ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ৯ অক্টোবর ২০২৫, ২৩ আশ্বিন ১৪৩২

MD Zamirul Islam

Senior Reporter

পাঁচ ব্যাংকের ভাগ্য নির্ধারণ: বৈঠকে বসছে উপদেষ্টা পরিষদ

শেয়ারনিউজ ডেস্ক . ২৪আপডেটনিউজ
২০২৫ অক্টোবর ০৮ ২৩:৩৯:৩৩
পাঁচ ব্যাংকের ভাগ্য নির্ধারণ: বৈঠকে বসছে উপদেষ্টা পরিষদ

দেশের দুর্বল ইসলামী ধারার পাঁচটি ব্যাংককে একীভূত করে একটি নতুন শরিয়াহভিত্তিক ব্যাংক গঠনের প্রক্রিয়া চূড়ান্তের পথে। আগামীকাল বৃহস্পতিবার সরকারের উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকে এই প্রস্তাবটি চূড়ান্ত অনুমোদনের জন্য উত্থাপন করা হবে। অনুমোদন পেলে দ্রুতই প্রজ্ঞাপন জারি করা হবে এবং নতুন এই ব্যাংকটি শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত হবে।

তবে এই একীভূতকরণ প্রক্রিয়ায় বিদ্যমান ব্যাংকগুলোর সাধারণ বিনিয়োগকারীদের অংশীদারিত্ব নিয়ে গভীর শঙ্কা তৈরি হয়েছে। এই পরিস্থিতিতে বিনিয়োগকারীদের স্বার্থ সংরক্ষণের বিষয়ে শেয়ারবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি) বাংলাদেশ ব্যাংককে আনুষ্ঠানিক চিঠি দিয়েছে।

বিনিয়োগকারীদের অধিকার নিয়ে বিতর্ক

বাংলাদেশ ব্যাংকের একজন কর্মকর্তা জানিয়েছেন, 'ব্যাংক রেজুলেশন অধ্যাদেশ ২০২৫' অনুযায়ী, কোনো ব্যাংক অবসায়ন বা একীভূত হলে সাধারণ শেয়ারহোল্ডাররা ক্ষতিপূরণের আওতায় আসেন না। তিনি বলেন, "নতুন ব্যাংক শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত হবে, কিন্তু পুরোনো ব্যাংকগুলোর শেয়ারহোল্ডারদের কোনো শেয়ার থাকবে না।নতুন ব্যাংকের শেয়ার সম্পূর্ণ নতুনভাবে ইস্যু করা হবে।"

অন্যদিকে, বিএসইসির একজন অতিরিক্ত পরিচালক এই সিদ্ধান্তের তীব্র বিরোধিতা করেছেন। তিনি বলেন, "যদি কোনো সাধারণ বিনিয়োগকারীর শেয়ার বাতিল বা বাজেয়াপ্ত করা হয়, তাহলে তাকে অবশ্যই কিছু ক্ষতিপূরণ বা বিকল্প অংশ দিতে হবে।

তা না হলে এটি মৌলিক অধিকার লঙ্ঘনের শামিল।" তিনি আরও যোগ করেন, "যেসব পরিচালক বা উদ্যোক্তা ব্যাংকের অর্থ লোপাট করেছে, তাদের সম্পদ বাজেয়াপ্ত করা যেতে পারে, কিন্তু সাধারণ বিনিয়োগকারী তো কোনো অপরাধ করেননি। তাদের শেয়ার কেন বাতিল হবে?" এই কর্মকর্তা জানান, বিনিয়োগকারীদের অধিকার নিশ্চিত করতে বিএসইসি বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর বরাবর চিঠি দিয়ে একজন সাধারণ শেয়ারহোল্ডারের আইনি অধিকার রক্ষার বিষয়টি নিশ্চিত করতে বলেছে।

একীভূত হতে যাওয়া ব্যাংকগুলো এবং তাদের আপত্তি

একীভূত হতে যাওয়া পাঁচটি ব্যাংক হলো— ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংক, গ্লোবাল ইসলামী ব্যাংক, ইউনিয়ন ব্যাংক, সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংক (এসআইবিএল) এবং এক্সিম ব্যাংক। এর মধ্যে এক্সিম ব্যাংক ও এসআইবিএল এই একীভূতকরণে আপত্তি জানিয়েছে। ব্যাংকদুটি মনে করছে, সময় পেলে তারা নিজস্বভাবে ঘুরে দাঁড়াতে পারবে।

ডিএসই তথ্য অনুযায়ী, আগস্ট শেষে গ্লোবাল ইসলামী ব্যাংকের ৫৩.১১% প্রাতিষ্ঠানিক শেয়ার এবং ৩১.৪৬% সাধারণ বিনিয়োগকারীর শেয়ার রয়েছে। ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংকে ৬৫.৪% সাধারণ বিনিয়োগকারীর শেয়ার, এক্সিম ব্যাংকে ৩৯.২৮% সাধারণ বিনিয়োগকারীর শেয়ার, এসআইবিএলে ১৭.৯২% সাধারণ বিনিয়োগকারীর শেয়ার এবং ইউনিয়ন ব্যাংকে ৩০.৯৩% সাধারণ বিনিয়োগকারীর শেয়ার রয়েছে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের অবস্থান ও নতুন ব্যাংকের ভবিষ্যৎ

বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র আরিফ হোসেন খান বলেছেন, "নতুন ব্যাংক যেহেতু সরকারের মালিকানায় থাকবে, তাই আমানত নিয়ে দুশ্চিন্তার কিছু নেই। মার্জার নতুন কনসেপ্ট, তাই অনেকে ক্ষুব্ধ হতে পারেন, কেউ কেউ আইনি পদক্ষেপও নেবে। তবে বাংলাদেশ ব্যাংক 'রেজুলেশন অধ্যাদেশ ২০২৫'-এর বিধান ও প্রচলিত আইন মেনেই এটি সম্পন্ন করবে।"

সূত্রমতে, একীভূতকরণের পর নতুন ব্যাংকের নাম হতে পারে 'ইউনাইটেড ইসলামী ব্যাংক'। এই নতুন ব্যাংকটি পাঁচ ব্যাংকের সম্পদ, দায় ও জনবল একত্র করে অধিগ্রহণ করবে। সরকারের পক্ষ থেকে বড় অংশের মূলধন দেওয়া হবে, এবং পরিচালনা পর্ষদে সরকারি প্রতিনিধি ও অভিজ্ঞ ব্যাংকাররা থাকবেন।

বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক পর্যায়ের কর্মকর্তাদের প্রশাসক হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হবে, যারা মার্জার সম্পন্ন না হওয়া পর্যন্ত ব্যাংকগুলোর এমডির দায়িত্ব পালন করবেন। অনুমোদনের পরই বর্তমান পরিচালনা পর্ষদ বাতিল করা হবে।

আল-মামুন/

পাঠকের মতামত:

আপনার জন্য বাছাই করা কিছু নিউজ

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ