ঢাকা, বুধবার, ৮ অক্টোবর ২০২৫, ২৩ আশ্বিন ১৪৩২

Alamin Islam

Senior Reporter

কত বছর খাজনা না দিলে জমি বাজেয়াপ্ত, আসছে নতুন ভূমি আইন

জাতীয় ডেস্ক . ২৪আপডেটনিউজ
২০২৫ অক্টোবর ০৮ ১০:১২:৪৯
কত বছর খাজনা না দিলে জমি বাজেয়াপ্ত, আসছে নতুন ভূমি আইন

জমির মালিকদের জন্য এক যুগান্তকারী পরিবর্তন নিয়ে আসছে সরকার। প্রস্তাবিত ‘ভূমি মালিকানা ও ব্যবহার আইন, ২০২৩’-এর খসড়ায় এমন কিছু কঠোর বিধান রাখা হয়েছে, যা দেশের ভূমি ব্যবস্থাপনাকে সম্পূর্ণ বদলে দেবে। এর মধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো, টানা তিন বছর ভূমি উন্নয়ন কর (খাজনা) পরিশোধ না করলে জমি বাজেয়াপ্ত করে খাস খতিয়ানে নেওয়ার বিধান। ভূমি মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, নতুন এই আইন কার্যকর হলে ডিজিটাল ভূমি ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে স্বচ্ছতা নিশ্চিত হবে এবং জমি-সংক্রান্ত জালিয়াতি ও দখলবাজি বহুলাংশে কমে আসবে।

‘ভূমি মালিকানা সনদ (CLO)’ – জমির মালিকানার চূড়ান্ত দলিল:

ভূমি মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, প্রতিটি জমির মালিককে সরকার একটি ‘ভূমি মালিকানা সনদ (Certificate of Land Ownership–CLO)’ দেবে। এটি একটি স্মার্ট কার্ড, যেখানে কিউআর কোড ও একটি ইউনিক নম্বর থাকবে। ভবিষ্যতে এই কার্ডই জমির চূড়ান্ত মালিকানা প্রমাণের একমাত্র দলিল হিসেবে বিবেচিত হবে। এই কার্ডের মাধ্যমেই জমির মালিকরা খাজনা পরিশোধ করতে পারবেন এবং জমি-সংক্রান্ত যাবতীয় তথ্য যাচাই করতে পারবেন।

ভূমি মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব (আইন) মো. খলিলুর রহমান বলেন, “নতুন আইনের অধীনে ভূমি মালিকানা নির্ধারণে ‘ভূমির মালিকানা সনদ’ই হবে চূড়ান্ত দলিল। এটি ডিজিটাল উপায়ে তথ্য যাচাই ও ভূমি ব্যবস্থাপনায় স্বচ্ছতা আনবে।”

প্রস্তাবিত আইনের মূল বিধানসমূহ:

১. খাজনা পরিশোধে কঠোরতা: টানা তিন বছর ভূমি উন্নয়ন কর (খাজনা) পরিশোধ না করলে সংশ্লিষ্ট জমি বাজেয়াপ্ত করে সরকারের খাস খতিয়ানে নেওয়া হবে।

২. জমি জালিয়াতি ও দখলের বিরুদ্ধে কঠোর শাস্তি: জাল-জালিয়াতির মাধ্যমে অন্যের জমি দখল করলে অভিযুক্তকে দুই বছর কারাদণ্ড বা পাঁচ লাখ টাকা জরিমানা অথবা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত করা হবে।

৩. নামজারি ও CLO হালনাগাদ বাধ্যতামূলক: জমি হস্তান্তরের পর নামজারি (মিউটেশন) এবং ‘ভূমি মালিকানা সনদ (CLO)’ হালনাগাদ করা বাধ্যতামূলক করা হয়েছে।

কৃষিজমি রক্ষায় বিশেষ গুরুত্ব:

কৃষিজমি রক্ষায় এই আইনে কঠোর বিধান আনা হয়েছে। সরকারের উন্নয়নমূলক কাজের জন্য কৃষিজমি অধিগ্রহণের প্রয়োজন হলে অপেক্ষাকৃত অনুর্বর জমি বেছে নিতে হবে। দুই বা তিন ফসলি জমি অধিগ্রহণের ক্ষেত্রে ভূমি মন্ত্রণালয়ের পূর্বানুমতি বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। এটি দেশের খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণে একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ।

ডিজিটাল ভূমি মানচিত্র ও জমির শ্রেণি পরিবর্তন:

নতুন আইনের খসড়ায় বলা হয়েছে, স্যাটেলাইট ইমেজের মাধ্যমে সরকার একটি ডিজিটাল ভূমি মানচিত্র তৈরি করবে। এই মানচিত্রের সাহায্যে জমির ব্যবহারভিত্তিক শ্রেণিবিন্যাস নির্ধারণ করা হবে। সরকারের অনুমতি ছাড়া কোনো জমির শ্রেণি পরিবর্তন করা যাবে না। এই বিধানের ব্যত্যয় ঘটলে এক বছর কারাদণ্ড বা ৫০ হাজার টাকা জরিমানা হতে পারে।

চলাচলের পথ বন্ধ করার বিরুদ্ধে কঠোর বিধান:

কোনো ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান যদি জনসাধারণের চলাচলের পথ বন্ধ করে দেয়, তবে সেটিও এই আইনে অপরাধ হিসেবে গণ্য হবে। এর জন্য এক বছর কারাদণ্ড বা ৫০ হাজার টাকা জরিমানা নির্ধারণ করা হয়েছে।

কার্যকরীকরণ ও প্রত্যাশা:

ভূমি মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, খসড়াটি ইতিমধ্যেই চূড়ান্ত করা হয়েছে এবং খুব শিগগিরই মন্ত্রিসভায় অনুমোদনের জন্য উপস্থাপন করা হবে। তবে এই আইন তিন পার্বত্য জেলায় (রাঙ্গামাটি, খাগড়াছড়ি ও বান্দরবান) প্রযোজ্য হবে না। সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন, এই নতুন আইন কার্যকর হলে দেশের ভূমি ব্যবস্থাপনায় একটি ডিজিটাল রূপান্তর আসবে, স্বচ্ছতা বৃদ্ধি পাবে এবং জমি-সংক্রান্ত জালিয়াতি ও দখলবাজির অবসান ঘটবে। এটি ভূমি মালিকদের অধিকার সুরক্ষায় এক নতুন দিগন্ত উন্মোচন করবে বলে আশা করা হচ্ছে।

FAQ:

প্রশ্ন ১: টানা কত বছর খাজনা না দিলে জমি বাজেয়াপ্ত হবে?

উত্তর: প্রস্তাবিত নতুন আইন অনুযায়ী, টানা তিন বছর ভূমি উন্নয়ন কর (খাজনা) পরিশোধ না করলে জমি বাজেয়াপ্ত করে খাস খতিয়ানে নেওয়া হবে।

প্রশ্ন ২: ‘ভূমি মালিকানা সনদ (CLO)’ কী এবং এর গুরুত্ব কী?

উত্তর: ‘ভূমি মালিকানা সনদ (Certificate of Land Ownership–CLO)’ হলো একটি স্মার্ট কার্ড, যেখানে কিউআর কোড ও ইউনিক নম্বর থাকবে। এটি ভবিষ্যতে জমির চূড়ান্ত মালিকানা প্রমাণের একমাত্র দলিল হিসেবে বিবেচিত হবে এবং এর মাধ্যমে খাজনা পরিশোধ ও জমি-সংক্রান্ত সব তথ্য যাচাই করা যাবে।

প্রশ্ন ৩: নতুন ভূমি আইনে জমি জালিয়াতির শাস্তি কী?

উত্তর: জাল-জালিয়াতির মাধ্যমে অন্যের জমি দখল করলে দুই বছর কারাদণ্ড বা পাঁচ লাখ টাকা জরিমানা অথবা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত করা হবে।

প্রশ্ন ৪: কৃষিজমি অধিগ্রহণের ক্ষেত্রে নতুন আইনে কী বিধান রাখা হয়েছে?

উত্তর: সরকারের উন্নয়নকাজে কৃষিজমি অধিগ্রহণের প্রয়োজন হলে অপেক্ষাকৃত অনুর্বর জমি বেছে নিতে হবে। দুই বা তিন ফসলি জমি অধিগ্রহণের আগে ভূমি মন্ত্রণালয়ের অনুমতি বাধ্যতামূলক।

প্রশ্ন ৫: এই নতুন আইনটি কি দেশের সব জেলায় প্রযোজ্য হবে?

উত্তর: না, এই আইন তিন পার্বত্য জেলায় (রাঙ্গামাটি, খাগড়াছড়ি ও বান্দরবান) প্রযোজ্য হবে না।

তানভির ইসলাম/

পাঠকের মতামত:

আপনার জন্য বাছাই করা কিছু নিউজ