ঢাকা, বুধবার, ১ অক্টোবর ২০২৫, ১৬ আশ্বিন ১৪৩২

Alamin Islam

Senior Reporter

শেয়ারবাজারে মুখ ফেরাচ্ছে শক্তিশালী কোম্পানি: আস্থার সংকটে বাজার

শেয়ারনিউজ ডেস্ক . ২৪আপডেটনিউজ
২০২৫ অক্টোবর ০১ ১৭:১৮:১৬
শেয়ারবাজারে মুখ ফেরাচ্ছে শক্তিশালী কোম্পানি: আস্থার সংকটে বাজার

বাংলাদেশের পুঁজিবাজার বর্তমানে এক গভীর আস্থাহীনতার সংকটে ভুগছে, যার ফলস্বরূপ শক্তিশালী মৌলভিত্তির কোম্পানিগুলো বাজারে আসতে চাইছে না। মঙ্গলবার পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউট অফ বাংলাদেশ (পিআরআই) এবং অস্ট্রেলিয়ার পররাষ্ট্র ও বাণিজ্য বিভাগ (ডিএফএটি) যৌথভাবে আয়োজিত মাসিক ম্যাক্রোইকোনমিক ইনসাইটস (এমএমআই) সেমিনারে এই উদ্বেগজনক চিত্র তুলে ধরেন ডিসিসিআই’র প্রাক্তন সভাপতি রিজওয়ান-উর-রহমান।

তিনি স্পষ্ট ভাষায় বলেন, "আইন প্রয়োগ বা বিনিয়োগকারীদের আস্থা তৈরিতে পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থার অতীত ও বর্তমান উভয় কমিশনই কার্যকর ভূমিকা রাখতে ব্যর্থ হয়েছে।" এই মন্তব্য দেশের পুঁজিবাজারের নিয়ন্ত্রক কাঠামোর দুর্বলতাকে সরাসরি প্রশ্নবিদ্ধ করেছে।

পুঁজিবাজারের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন, সমাধান 'বিশ্বস্ত নেতৃত্ব ও সুশাসন'

বনানীতে পিআরআইয়ের অফিস সম্মেলন কক্ষে অনুষ্ঠিত এই সেমিনারে সভাপতিত্ব করেন পিআরআইর নির্বাহী পরিচালক ড. খুরশিদ আলম। প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. মোহাম্মদ ফরাসউদ্দিন।

আলোচনায় রিজওয়ান-উর-রহমান আরও যোগ করেন যে, বাংলাদেশই একমাত্র দেশ যেখানে মূলধন সংগ্রহে পুঁজিবাজারের কার্যত কোনো ভূমিকাই নেই। বিনিয়োগকারীদের হারানো আস্থা ফিরিয়ে আনতে তিনি 'বিশ্বস্ত নেতৃত্ব ও সুশাসন' প্রতিষ্ঠার ওপর জোর দেন।

১৯৯২ সালের 'আত্মঘাতী' সিদ্ধান্ত: দীর্ঘমেয়াদী ঋণে ব্যাংক নির্ভরতা

সেমিনারে বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. মোহাম্মদ ফরাসউদ্দিন পুঁজিবাজারের বর্তমান দুর্দশার জন্য ১৯৯২ সালের একটি নীতিগত সিদ্ধান্তকে দায়ী করেন। তিনি বলেন, ওইসময় তফসিলি ব্যাংকগুলিকে দীর্ঘমেয়াদি ঋণ প্রদানের অনুমতি দেওয়া হয়েছিল। এই পদক্ষেপকে তিনি 'আত্মঘাতী' আখ্যা দেন, যা পুঁজিবাজারের স্বাভাবিক প্রবৃদ্ধিকে মারাত্মকভাবে বাধাগ্রস্ত করেছে।ড. ফরাসউদ্দিন সতর্ক করেন যে, ব্যাংক নির্ভরতা হ্রাস না হওয়া পর্যন্ত দেশের সামগ্রিক উন্নয়ন অধরাই থেকে যাবে।

তথ্য-উপাত্তে বাজারের করুণ চিত্র: জিডিপির তুলনায় বাজার মূলধন তলানিতে

বাংলাদেশ মার্চেন্ট ব্যাংকার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিএমবিএ) তথ্যমতে, দেশের পুঁজিবাজার থেকে ব্যবসায়িক মূলধন সংগ্রহের হার বার্ষিক চাহিদার ১ শতাংশেরও কম। গত ১৬ বছরে, প্রায় ১৫০টি প্রাথমিক গণপ্রস্তাবের (আইপিও) মাধ্যমে কোম্পানিগুলো মাত্র ১১ হাজার ৬১৪ কোটি টাকা সংগ্রহ করতে পেরেছে। বিপরীতে, দেশের প্রথম সারির যেকোনো একটি তফসিলি ব্যাংক থেকেই প্রতিবছর ১০ হাজার কোটি টাকার বেশি ঋণ নেওয়া হচ্ছে, যা পুঁজিবাজারের অপ্রাসঙ্গিকতাকে প্রকট করে তোলে।

দেশের পুঁজিবাজারের বাজার মূলধনও জিডিপির অনুপাতে ক্রমাগত হ্রাস পাচ্ছে। বর্তমানে এটি জিডিপির মাত্র ৭.২ শতাংশ, যা ২০১০ সালেও ৪০ শতাংশ ছিল। অর্থনৈতিকভাবে বিপর্যস্ত শ্রীলঙ্কাতেও জিডিপির অনুপাতে বাজার মূলধন ২২ শতাংশ ছাড়িয়েছে। আমাদের পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতে জিডিপির আকার ছাড়িয়ে গেছে বাজার মূলধন, এবং সেখানে পুঁজিবাজারকে কেন্দ্র করে কোটিপতির সংখ্যা দ্রুত বাড়ছে। এই বৈশ্বিক ও আঞ্চলিক প্রেক্ষাপটে বাংলাদেশের পুঁজিবাজারের দুর্বলতা অত্যন্ত স্পষ্ট এবং উদ্বেগজনক।

আব্দুর রহিম/

পাঠকের মতামত:

আপনার জন্য বাছাই করা কিছু নিউজ

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ