ঢাকা, মঙ্গলবার, ২৮ অক্টোবর ২০২৫, ১৩ কার্তিক ১৪৩২

MD. Razib Ali

Senior Reporter

ঘরে বসেই ই-পাসপোর্টের জন্য আবেদন: এক নজরে জানুন সব নিয়ম

জাতীয় ডেস্ক . ২৪আপডেটনিউজ
২০২৫ অক্টোবর ২৮ ১৫:৩৬:৫৯
ঘরে বসেই ই-পাসপোর্টের জন্য আবেদন: এক নজরে জানুন সব নিয়ম

ডিজিটাল বাংলাদেশের পথে আরও এক ধাপ এগিয়ে, এখন নাগরিকরা তাদের ই-পাসপোর্টের জন্য আবেদন প্রক্রিয়াটি ঘরে বসেই সম্পন্ন করতে পারছেন। অনলাইনে আবেদন ফর্ম পূরণ থেকে শুরু করে নির্ধারিত ফি জমা দেওয়া—সবকিছুই এখন কয়েকটি সহজ ধাপে হাতের মুঠোয়। এই সরল প্রক্রিয়াটি জানা থাকলে সময় ও শারীরিক পরিশ্রম দুটোই বাঁচানো সম্ভব। নিচে ই-পাসপোর্টের জন্য আবেদনের পাঁচ-স্তরীয় পদ্ধতি সবিস্তারে আলোচনা করা হলো।

ই-পাসপোর্ট প্রাপ্তির ৫টি পর্যায়

সহজে ই-পাসপোর্ট পেতে আবেদন প্রক্রিয়াকে পাঁচটি সুনির্দিষ্ট কার্যক্রমে ভাগ করা যেতে পারে।

১. প্রারম্ভিক যাচাই: আপনার এলাকায় পরিষেবা নিশ্চিতকরণ

আবেদন প্রক্রিয়া শুরু করার আগে, আপনার বর্তমান বসবাসের স্থানে ই-পাসপোর্ট সুবিধা চালু হয়েছে কি না, তা যাচাই করে নেওয়া আবশ্যক। এই তথ্যটি নিশ্চিত করতে আপনাকে http://www.epassport.gov.bd ঠিকানায় প্রবেশ করে প্রয়োজনীয় তথ্যাদি দেখে নিতে হবে।

২. অনলাইন ফরম পূরণ এবং জমা

ওয়েবসাইটে প্রবেশ করে 'অনলাইনে আবেদন' মেনুতে ক্লিক করে প্রথম কাজটি শুরু করতে হবে।

আপনার বর্তমান বাসস্থানের জেলা ও থানার বিবরণ বেছে নিন।

একটি সক্রিয় ইমেইল ঠিকানা প্রদান করুন।

অনলাইন ফর্মে নাম, জন্মতারিখ, জাতীয় পরিচয়পত্র নম্বরসহ সমস্ত ব্যক্তিগত বিবরণ নির্ভুলভাবে পূরণ করতে হবে।

সমস্ত তথ্য প্রবেশ করানোর পর ফরমটি জমা (Submit) দিন। জমা দেওয়া সম্পন্ন হলে আবেদনপত্রটির একটি মুদ্রিত কপি তৈরি হবে, যা পরবর্তী ধাপের জন্য অত্যন্ত জরুরি।

৩. ফি পরিশোধের পদ্ধতি ও তালিকা

পাসপোর্টের ধার্যকৃত মূল্যমান নির্ভর করে এর মেয়াদকাল (৫ বা ১০ বছর) এবং পৃষ্ঠাসংখ্যার (৪৮ বা ৬৪ পৃষ্ঠা) উপর। ফি পরিশোধের দুটি প্রধান উপায় উপলব্ধ:

ডিজিটাল পেমেন্ট: ব্যাংক কার্ড, মোবাইল ব্যাংকিং সার্ভিস (যেমন বিকাশ, নগদ) বা অন্যান্য ডিজিটাল চ্যানেলের মাধ্যমে ফি পরিশোধ করা যেতে পারে।

ব্যাংকিং চ্যানেলে: অনুমোদিত ব্যাংকে সরাসরি নগদ অর্থ জমা দিয়ে প্রাপ্ত স্লিপ নম্বরটি আবেদনপত্রের সাথে সংযুক্ত করতে হবে।

গুরুত্বপূর্ণ: ফি জমা দেওয়ার প্রমাণপত্র (রসিদ) অবশ্যই সযত্নে সংরক্ষণ করতে হবে, যা পাসপোর্ট অফিসে প্রদর্শনের প্রয়োজন হবে।

দেশে আবেদনের জন্য ই-পাসপোর্ট ফি (টাকায়):

প্রকারভেদমেয়াদসাধারণজরুরিঅতি জরুরি
৪৮ পৃষ্ঠা ৫ বছর ৪,০২৫ ৬,৩২৫ ৮,৬২৫
৪৮ পৃষ্ঠা ১০ বছর ৫,৭৫০ ৮,০৫০ ১০,৩৫০
৬৪ পৃষ্ঠা ৫ বছর ৬,৩২৫ ৮,৬২৫ ১২,৭৫০
৬৪ পৃষ্ঠা ১০ বছর ৮,০৫০ ১০,৩৫০ ১৩,৮০০

প্রবাসীদের জন্য ফি (ইউএস ডলারে):

ক্যাটাগরিপৃষ্ঠামেয়াদনিয়মিত (ডলার)জরুরি (ডলার)
শ্রমিক/ছাত্র ৪৮ ৫ বছর ৩০ ৪৫
শ্রমিক/ছাত্র ৪৮ ১০ বছর ৫০ ৭৫
সাধারণ ৬৪ ৫ বছর ১৫০ ২০০
সাধারণ ৬৪ ১০ বছর ১৭৫ ২২৫

বাংলাদেশ মিশনের মাধ্যমে আবেদনকারীদের ফি মার্কিন ডলারে পরিশোধ করতে হয়।

৪. বায়োমেট্রিক তথ্য গ্রহণ ও নথিপত্র উপস্থাপন

অনলাইন আবেদন জমা পড়ার পর তথ্যগুলি পাসপোর্ট অফিসের সার্ভারে স্থানান্তরিত হয়। এরপর নির্ধারিত দিনে আবেদনপত্রের মুদ্রিত অনুলিপি সহ সমস্ত প্রয়োজনীয় দলিলপত্র নিয়ে সংশ্লিষ্ট পাসপোর্ট অফিসে সশরীরে উপস্থিত হতে হবে। এই ধাপে আপনার ছবি ধারণ, আঙুলের ছাপ নেওয়া ও স্বাক্ষর গ্রহণ করা হবে।

আবেদনকারীর ধরন অনুযায়ী প্রয়োজনীয় কাগজপত্র:

আবেদনকারীর ধরনজমা দিতে হবে
প্রাপ্তবয়স্ক (১৮+) মূল ও ফটোকপিসহ জাতীয় পরিচয়পত্র, নাগরিকত্ব বা ইউটিলিটি বিলের কপি, প্রযোজ্য ক্ষেত্রে কাবিননামার অনুলিপি, যদি থাকে পূর্ববর্তী পাসপোর্টের প্রতিলিপি, সরকারি চাকুরের জন্য জিও/এনওসি।
অপ্রাপ্তবয়স্ক (১৮-) জন্মনিবন্ধন সনদ, পিতামাতার জাতীয় পরিচয়পত্রের কপি ও ছবি। ছয় বছরের নিচে বয়সীদের জন্য ৩-আর আকারের ল্যাব প্রিন্ট করা ছবি (ধূসর পটভূমিতে)।
ক্ষতিগ্রস্ত/হারানো পাসপোর্ট নিকটস্থ থানায় করা জিডির মূল প্রতিলিপি, এবং পুরাতন পাসপোর্টের ফটোকপি (যদি পাওয়া যায়)।

৫. চূড়ান্তভাবে পাসপোর্ট হাতে পাওয়া

আপনার পাসপোর্ট তৈরির কাজ শেষ হলে মোবাইল ফোনে এসএমএসের মাধ্যমে একটি খুদে বার্তা পাঠানো হবে। নির্দিষ্ট সময়সূচিতে পাসপোর্ট অফিসে গিয়ে ডেলিভারি স্লিপ বা রসিদ দেখিয়ে আপনার ভ্রমণ দলিলটি গ্রহণ করতে হবে। জাতীয় পরিচয়পত্রসহ একজন অনুমোদিত প্রতিনিধিকেও সংগ্রহের অনুমতি দেওয়া যেতে পারে।

দ্রুত পাসপোর্ট বিতরণের প্রত্যাশিত সময়কাল

পাসপোর্ট তৈরির কাজ শেষ হওয়ার পর সময়সীমা:

নিয়মিত বিতরণ: ১৫ কর্মদিবস বা ২১ দিনের মধ্যে।

জরুরি বিতরণ: ৭ কর্মদিবস বা ১০ দিনের মধ্যে।

অতি জরুরি বিতরণ: ২ কর্মদিবসের মধ্যে।

আবেদনের অবস্থা পর্যবেক্ষণ: ই-পাসপোর্ট পোর্টালে ‘স্ট্যাটাস চেক’ সুবিধা ব্যবহার করে জন্মতারিখ ও ক্রমিক নম্বর প্রবেশ করিয়ে আপনার আবেদনের অগ্রগতি সহজেই জানা সম্ভব। নিজের অনলাইন পোর্টাল অ্যাকাউন্ট থেকেও সমস্ত আবেদনের অবস্থা পর্যবেক্ষণ করা যায়।

বিশেষ নির্দেশিকা ও সাবধানতা

অপ্রাপ্তবয়স্কদের ক্ষেত্রে: এদের পাসপোর্টের মেয়াদ হবে ৫ বছর এবং পৃষ্ঠা থাকবে ৪৮টি। জাতীয় পরিচয়পত্র না থাকলে পিতা বা মাতার আইডি নম্বর ব্যবহার করতে হবে।

তথ্য সতর্কতা: ফর্মে কোনো ভুল বা অসঙ্গতি থাকলে আবেদনটি বাতিল হওয়ার ঝুঁকি থাকে। তাই সর্বোচ্চ সতর্কতা অবলম্বন করা জরুরি।

হারিয়ে গেলে: পাসপোর্ট খোয়া গেলে বা চুরি হলে অবিলম্বে নিকটস্থ পুলিশ স্টেশনে সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করুন। নতুন আবেদনের সময় জিডির মূল কপি এবং পুরানো পাসপোর্টের ফটোকপি (যদি থাকে) জমা দিতে হবে।

প্রবাসীদের জন্য: বিদেশে বসবাসকারীরা বাংলাদেশ মিশনের ওয়েবসাইটে ফি এবং প্রক্রিয়া সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে পারবেন।

আল-মামুন/

পাঠকের মতামত:

আপনার জন্য বাছাই করা কিছু নিউজ

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ