার নামাজ আজ রাত ৯টায় চট্টগ্রামের পটিয়া আল-জামিয়া আল-ইসলামিয়া মাদরাসা প্রাঙ্গণে অনুষ্ঠিত হবে। তিনি তাঁর স্ত্রী ছাড়াও তিন ছেলে, চার মেয়ে, অসংখ্য ছাত্র, ভক্ত ও শুভানুধ্যায়ী রেখে গেছেন।

শৈশব, প্রজ্ঞা ও শিক্ষাজীবন:

মুফতি আহমদুল্লাহ ১৯৪১ সালের ১ মে চট্টগ্রামের পটিয়া থানার নাইখাইন গ্রামের এক সম্ভ্রান্ত ধর্মীয় পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতা ছিলেন মাওলানা ঈসা (রহ.) এবং মাতা ছিলেন জিরি মাদরাসার প্রতিষ্ঠাতা মুহতামিম মাওলানা আহমদ হাসান (রহ.)-এর সুযোগ্য কন্যা। মাত্র ১০ বছর বয়সেই তিনি পবিত্র কোরআন হেফজ সম্পন্ন করেন।

এরপর জিরি মাদরাসায় দাওরায়ে হাদিসে প্রতিটি শ্রেণিতেই তিনি প্রথম স্থান অধিকারের বিরল গৌরব অর্জন করেন। পরবর্তীতে, উচ্চশিক্ষার জন্য তিনি পাকিস্তানের জামিয়া আশরাফিয়া, লাহোরে গমন করেন, যেখানে তিনি পুনরায় দাওরায়ে হাদিস সম্পন্ন করেন এবং মাওলানা ইদরিস কান্ধলভি ও মাওলানা রসুল খানের মতো শীর্ষস্থানীয় আলেমদের নিবিড় সান্নিধ্যে আসেন।

শিক্ষকতার জীবন ও আধ্যাত্মিক দীক্ষা:

১৯৬৭ সালে তিনি দারুল উলুম করাচিতে ইফতা বিভাগে ভর্তি হয়ে মুফতিয়ে আজম পাকিস্তান আল্লামা মুহাম্মদ শফি উসমানির (রহ.) কাছ থেকে ফিকহে গভীর পাণ্ডিত্য অর্জন করেন। স্বদেশে ফিরে ১৯৬৮ সালে জিরি মাদরাসায় শিক্ষক হিসেবে যোগ দেন এবং দীর্ঘ ২৩ বছর নিষ্ঠার সাথে শিক্ষাদান করেন।

১৯৯১ সালে তিনি পটিয়া মাদরাসায় স্থানান্তরিত হন এবং ২০২২ সাল পর্যন্ত এই স্বনামধন্য প্রতিষ্ঠানে শায়খুল হাদিস ও প্রধান মুফতির গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করেন। একাধারে মুফতি, মুহাদ্দিস এবং আধ্যাত্মিক সাধক হিসেবে তিনি পরিচিত ছিলেন। ১৯৮১ সালে হাফেজ্জি হুজুর (রহ.)-এর কাছ থেকে তিনি তাসাউফে ইজাজত ও খেলাফত লাভ করেন।

অমূল্য রচনাসমূহ ও ইসলামে অবদান:

মুফতি আহমদুল্লাহর গুরুত্বপূর্ণ গ্রন্থসমূহের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো— দাফউল ইলতিবাস, মাশায়েখে চাটগাম (চট্টগ্রামের মনীষীদের জীবনভিত্তিক দুই খণ্ডের অনন্য রচনা), আন-নাফহাতুল আহমাদিয়্যাহ ফিল খুতুবাতিল মিম্বারিয়্যাহ, তাজকেরাতুন নুর, তাসকিনুল খাওয়াতির ফি শরহিল আশবাহি ওয়ান্নাওয়াযির, ইসলামের দৃষ্টিতে শেয়ারবাজার ও মাল্টিলেভেল মার্কেটিং, যুগোপযোগী দশ মাসায়েল এবং মাজহাব ও মাজহাবের প্রয়োজনীয়তা।

তিনি ছিলেন একজন দূরদর্শী চিন্তাবিদ, প্রজ্ঞাবান ব্যক্তিত্ব এবং বাস্তবভিত্তিক ইসলামি আলোচনার এক উজ্জ্বল আলোকবর্তিকা। তাঁর ইন্তেকাল দেশের ইসলামি জ্ঞানচর্চা ও সমাজে এক বিশাল শূন্যতার সৃষ্টি করেছে।

আব্দুর রহিম/

পাঠকের মতামত:

আপনার জন্য বাছাই করা কিছু নিউজ