ঢাকা, বুধবার, ২৪ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ৯ আশ্বিন ১৪৩২

MD Zamirul Islam

Senior Reporter

এক শেয়ারের ২৩,০০০% উত্থান-পতন! কারা দায়ী?

শেয়ারনিউজ ডেস্ক . ২৪আপডেটনিউজ
২০২৫ সেপ্টেম্বর ২৪ ১৭:৪০:২৯
এক শেয়ারের ২৩,০০০% উত্থান-পতন! কারা দায়ী?

মাত্র আড়াই বছরের ব্যবধানে শেয়ারবাজারে চাঞ্চল্য সৃষ্টি করা স্বল্প মূলধনী এসএমই কোম্পানি হিমাদ্রী লিমিটেডের শেয়ারের মূল্য এক অবিশ্বাস্য উত্থান-পতনের সাক্ষী হয়েছে। একসময় মাত্র ৩৮ টাকায় কেনাবেচা হওয়া এই শেয়ারটির দাম একটি কারসাজি চক্রের প্রভাবে মাত্র সাত মাসের মধ্যে ২৩ হাজার গুণের বেশি বেড়ে ৮ হাজার ৯৪১ টাকা পর্যন্ত পৌঁছে গিয়েছিল। তবে, সেই 'সোনালী অধ্যায়' দীর্ঘস্থায়ী হয়নি। কারসাজিকারীদের প্রস্থান ঘটার পর রকেটের গতিতে নামতে শুরু করে এই শেয়ারের মূল্য, যা আজ ৯০০ টাকায় এসে ঠেকেছে।

উত্থানের বিস্ময়কর চিত্র:

২০২৩ সালের ২৭ এপ্রিল, যখন হিমাদ্রী লিমিটেডের শেয়ারের মূল্য ছিল ৩৮ টাকা ৮০ পয়সা, তখন সাধারণ বিনিয়োগকারীদের কাছে তা ছিল একটি সাধারণ স্বল্প মূলধনী স্টক। কিন্তু, এক সংঘবদ্ধ কারসাজি চক্রের হাত ধরে সেই চিত্র দ্রুত পাল্টাতে শুরু করে। ওই বছরের ১৬ নভেম্বরের মধ্যে শেয়ারটির মূল্য অবিশ্বাস্যভাবে ৮ হাজার ৯৪১ টাকায় পৌঁছে যায়।

বাজার বিশ্লেষকরা মনে করেন, এসএমই খাতের এই কোম্পানিটির সীমিত সংখ্যক শেয়ারের (মোট ২৬ লাখ ২৫ হাজার) সুযোগ নিয়েই কারসাজিকারীরা এমন অভূতপূর্ব মূল্যবৃদ্ধি ঘটাতে সক্ষম হয়। তারা প্রাথমিকভাবে নিজেদের মধ্যে লেনদেন বাড়িয়ে শেয়ারের চাহিদা ও দাম কৃত্রিমভাবে বৃদ্ধি করে, এবং পরে সাধারণ বিনিয়োগকারীদের কাছে উচ্চমূল্যে বিক্রি করে বিপুল মুনাফা লুটে নেয়।

পতনের রকেট গতি:

তবে, কারসাজি চক্রের প্রস্থান ঘটতেই হিমাদ্রী লিমিটেডের শেয়ারের মূল্য দ্রুত কমতে শুরু করে। আজকের লেনদেন শেষে (২৪ সেপ্টেম্বর, বুধবার) শেয়ারটির ক্লোজিং মূল্য দাঁড়িয়েছে মাত্র ৯০০ টাকা, যা তার সর্বোচ্চ মূল্যের তুলনায় প্রায় ৯০% কম। এই নাটকীয় পতন স্বল্প মূলধনী শেয়ারের অস্থিরতা এবং কারসাজির ঝুঁকি আবারও প্রমাণ করে।

তদন্ত ও দুর্বল শাস্তি:

কোম্পানিটির মোট শেয়ারের ৬৬% উদ্যোক্তা ও পরিচালকদের হাতে, ২% সরকারের কাছে এবং ৩২.৫০% সাধারণ বিনিয়োগকারীদের হাতে রয়েছে। এই সীমিত ফ্লোটিং শেয়ার কারসাজির জন্য একটি আদর্শ পরিস্থিতি তৈরি করেছিল।

২০২৪ সালে বিএসইসি (বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন) ২০২৩ সালের ২৭ এপ্রিল থেকে ১৭ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত হিমাদ্রী লিমিটেডের শেয়ারের কারসাজির বিষয়ে তদন্ত পরিচালনা করে। তদন্তে দেখা যায়, সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানগুলো এই কারসাজি থেকে প্রায় ৮২ কোটি টাকা মুনাফা অর্জন করেছিল। তবে, আশ্চর্যজনকভাবে, তাদের মাত্র ১ কোটি ৭০ লাখ টাকা জরিমানা করা হয়েছিল, যা এই বিপুল মুনাফার তুলনায় অতি নগণ্য বলে সমালোচিত হচ্ছে।

সাম্প্রতিক লেনদেন পরিস্থিতি:

সাম্প্রতিক সময়ে হিমাদ্রী লিমিটেডের শেয়ার লেনদেনে কিছুটা গতি দেখা গেছে। ৩১ জুলাই কোম্পানিটির ৭ হাজার ৭২৯টি শেয়ার হাতবদল হয়, যা গত দুই বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ। এরপর, ২১ সেপ্টেম্বর ৫ হাজার ৮০টি এবং আজ বুধবার ১ হাজার ১৬২টি শেয়ার লেনদেন হয়েছে।

২০২১ সালের ৩০ সেপ্টেম্বর ডিএসইর এসএমই প্ল্যাটফর্মের যাত্রা শুরু হয়েছিল হিমাদ্রী লিমিটেডসহ চারটি পুরোনো এবং দুটি নতুন কোম্পানি নিয়ে। চার বছর পেরিয়ে গেলেও এই প্ল্যাটফর্মে সাধারণ বিনিয়োগকারীদের অংশগ্রহণ এখনও উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি পায়নি, যা এর কার্যকারিতা এবং আস্থা অর্জনে চ্যালেঞ্জের ইঙ্গিত দেয়। হিমাদ্রী লিমিটেডের ঘটনা এসএমই খাতের শেয়ারে বিনিয়োগের ঝুঁকি এবং নিয়ন্ত্রক সংস্থার আরও কঠোর পদক্ষেপের প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরেছে।

আব্দুর রহিম/

পাঠকের মতামত:

আপনার জন্য বাছাই করা কিছু নিউজ