ঢাকা, শনিবার, ১ নভেম্বর ২০২৫, ১৭ কার্তিক ১৪৩২

Alamin Islam

Senior Reporter

সালমান শাহর মৃত্যু: সেদিনের ঘটনা জানালেন ডলি জহুর, শাবনূর কেন যাননি?

বিনোদন ডেস্ক . ২৪আপডেটনিউজ
২০২৫ নভেম্বর ০১ ১৮:৩৪:১৯
সালমান শাহর মৃত্যু: সেদিনের ঘটনা জানালেন ডলি জহুর, শাবনূর কেন যাননি?

বাংলা চলচ্চিত্রের অমর নায়ক সালমান শাহর আকস্মিক তিরোধানের পর থেকেই ভক্তমহলে এক গভীর জিজ্ঞাসা বিরাজমান— চূড়ান্ত বিদায়কালে কেন তার অন্যতম সহ-অভিনেত্রী শাবনূর সেখানে উপস্থিত ছিলেন না? এই নিয়ে নানা সময়ে নানা জল্পনা সৃষ্টি হলেও, সম্প্রতি এক সাক্ষাৎকারে প্রবীণ অভিনেত্রী ডলি জহুর সেই দিনের শ্বাসরুদ্ধকর ঘটনাবলী বর্ণনা করে দীর্ঘদিনের এই রহস্যের কিনারা করেছেন।

ডলি জহুর জানান, সেদিন তিনি উপস্থিত ছিলেন শাবনূরের গ্রিন রোডের ভূতের গলির বাড়িতে। ঘটনাটি ছিল শুক্রবারের।

সিঙ্গাপুর ফেরত শাবনূর, অ্যালার্জির জটিলতা

ডলি জহুর তার সেই দিনের বাড়িতে যাওয়ার কারণ স্পষ্ট করেন। তিনি বলেন, তারা যারা একই সেটে কাজ করছিলেন, মেকআপ ব্যবহারের কারণে তাদের সবার ত্বকেই চর্মরোগ দেখা দিয়েছিল। তিনি জানান, 'আমার তো মুখ, কিন্তু শাবনূরের গলার কাছে... তাই ওর এলার্জিটা অনেক বেশি।' এই চিকিৎসার জন্যই শাবনূর সিঙ্গাপুরে গিয়েছিলেন এবং মাত্র দু-তিন দিন আগেই ফিরেছিলেন। তার প্রেসক্রিপশন দেখতেই ডলি জহুর সেদিন তার বাসায় যান।

প্রথম ফোনকল: অ্যাক্সিডেন্টের খবর

বাসায় থাকাকালীন ল্যান্ডফোনে একটি কল আসে। শাবনূর, যিনি ল্যান্ডফোন ধরতেন না, তিনি ডলি জহুরকে ‘আন্টুস’ সম্বোধন করে ফোনটি ধরতে বলেন। ফোনটি ধরে ওপাশ থেকে পরিচালক মণ্ডল জানতে চান, ‘কে ভাবি নাকি?’ কণ্ঠস্বর শুনেই চিনে ফেলেন ডলি জহুরকে। পরিচালক মণ্ডল জানান, সালমান শাহ অ্যাক্সিডেন্ট করে হলি ফ্যামিলি হাসপাতালে আছেন। তিনি পরিচালক সমিতির উদ্দেশ্যে খোঁজ নিতে যাচ্ছেন।

ডলি জহুর ঘটনাটি জানালে শাবনূর প্রথমে তা বিশ্বাস করতে পারেননি। তিনি বলেন, 'না ও কেন অ্যাকসিডেন্ট করবে।' ডলি জহুর মণ্ডলকে আরও তথ্য দিতে বলেন।

খবর যখন পাল্টে গেল: বাড়লো উত্তেজনা

এরপর পরিচালক মণ্ডল নয়, ফোন আসে দিলু ভাইয়ের। ডলি জহুর কণ্ঠ শুনেই তাকে চিনে ফেলেন এবং খবর জানতে চান। দিলু ভাই জানান, ‘খবর বেশি ভালো না।’ হলি ফ্যামিলি হাসপাতাল সালমানকে রাখেনি, তাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে।

এই খবর শুনে শাবনূর তৎক্ষণাৎ নার্ভাস হয়ে ওঠেন। ডলি জহুরও নিজের হাত কাঁপতে থাকার কথা উল্লেখ করেন। শাবনূর তীব্র চিৎকার করে বারবার বলতে থাকেন, 'আন্টুস আন্টুস যেতে হবে।' ডলি জহুর তখন তাকে ধমক দেন এবং অপেক্ষা করার জন্য বাধ্য করেন।

চূড়ান্ত সংবাদ এবং অভিনেত্রীর আর্তনাদ

অপেক্ষা করার মধ্যেই শাহ আলম কিরণ ফোন দেন, এরপর কে যেন ফোন করে ভয়াবহ বার্তাটি দেন— 'ও নাই।'

এই চূড়ান্ত দুঃসংবাদ শোনার পরেই শাবনূরের তীব্র চিৎকার-বিলাপ শুরু হয়। ডলি জহুর জানান, শাবনূরের কান্নার তীব্রতায় তিনি 'অথর্ব' হয়ে গিয়েছিলেন। মানসিকভাবে বিপর্যস্ত শাবনূর যেকোনো মূল্যে বাসা থেকে বের হতে চাইছিলেন।

নির্মাতা এহতেশামের কড়া নির্দেশ: একঘরে রাখা হলো শাবনূরকে

এই কঠিন পরিস্থিতিতে পরিচালক এহতেশাম (দাদু) ফোন করেন ডলি জহুরকে। তিনি তাকে কড়া নির্দেশ দেন, "নূপুরকে (শাবনূর) বাসা থেকে বের হতে দিও না। ওর মা মনে হয় বাসায় নেই। তুমি ওকে আটকে রাখো।"

পরিচালক এহতেশামের এই জরুরি নির্দেশনা এবং শাবনূরের মায়ের অনুপস্থিতি বিবেচনা করে ডলি জহুর তাকে বের হতে দিতে পারেননি। মানসিক যন্ত্রণায় ছটফট করা সহ-অভিনেত্রীকে সামাল দিতে সেদিন সারাদিন, রাত বারোটা পর্যন্ত ডলি জহুর শাবনূরের বাসাতেই ছিলেন। এভাবেই বিশেষ পরিস্থিতিতে, প্রিয় সহকর্মীকে শেষ শ্রদ্ধা জানাতে যাওয়া সম্ভব হয়নি শাবনূরের পক্ষে।

আল-মামুন/

পাঠকের মতামত:

আপনার জন্য বাছাই করা কিছু নিউজ