ঢাকা, বুধবার, ৮ অক্টোবর ২০২৫, ২৩ আশ্বিন ১৪৩২

MD. Razib Ali

Senior Reporter

ভূমি মন্ত্রণালয়ের ঘোষণা: দলিল থাকলেও ছাড়তে হবে ৫ ধরনের জমির দখল

জাতীয় ডেস্ক . ২৪আপডেটনিউজ
২০২৫ অক্টোবর ০৮ ১০:৪৫:৫১
ভূমি মন্ত্রণালয়ের ঘোষণা: দলিল থাকলেও ছাড়তে হবে ৫ ধরনের জমির দখল

দেশের ভূমি ব্যবস্থাপনায় এক বিশাল পরিবর্তনের ইঙ্গিত দিয়ে ভূমি মন্ত্রণালয় সম্প্রতি একটি গুরুত্বপূর্ণ নির্দেশনা জারি করেছে। ২০২৫ সালের মধ্যে পাঁচ ধরনের জমির দখল ছাড়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে, এমনকি যদি সেগুলোর বৈধ দলিলও থাকে। একাধিক সরকারি পরিপত্র ও প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমে এই বিষয়টি স্পষ্ট করা হয়েছে, যেখানে বলা হয়েছে, এসব জমি অবৈধভাবে দখলে থাকলে তা অবিলম্বে ছেড়ে দিতে হবে, অন্যথায় কঠোর আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

সরকারের নতুন এই নীতি "দলিল যার, ভূমি তার"—এই প্রচলিত ধারণাকে চ্যালেঞ্জ করছে। মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, অনেক দলিল বৈধ হলেও, মালিকানা ও দখলের আইনগত ভিত্তি সব ক্ষেত্রে সঠিকভাবে প্রতিষ্ঠিত নয়।

যে ৫ ধরনের জমির দখল ছাড়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে, তার একটি বিস্তারিত তালিকা নিচে দেওয়া হলো:

১. ত্রুটিপূর্ণ সাব-কবলা দলিল: যেসব সাব-কবলা দলিল উত্তরাধিকার বণ্টন প্রক্রিয়া সম্পূর্ণ না করে এবং কোনো ওয়ারিশকে বঞ্চিত করে তৈরি করা হয়েছে, সেগুলো বাতিলযোগ্য বলে গণ্য হবে। এক্ষেত্রে বঞ্চিত উত্তরাধিকারী আইনি পদক্ষেপ নিলে দখলদারের দলিল বাতিল হতে পারে।

২. অনিয়মিত হেবা দলিল: দাতার পূর্ণ মালিকানা না থাকা, সঠিক পদ্ধতি অনুসরণ না করা অথবা শর্ত ভঙ্গ করে তৈরি করা হেবা দলিলও বাতিলের আওতায় আসবে।

৩. জাল ও ভুয়া দলিল: ডিজিটাল ভূমি ব্যবস্থাপনার অগ্রগতির ফলে এখন জাল দলিল সহজেই শনাক্ত করা যাচ্ছে। সাব-রেজিস্ট্রি অফিসে দুর্নীতির মাধ্যমে তৈরি করা দলিলও যদি প্রকৃত মালিক প্রমাণ করতে পারেন, তাহলে তা বাতিল করা হবে।

৪. খাস খতিয়ানের বেদখল সম্পত্তি: সরকারি খাস খতিয়ানের অন্তর্ভুক্ত জমি যদি কেউ নিজের নামে করে অবৈধভাবে বিক্রি করে থাকেন, সেই দলিল বাতিল হবে। জেলা প্রশাসকদের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে এসব জমি সরকারের নিয়ন্ত্রণে ফিরিয়ে আনতে আইনি লড়াই পরিচালনার জন্য।

৫. অবৈধভাবে অর্পিত সম্পত্তি: যুদ্ধ-পরবর্তী সময়ে সরকারের নিয়ন্ত্রণে থাকা পরিত্যক্ত অর্পিত সম্পত্তি ব্যক্তিগতভাবে দখলে রাখা যাবে না। সহকারী কমিশনার (ভূমি) বা এসিল্যান্ডদের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে এসব জমি চিহ্নিত করে সরকারের কাছে বুঝিয়ে দেওয়ার জন্য।

আইনি প্রেক্ষাপট ও ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা

ভূমি মন্ত্রণালয়ের পরিপত্রে পরিষ্কারভাবে জানানো হয়েছে, এসব জমির দখল আদালতের রায় ছাড়া কোনোভাবেই টিকিয়ে রাখা যাবে না। তাই যাঁরা দীর্ঘদিন ধরে এই ধরনের জমি ব্যবহার করছেন, তাঁদের দ্রুত আইনি প্রস্তুতি নেওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।

সরকারের এই উদ্যোগের প্রধান লক্ষ্য হলো—সরকারি সম্পত্তির পুনরুদ্ধার, জনগণের ন্যায্য অধিকার নিশ্চিত করা এবং দেশের রাজস্ব আয় বৃদ্ধি করা। ভূমি মন্ত্রণালয়ের একজন উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা জানিয়েছেন, "ভূমি ব্যবস্থাপনায় পূর্ণ স্বচ্ছতা আনতে এখন থেকে অবৈধ দখলকে কোনোভাবেই সহ্য করা হবে না।"

এই কঠোর পদক্ষেপ ভূমি সেক্টরে একটি নতুন যুগের সূচনা করবে এবং দীর্ঘদিনের জমে থাকা জটিলতা নিরসনে সহায়ক হবে বলে আশা করা হচ্ছে।

FAQ:

প্রশ্ন ১: কোন ধরনের জমির দলিল থাকলেও দখল ছাড়তে হবে?

উত্তর: উত্তরাধিকার বঞ্চিত সাব-কবলা, ত্রুটিপূর্ণ হেবা, জাল দলিল, খাস খতিয়ান ও অর্পিত সম্পত্তি।

প্রশ্ন ২: এই নির্দেশনার মূল উদ্দেশ্য কী?

উত্তর: সরকারি সম্পত্তি পুনরুদ্ধার, জনগণের ন্যায্য অধিকার নিশ্চিত করা এবং রাজস্ব আয় বৃদ্ধি করা।

প্রশ্ন ৩: "দলিল যার, ভূমি তার" ধারণাটি কেন সবক্ষেত্রে প্রযোজ্য নয়?

উত্তর: অনেক দলিল বৈধ হলেও মালিকানা ও দখলের আইনগত ভিত্তি সঠিকভাবে প্রতিষ্ঠিত না হওয়ায় এই ধারণা সবক্ষেত্রে প্রযোজ্য নয়।

প্রশ্ন ৪: দখল না ছাড়লে কী ধরনের ব্যবস্থা নেওয়া হবে?

উত্তর: অবৈধ দখলদারদের বিরুদ্ধে কঠোর আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

প্রশ্ন ৫: ডিজিটাল ভূমি ব্যবস্থাপনার ভূমিকা কী?

উত্তর: ডিজিটাল ভূমি ব্যবস্থাপনার ফলে জাল দলিল শনাক্ত করা সহজ হয়েছে এবং ভূমি প্রশাসনে স্বচ্ছতা বেড়েছে।

আল-মামুন/

পাঠকের মতামত:

আপনার জন্য বাছাই করা কিছু নিউজ