ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১৬ অক্টোবর ২০২৫, ১ কার্তিক ১৪৩২

Alamin Islam

Senior Reporter

এইচএসসি রেজাল্ট বিপর্যয়: বোর্ড চ্যালেঞ্জ করবেন যেভাবে জানুন যেদিন থেকে শুরু

শিক্ষা ডেস্ক . ২৪আপডেটনিউজ
২০২৫ অক্টোবর ১৬ ১১:০৬:৪১
এইচএসসি রেজাল্ট বিপর্যয়: বোর্ড চ্যালেঞ্জ করবেন যেভাবে জানুন যেদিন থেকে শুরু

উচ্চমাধ্যমিক সার্টিফিকেট (এইচএসসি) ও সমমানের পরীক্ষার ফলাফলে এবার ব্যাপক বিপর্যয় দেখা দিয়েছে। গত বছরের তুলনায় পাসের হার কমেছে প্রায় ১৯ শতাংশ, যা দেশের শিক্ষাব্যবস্থায় গভীর উদ্বেগের সৃষ্টি করেছে। দেশের ১১টি শিক্ষা বোর্ডে ২০২৫ সালের এইচএসসি পরীক্ষায় গড় পাসের হার দাঁড়িয়েছে মাত্র ৫৮.৮৩ শতাংশ।

আজ সকাল ১০টায় সারা দেশের সব শিক্ষা বোর্ডের ওয়েবসাইট, সংশ্লিষ্ট পরীক্ষাকেন্দ্র, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও এসএমএসের মাধ্যমে একযোগে এই ফলাফল প্রকাশিত হয়।

ফলাফলে ব্যাপক বিপর্যয়: শিক্ষাবিদ ও অভিভাবকরা উদ্বিগ্ন

প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী, এই বছর মোট ১২ লাখ ৫১ হাজার ১১১ জন শিক্ষার্থী এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষায় অংশ নিয়েছিলেন। তাদের মধ্যে উত্তীর্ণ হতে পেরেছেন মাত্র ৫৮.৮৩ শতাংশ। এর মানে হলো, গত বছরের তুলনায় প্রায় ১৮.৯৫ শতাংশ কম শিক্ষার্থী এবার পাস করতে পেরেছেন। এই বিশাল সংখ্যক শিক্ষার্থীর অনুত্তীর্ণ হওয়া সামগ্রিক শিক্ষাব্যবস্থায় বড় ধরনের প্রশ্ন তৈরি করেছে। হঠাৎ করে পাসের হার এত কমে যাওয়ার কারণ এবং এর দীর্ঘমেয়াদী প্রভাব কী হতে পারে, তা নিয়ে ইতোমধ্যে আলোচনা শুরু হয়েছে।

শিক্ষাবিদ ও অভিভাবকরা এই ফলাফলে গভীর হতাশা প্রকাশ করেছেন এবং এর কারণ অনুসন্ধানের দাবি জানিয়েছেন। প্রশ্ন উঠেছে, পরীক্ষা পদ্ধতির পরিবর্তন, প্রশ্নপত্রের মান অথবা শিক্ষার্থীদের প্রস্তুতিতে কোনো ঘাটতি ছিল কিনা। এই অপ্রত্যাশিত ফলাফল শিক্ষাবিদ মহল ও অভিভাবকদের মধ্যে নতুন করে উদ্বেগের জন্ম দিয়েছে।

পুনঃনিরীক্ষণের সুযোগ: বদলে গেছে আবেদনের নিয়ম!

এইচএসসি ও সমমান পরীক্ষার ফলাফল প্রকাশের পর কোনো শিক্ষার্থী প্রত্যাশা অনুযায়ী ফল না পেলে পুনঃনিরীক্ষণ বা খাতা চ্যালেঞ্জের সুযোগ পান। এবারও সেই সুযোগ রেখেছে শিক্ষা বোর্ডগুলো। তবে শিক্ষার্থীদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ খবর হলো, পুনঃনিরীক্ষণের আবেদনের নিয়মে এবার বড় ধরনের পরিবর্তন আনা হয়েছে।

আগের নিয়ম:

আগে টেলিটক সিম ব্যবহার করে এসএমএসের মাধ্যমে খাতা চ্যালেঞ্জের আবেদন করতে হতো। ফিরতি এসএমএসে আবেদন বাবদ কত টাকা লাগবে, তা জানিয়ে একটি পিন নম্বর দেওয়া হতো। পিন নম্বর দিয়ে ‘ইয়েস’ লিখে এসএমএস দিলে মোবাইল নম্বর থেকে টাকা কেটে নেওয়া হতো।`নতুন নিয়মে আবেদন যেভাবে করবেন (ধাপে ধাপে):

১. ওয়েবসাইটে প্রবেশ: নতুন নিয়মে এসএমএসের বদলে ওয়েবসাইটে প্রবেশ করে ফল পুনঃনিরীক্ষণ বা খাতা চ্যালেঞ্জের আবেদন করতে হবে শিক্ষার্থীদের। এর জন্য আপনাকে শিক্ষা বোর্ডের নির্ধারিত ওয়েবসাইটে (https://rescrutiny.eduboardresults.gov.bd/) প্রবেশ করতে হবে।

২. তথ্য পূরণ: ওয়েবসাইটে প্রবেশ করে নির্ধারিত স্থানে আপনার রোল নম্বর, রেজিস্ট্রেশন নম্বর পূরণ করতে হবে এবং ড্রপ ডাউন মেন্যু থেকে আপনার শিক্ষা বোর্ড নির্বাচন করতে হবে।

৩. সাবমিট ও মোবাইল নম্বর: সমস্ত তথ্য সঠিকভাবে পূরণ করার পর ‘সাবমিট’ বাটনে ক্লিক করুন। এরপর একটি সচল মোবাইল নম্বর দিতে হবে। পুনঃনিরীক্ষণের ফলাফল প্রকাশিত হলে এই নম্বরে এসএমএস পাঠানো হবে।

৪. বিষয়ভিত্তিক ফলাফল দর্শন: পরবর্তী স্ক্রিনে আপনি আপনার বিষয়ভিত্তিক ফলাফল দেখতে পাবেন। এখান থেকে যেসকল বিষয়ে আপনি পুনঃনিরীক্ষণ করতে চান, সেগুলো নির্বাচন করুন।

ফি পরিশোধের নিয়মাবলি:

১. বিষয় নির্বাচন ও ফি প্রদান: এক বা একাধিক বিষয়ে ফলাফল পুনঃনিরীক্ষণের জন্য বিষয়গুলো নির্বাচন করে ‘ফি প্রদান করুন’ বাটনে ক্লিক করতে হবে। প্রতিটি পত্রের জন্য ১৫০ টাকা হারে ফি দিতে হবে। দ্বিপত্র বিশিষ্ট (যেমন- বাংলা প্রথমপত্র ও বাংলা দ্বিতীয়পত্র) বিষয়ের ক্ষেত্রে উভয়পত্রের আবেদন করতে হবে।

২. ফির পরিমাণ ও পেমেন্ট গেটওয়ে: এরপর স্ক্রিনে প্রদেয় ফির মোট পরিমাণ দেখা যাবে। বিকাশ, নগদ, সোনালি সেবা, ডিডিবিএল রকেট এবং টেলিটক মোবাইল সিমের মাধ্যমে এই ফি পরিশোধ করা যাবে।

৩. বিস্তারিত ধাপ: ফি পরিশোধের বিস্তারিত ধাপগুলো ওপরে উল্লেখিত পোর্টালের ‘হেল্প’ বাটনে ক্লিক করে দেখে নেওয়া যাবে। এটি আপনাকে পেমেন্ট সম্পন্ন করতে সাহায্য করবে।

আবেদন চূড়ান্তকরণ ও পরিবর্তন:

১. আবেদন জমা দিন: সফলভাবে ফি পরিশোধ করে আবেদনের পোর্টালে এসে ‘জমা দিন’ বাটনে ক্লিক করতে হবে।

২. অতিরিক্ত বিষয় যোগ: একবার আবেদন জমা দেওয়ার পর যদি আপনি আরও বিষয় যুক্ত করতে চান, সে ক্ষেত্রে একইভাবে তা করা যাবে। তবে এই ক্ষেত্রে নতুনভাবে মোবাইল নম্বর দেওয়ার প্রয়োজন হবে না।

৩. আবেদন পরিবর্তন/বাতিল: ফি পরিশোধের আগেই যদি আবেদন পরিবর্তন বা পরিমার্জনের প্রয়োজন হয়, সে ক্ষেত্রে ‘মুছে ফেলুন’ বাটনে ক্লিক করে নির্বাচিত বিষয়গুলো (যেগুলোর জন্য এখনো ফি প্রদান করা হয়নি) প্রত্যাহার করা যাবে এবং নতুন করে বিষয় নির্বাচন করা যাবে। তবে একবার ফি জমা দিলে আবেদন করা বিষয়গুলো আর বাতিল করা যাবে না।

শিক্ষার্থীদের সুবিধার জন্য আবেদন প্রক্রিয়া সম্পূর্ণরূপে অনলাইন-ভিত্তিক করা হয়েছে। এই ফলাফল বিপর্যয় এবং পুনঃনিরীক্ষণের সুযোগ শিক্ষার্থীদের মধ্যে মিশ্র প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করেছে। শিক্ষা বোর্ড আশা করছে, এই নতুন পদ্ধতি শিক্ষার্থীদের জন্য আবেদন প্রক্রিয়াকে আরও সহজ ও দ্রুত করবে।

আল-মামুন/

পাঠকের মতামত:

আপনার জন্য বাছাই করা কিছু নিউজ