ঢাকা, সোমবার, ১৫ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ৩১ ভাদ্র ১৪৩২

MD. Razib Ali

Senior Reporter

৫ কোম্পানির শেয়ার কারসাজি: ৩ ব্যক্তিকে দেড় কোটি টাকা জরিমানা বিএসইসির

শেয়ারনিউজ ডেস্ক . ২৪আপডেটনিউজ
২০২৫ সেপ্টেম্বর ১৫ ১০:৫৬:৪৪
৫ কোম্পানির শেয়ার কারসাজি: ৩ ব্যক্তিকে দেড় কোটি টাকা জরিমানা বিএসইসির

শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত পাঁচটি কোম্পানির শেয়ারের মূল্য কারসাজির অভিযোগে তিন ব্যক্তিকে মোট ১ কোটি ৫৫ লাখ টাকা জরিমানা করেছে দেশের পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)। সম্প্রতি বিএসইসির কমিশন সভার এক গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্তে এই শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে বলে কমিশন সূত্র নিশ্চিত করেছে।

যে পাঁচ কোম্পানির শেয়ার নিয়ে এই কারসাজির ঘটনা ঘটেছে, সেগুলো হলো- গ্লোবাল ইন্স্যুরেন্স পিএলসি, ইসলামী ইন্স্যুরেন্স বাংলাদেশ লিমিটেড, সেন্ট্রাল ইন্স্যুরেন্স কোম্পানি লিমিটেড, পিপলস ইন্স্যুরেন্স কোম্পানি লিমিটেড এবং রিপাবলিক ইন্স্যুরেন্স কোম্পানি লিমিটেড।

বারবার একই চক্রের কারসাজি:

তদন্তে বেরিয়ে এসেছে যে, এই তিন অভিযুক্ত আগেও শেয়ার ব্যবসায়ী মো. আবুল খায়ের হিরুর সহযোগী হিসেবে শেয়ার কারসাজিতে জড়িত ছিলেন এবং তাদের বিরুদ্ধে একাধিকবার জরিমানা আরোপ করা হয়েছে।

প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী, ২০২১ সালের ১৯ থেকে ২৯ জুলাইয়ের মধ্যে, মাত্র ১০ দিনের ব্যবধানে, অভিযুক্তরা নিজেদের মধ্যে যোগসাজশ করে 'সিরিজ ট্রেডিং'-এর মাধ্যমে উল্লিখিত কোম্পানিগুলোর শেয়ারের দাম অস্বাভাবিকভাবে বাড়িয়ে বিপুল পরিমাণ মুনাফা তুলে নিয়েছেন। অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে বিএসইসি দীর্ঘদিন তদন্ত চালিয়ে এই কারসাজির সঙ্গে জড়িতদের চিহ্নিত করে আইনের আওতায় এনেছে।

আরও পড়ুন:

এক নজরে শেয়ারবাজারের আলোচিত ১২ খবর

৫২৫ শতাংশ লভ্যাংশ পেল বিনিয়োগকারীরা

'বি' থেকে 'জেড' ক্যাটাগরিতে স্থানান্তর এক কোম্পানির শেয়ার

শেয়ারবাজারে আসছে বড় পরিবর্তন: ডিএসইর রেকর্ড ডেট প্ল্যান!

'জেড' থেকে 'এ' ক্যাটাগরি ও 'বি' থেকে 'জেড' ক্যাটাগরিতে স্থানান্তর দুই কোম্পানির শেয়ার

ওই সময়ে পুঁজিবাজারে ব্যাপক গুঞ্জন ছিল যে, এই ইন্স্যুরেন্স কোম্পানিগুলোর শেয়ারের দাম কোম্পানিগুলোর ব্যবসা ও আর্থিক অবস্থার উন্নতির কারণে নয়, বরং কারসাজির মাধ্যমে বাড়ানো হচ্ছে। এমন পরিস্থিতিতে, রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের পর পুনর্গঠিত বিএসইসি, খন্দকার রাশেদ মাকসুদের নেতৃত্বে, যেকোনো ধরনের কারসাজির বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান নিয়েছে।

কে কত জরিমানা গুনছেন:

কমিশন সূত্রে জানা গেছে, এই কারসাজির জন্য মো. সাইফ উল্লাহকে সর্বোচ্চ ১ কোটি ১০ লাখ টাকা জরিমানা করা হয়েছে। এছাড়া, মো. এ.জি. মাহমুদ ও মো. সাইফ উল্লাহকে যৌথভাবে ৪২ লাখ টাকা এবং এস. এম. মোতাহারুল জানানকে ৩ লাখ টাকা জরিমানা করা হয়েছে। সব মিলিয়ে মোট ১ কোটি ৫৫ লাখ টাকা জরিমানা ধার্য করা হয়েছে।

কারসাজির মূল হোতা ও সহযোগী:

তদন্তে আরও উঠে এসেছে যে, মো. সাইফ উল্লাহ এই কারসাজির নেতৃত্বে ছিলেন। তার সহযোগী হিসেবে কাজ করেছেন মো. এ.জি. মাহমুদ, যিনি সম্পর্কে সাইফ উল্লাহর শ্যালক, এবং এস. এম. মোতাহারুল জানান। এই তিনজন সিটি ব্যাংক ক্যাপিটাল রিসোর্স লিমিটেডে তাদের বিও (বেনিফিশিয়ারি ওনার্স) হিসাব ব্যবহার করে সিরিজ ট্রেডিংয়ের মাধ্যমে শেয়ারের দাম কৃত্রিমভাবে বাড়িয়েছেন। তারা সবাই শেয়ার ব্যবসায়ী মো. আবুল খায়ের হিরুর সহযোগী হিসেবে পরিচিত।

অতীতেও একই ধরনের অপরাধ:

এই তিনজনের বিরুদ্ধে এর আগেও শেয়ার কারসাজির অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় জরিমানা করা হয়েছে:

২০২০ সালের সেপ্টেম্বর-অক্টোবর: প্রভাতি ইন্স্যুরেন্সের শেয়ার নিয়ে কারসাজির দায়ে মো. সাইফ উল্লাহকে ১৫ লাখ এবং মো. এ.জি. মাহমুদকে ১০ লাখ টাকা জরিমানা।

২০২১ সালের ফেব্রুয়ারি: বাংলাদেশ ন্যাশনাল ইন্স্যুরেন্সের শেয়ার কারসাজিতে জড়িত থাকার জন্য হিরুর স্ত্রী কাজী সাদিয়া হাসানকে ১ কোটি ৪০ লাখ, মো. সাইফ উল্লাহকে ৫০ লাখ এবং মো. এ.জি. মাহমুদকে ১৫ লাখ টাকা জরিমানা।২০২১ সালের মে: ইনডেক্স অ্যাগ্রো ইন্ডাস্ট্রিজের শেয়ার নিয়ে কারসাজির জন্য মো. সাইফ উল্লাহকে ৩০ লাখ এবং মো. এ.জি. মাহমুদকে ২৫ লাখ টাকা জরিমানা।

একই বছরের আগস্ট: জনতা ইন্স্যুরেন্সের শেয়ার কারসাজির অভিযোগে মো. সাইফ উল্লাহকে ৪০ লাখ এবং মো. এ.জি. মাহমুদ ও এস. এম. মোতাহারুল জানানকে ২০ লাখ টাকা জরিমানা।

বিএসইসির তদন্তে যা প্রমাণিত হলো:

বিএসইসির তদন্তে দেখা গেছে, ২০২১ সালের ১৯ থেকে ২৯ জুলাইয়ের মধ্যে এই কারসাজি চক্র গ্লোবাল ইন্স্যুরেন্সের শেয়ার ২৩.৯২ শতাংশ, ইসলামী ইন্স্যুরেন্সের শেয়ার ২৫.২৮ শতাংশ, সেন্ট্রাল ইন্স্যুরেন্সের শেয়ার ৩৪.৬৫ শতাংশ, পিপলস ইন্স্যুরেন্সের শেয়ার ৩৭.৩৫ শতাংশ এবং রিপাবলিক ইন্স্যুরেন্সের শেয়ার ১৪.৭৪ শতাংশ কৃত্রিমভাবে বাড়িয়েছে। স্বল্প সময়ের মধ্যে এই অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধি বিনিয়োগকারীদের প্রভাবিত করার একটি অপকৌশল ছিল।

কমিশনের চূড়ান্ত বক্তব্য:

বিএসইসি তাদের সিদ্ধান্তে জানিয়েছে, অভিযুক্তরা আইন ভঙ্গ করে ইচ্ছাকৃতভাবে একটি কৃত্রিম বাজার সৃষ্টি করে সাধারণ বিনিয়োগকারীদের প্রভাবিত করার চেষ্টা করেছেন। তাদের এই কর্মকাণ্ড পুঁজিবাজারের উন্নয়নের পরিপন্থী এবং সাধারণ বিনিয়োগকারীদের ক্ষতির কারণ হয়েছে। উপস্থাপিত ব্যাখ্যা কমিশনের কাছে গ্রহণযোগ্য বিবেচিত হয়নি।

অভিযুক্তদের এই অনৈতিক কর্মকাণ্ড সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ অর্ডিনেন্স, ১৯৬৯ এর সেকশন ১৭(ই) এর সুস্পষ্ট লঙ্ঘন, যা শাস্তিযোগ্য অপরাধ। তাই সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ অর্ডিনেন্স, ১৯৬৯ এর সেকশন ২২ এর ক্ষমতাবলে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে এই জরিমানা আরোপ করা হলো।

আল-মামুন/

পাঠকের মতামত:

আপনার জন্য বাছাই করা কিছু নিউজ