ঢাকা, সোমবার, ২৯ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ১৪ আশ্বিন ১৪৩২

MD. Razib Ali

Senior Reporter

বাংলাদেশ ব্যাংকের যুগান্তকারী পদক্ষেপ: শরিয়াহ কমিটিতে আলেমদের ‘তিন ব্যাংক সীমা’

শেয়ারনিউজ ডেস্ক . ২৪আপডেটনিউজ
২০২৫ সেপ্টেম্বর ২৯ ১০:২০:১৪
বাংলাদেশ ব্যাংকের যুগান্তকারী পদক্ষেপ: শরিয়াহ কমিটিতে আলেমদের ‘তিন ব্যাংক সীমা’

দেশের ইসলামী ব্যাংকিং খাতে সুশাসন ও স্বচ্ছতা নিশ্চিত করতে কঠোর পদক্ষেপ নিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এখন থেকে কোনো ইসলামী চিন্তাবিদ বা আলেম একই সময়ে তিনটির বেশি ব্যাংকের শরিয়াহ সুপারভাইজরি কমিটির সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করতে পারবেন না। রোববার (২৮ সেপ্টেম্বর) কেন্দ্রীয় ব্যাংক এক সার্কুলারের মাধ্যমে এই নতুন নিয়ম জারি করেছে, যা দেশের আর্থিক খাতের প্রায় এক-চতুর্থাংশ নিয়ন্ত্রণকারী ইসলামী ব্যাংকিংয়ের কার্যক্রমে উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন আনবে বলে আশা করা হচ্ছে।

নতুন নীতিমালা ও যোগ্যতার মানদণ্ড

বাংলাদেশ ব্যাংকের সার্কুলার অনুযায়ী, শরিয়াহ কমিটির সদস্যদের ইসলামী শিক্ষা বা স্টাডিজে কমপক্ষে স্নাতক ডিগ্রি থাকা বাধ্যতামূলক। কমিটির প্রতিটি সদস্য মাসিক ২৫,০০০ টাকা সম্মানী এবং প্রতিটি বৈঠকে উপস্থিতির জন্য সর্বোচ্চ ৮,০০০ টাকা ফি পাবেন। কমিটিগুলো হয় তিনজন অথবা পাঁচজন সদস্য নিয়ে গঠিত হবে, যাদের মধ্যে একজনকে অবশ্যই চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করতে হবে।

মেয়াদকাল ও পুনর্নিয়োগের নিয়মাবলী

সদস্যদের নিয়োগের মেয়াদ সর্বোচ্চ তিন বছর হবে এবং এটি বাংলাদেশ ব্যাংকের পূর্বানুমোদন সাপেক্ষে কার্যকর হবে। কাজের মূল্যায়নের পর তাদের পুনরায় নিয়োগ করা যেতে পারে, তবে একই ব্যাংকে টানা ছয় বছরের বেশি কেউ দায়িত্ব পালন করতে পারবেন না। ছয় বছর পূর্ণ হলে তাকে বাধ্যতামূলকভাবে দুই বছরের বিরতি নিতে হবে।

কেন এই কঠোর পদক্ষেপ? তদারকির দুর্বলতা বনাম সুশাসন

বর্তমানে বাংলাদেশে ১০টি পূর্ণাঙ্গ ইসলামী ব্যাংক এবং ১৭টি প্রচলিত ব্যাংক তাদের ইসলামী ব্যাংকিং উইন্ডো বা শাখার মাধ্যমে কার্যক্রম পরিচালনা করছে। এই সকল প্রতিষ্ঠানকে ইসলামী নীতি ও বিধান পরিপালন নিশ্চিত করার জন্য শরিয়াহ সুপারভাইজরি কমিটি গঠন ও পরিচালনা করতে হয়।

বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, কিছু ইসলামী চিন্তাবিদের অতিরিক্ত সম্পৃক্ততা এবং দুর্বল তদারকির বিষয়ে গুরুতর উদ্বেগের কারণে এই নতুন নিয়মগুলো প্রণীত হয়েছে। এমনও দেখা গেছে, একজন আলেম বা চিন্তাবিদ একই সাথে ১৭টি পর্যন্ত কমিটির সদস্য হিসেবে কাজ করছেন। নিয়ন্ত্রক সংস্থা মনে করে, এমন অভ্যাস তদারকির মানকে মারাত্মকভাবে দুর্বল করে দেয়, কারণ অনেক সদস্যই ভালো নির্দেশনা দেওয়ার পরিবর্তে মূলত ফি সংগ্রহের উদ্দেশ্যেই বৈঠকে অংশ নিতেন।

আস্থা ও জবাবদিহিতা বৃদ্ধিতে নতুন বিধিনিষেধ

বাংলাদেশ ব্যাংক আশা করছে, এই নতুন বিধিনিষেধগুলো শরিয়াহ কমিটির কার্যক্রমে স্বাধীনতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে সাহায্য করবে। এর ফলে ইসলামী ব্যাংকিংয়ের প্রতি সাধারণ মানুষের আস্থা ফিরিয়ে আনা সম্ভব হবে, যা দেশের আর্থিক খাতে মোট আমানতের এক-চতুর্থাংশের বেশি অংশ নিয়ন্ত্রণ করে। এই সংস্কারমূলক পদক্ষেপ ইসলামী ব্যাংকিং খাতের দীর্ঘমেয়াদী স্থায়িত্ব এবং স্বচ্ছতা বৃদ্ধিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে বলে বিশ্লেষকরা মনে করছেন।

আব্দুর রহিম/

পাঠকের মতামত:

আপনার জন্য বাছাই করা কিছু নিউজ