ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ৯ অক্টোবর ২০২৫, ২৪ আশ্বিন ১৪৩২

Alamin Islam

Senior Reporter

দুর্বল ৫ ইসলামী ব্যাংক একীভূত নিয়ে আসলো নতুন সিদ্ধান্ত

শেয়ারনিউজ ডেস্ক . ২৪আপডেটনিউজ
২০২৫ অক্টোবর ০৯ ১৮:২৮:৩৫
দুর্বল ৫ ইসলামী ব্যাংক একীভূত নিয়ে আসলো নতুন সিদ্ধান্ত

আর্থিক খাতের স্থিতিশীলতায় যুগান্তকারী পদক্ষেপ: প্রধান উপদেষ্টার বৈঠকে অনুমোদন

ঢাকা, ৯ অক্টোবর: দেশের অর্থনীতিতে এক নতুন দিগন্ত উন্মোচিত হতে যাচ্ছে! আর্থিক খাতে স্থিতিশীলতা ফিরিয়ে আনতে এবং শরিয়াহভিত্তিক ব্যাংকিং ব্যবস্থাকে আরও শক্তিশালী করতে এক ঐতিহাসিক সিদ্ধান্ত নিয়েছে উপদেষ্টা পরিষদ। বৃহস্পতিবার (৯ অক্টোবর) অনুষ্ঠিত এক গুরুত্বপূর্ণ বৈঠকে পাঁচটি দুর্বল ইসলামী ব্যাংককে একীভূত করে একটি নতুন, সুসংহত শরিয়াহভিত্তিক ব্যাংক গঠনের প্রস্তাব নীতিগত অনুমোদন পেয়েছে। প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সভাপতিত্বে রাজধানীর তেজগাঁওস্থ প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ে এই যুগান্তকারী সিদ্ধান্তটি গৃহীত হয়।

কোন ব্যাংকগুলো একীভূত হচ্ছে?

এই বৃহৎ একীভূতকরণ প্রক্রিয়ার আওতায় আসছে দেশের ৫টি সুপরিচিত ইসলামী ব্যাংক:

সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংক

গ্লোবাল ইসলামী ব্যাংক

ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংক

ইউনিয়ন ব্যাংক

এক্সিম ব্যাংক

নতুন ব্যাংকের মালিকানা ও বিশাল মূলধন পরিকল্পনা

বৈঠক সূত্রে জানা গেছে, নবগঠিত ব্যাংকটি প্রাথমিকভাবে রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন থাকবে এবং এর তত্ত্বাবধানে থাকবে অর্থ মন্ত্রণালয়ের অর্থ বিভাগ। তবে আশার কথা হলো, পাঁচ বছরের মধ্যে ব্যাংকটিকে বেসরকারি খাতে হস্তান্তরের পরিকল্পনা রয়েছে, যা দেশের বেসরকারি খাতকে আরও শক্তিশালী করবে।

কেন্দ্রীয় ব্যাংক খুব শিগগিরই এই নতুন মেগা-ব্যাংকের জন্য লাইসেন্স ইস্যু করবে। এর অনুমোদিত মূলধন ধার্য করা হয়েছে ৪০ হাজার কোটি টাকা এবং পরিশোধিত মূলধন হবে ৩৫ হাজার কোটি টাকা। এই বিশাল মূলধনের একটি উল্লেখযোগ্য অংশ, প্রায় ১৫ হাজার কোটি টাকা, 'বেইল ইন' প্রক্রিয়ার মাধ্যমে বিদ্যমান প্রাতিষ্ঠানিক আমানতকারীদের কাছ থেকে মূলধনে রূপান্তরিত হতে পারে। বাকি ২০ হাজার কোটি টাকা সরকার নিজেই মূলধন হিসেবে প্রদান করবে।

আমানতকারী ও ঋণগ্রহীতাদের ভবিষ্যৎ কী?

বাংলাদেশ ব্যাংক সূত্রের খবর অনুযায়ী, একীভূত হতে যাওয়া পাঁচ ব্যাংকের সম্মিলিত আমানতের পরিমাণ প্রায় ১ কোটি ৫২ লাখ টাকা, যার মধ্যে ব্যক্তি শ্রেণির আমানত প্রায় ৪৬ হাজার কোটি টাকা। এই বিশাল সংখ্যক আমানতকারীর সুরক্ষায় একটি বিশেষ পেমেন্ট স্কিম প্রণয়নের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এই স্কিমের আওতায়, ব্যক্তি শ্রেণির আমানতকারীদের অর্থ ফেরত প্রদানে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দেওয়া হবে।

অন্যদিকে, প্রাতিষ্ঠানিক আমানতকারীদের জন্য নগদ অর্থের পরিবর্তে নবগঠিত ব্যাংকের শেয়ারের মালিকানার প্রস্তাব দেওয়া হতে পারে। তবে এই প্রক্রিয়ার আগে ব্যাংকগুলোকে পুঁজিবাজার থেকে তালিকাভুক্তির (ডিলিস্টেড) বাইরে আনা হবে। ঋণগ্রহীতাদের ক্ষেত্রে কোনো পরিবর্তন আসবে না; তাদের ঋণের কিস্তি নিয়ম মতো পরিশোধ করতে হবে এবং খেলাপি ঋণের ক্ষেত্রে বিদ্যমান নিয়মেই ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

বিশেষজ্ঞদের মত ও ভবিষ্যৎ প্রভাব

প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম জানিয়েছেন, এই উদ্যোগের ফলে দেশের ইসলামী ব্যাংকিং খাত আরও সুসংহত হবে এবং দুর্বল ব্যাংকগুলোর ঝুঁকি কমবে। একীভূতকরণ কার্যক্রম বাস্তবায়নে ইতিমধ্যে বাংলাদেশ ব্যাংকের ডেপুটি গভর্নর মো. কবির আহাম্মদকে আহ্বায়ক করে ৮ সদস্যের একটি ওয়ার্কিং কমিটি গঠন করা হয়েছে। এই কমিটি বাংলাদেশ ব্যাংক, অর্থ বিভাগ এবং আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের প্রতিনিধিদের সমন্বয়ে গঠিত।

এই সাহসী পদক্ষেপ দেশের সামগ্রিক আর্থিক ব্যবস্থায় ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে এবং একটি স্থিতিশীল ও শক্তিশালী ব্যাংকিং খাত গঠনে সহায়ক হবে বলে মনে করছেন অর্থনৈতিক বিশ্লেষকরা।

আল-মামুন/

পাঠকের মতামত:

আপনার জন্য বাছাই করা কিছু নিউজ

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ