ঢাকা, মঙ্গলবার, ৪ নভেম্বর ২০২৫, ২০ কার্তিক ১৪৩২

Alamin Islam

Senior Reporter

আল-আরাফাহ ব্যাংকের এমডি নিয়োগে অনিয়মের অভিযোগ

শেয়ারনিউজ ডেস্ক . ২৪আপডেটনিউজ
২০২৫ নভেম্বর ০৪ ২১:২৭:৩৭
আল-আরাফাহ ব্যাংকের এমডি নিয়োগে অনিয়মের অভিযোগ

নিজস্ব প্রতিবেদক: শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত বেসরকারি খাতের অন্যতম শরীয়াহভিত্তিক ব্যাংক আল-আরাফাহ ইসলামী ব্যাংক পিএলসি (এআইবিএল)-এর শীর্ষ ব্যবস্থাপনা ও পরিচালনা পর্ষদের বিরুদ্ধে গুরুতর অনিয়ম, স্বজনপ্রীতি এবং স্বার্থের সংঘাতের অভিযোগ উঠেছে। বিশেষ করে, ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) নিয়োগ এবং নতুন কর্মকর্তা নিয়োগের ক্ষেত্রে প্রচলিত রীতি ভঙ্গ করে বিতর্কিত সিদ্ধান্ত নেওয়ায় ব্যাংকটির সামগ্রিক স্থিতিশীলতা মারাত্মকভাবে হুমকির মুখে পড়েছে।

গত ২ সেপ্টেম্বর, ২০২৫ তারিখে এআইবিএল কর্তৃপক্ষ পত্রিকায় এমডি ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (এমডি ও সিইও) নিয়োগের জন্য বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে। পদের যোগ্যতা হিসেবে কমপক্ষে ১০ থেকে ২০ বছরের ব্যাংকিং অভিজ্ঞতার শর্ত দেওয়া হয়। জানা যায়, মোট ২৪ জন অভিজ্ঞ ব্যাংকার আবেদন করলেও কোনো আনুষ্ঠানিক সাক্ষাৎকার বা ইন্টারভিউ প্রক্রিয়া সম্পন্ন করা হয়নি। বরং, ব্যাংকটির পরিচালনা পর্ষদ বর্তমানে ভারপ্রাপ্ত এমডি হিসেবে দায়িত্বে থাকা রাফাত উল্লাহ খানকে এমডি হিসেবে চূড়ান্ত অনুমোদনের জন্য বাংলাদেশ ব্যাংকের কাছে গোপনে প্রস্তাব পাঠিয়েছে।

ব্যাংকটিতে গুঞ্জন রয়েছে, রাফাত উল্লাহ খান ব্যাংকের চেয়ারম্যান খাজা শাহরিয়ারের শ্যালক। পুরো প্রক্রিয়ায় চেয়ারম্যানকে সহযোগিতা করেছেন ব্যাংকের আরেক ক্ষমতাধর পরিচালক এবং ইসি কমিটির সভাপতি আবদুল ওয়াদুদ। এতে করে মেধা ও যোগ্যতাকে উপেক্ষা করে স্বজনপ্রীতির মাধ্যমে শীর্ষ পদ পূরণের গুরুতর অভিযোগ উঠেছে।

আরও জানা গেছে, ইসলামী ব্যাংকে এমডি পদে নিয়োগের জন্য প্রার্থীর অন্তত দুই বছরের ইসলামী ব্যাংকিং অভিজ্ঞতা থাকা বাধ্যতামূলক। কিন্তু প্রস্তাবিত এমডি রাফাত উল্লাহ খান পূর্বে কখনো কোনো ইসলামী ব্যাংকে চাকরি করেননি। এ কারণে সংশ্লিষ্টরা প্রশ্ন তুলেছেন—তিনি কীভাবে শরীয়াহভিত্তিক ব্যাংকের শীর্ষ পদে দায়িত্ব পালনের যোগ্যতা অর্জন করেছেন?

ব্যাংকটির বর্তমান চেয়ারম্যান খাজা শাহরিয়ার পূর্বে লঙ্কাবাংলা ফাইন্যান্সের এমডি ছিলেন। অভিযোগ উঠেছে, লিজিং কোম্পানি থেকে আসার সুবাদে তিনি লঙ্কাবাংলাসহ বিভিন্ন লিজিং প্রতিষ্ঠানের প্রায় ১০০ জনকে এক্সিকিউটিভ পদে নিয়োগ দিয়েছেন, যাদের অনেকেরই ব্যাংকিং খাতে কোন অভিজ্ঞতা নেই। এসব নিয়োগে বৃহৎ পরিসরে অনিয়ম ও নিয়োগ বাণিজ্যের গুঞ্জন ব্যাংকের ভেতরে তীব্র হয়েছে।

এদিকে, গত এক বছরে আল-আরাফাহ ইসলামী ব্যাংকের আর্থিক অবস্থা উদ্বেগজনকভাবে অবনতি হয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ সিএএমইএলএস রেটিং-এ এ অবস্থার স্পষ্ট প্রতিফলন পাওয়া যায়।

গত ৩০ সেপ্টেম্বর, ২০২৪ তারিখের তথ্যানুযায়ী, ব্যাংকের গুরুত্বপূর্ণ উপাদান অ্যাসেট কোয়ালিটি এবং আয়-এর রেটিং ‘৩ বা মোটামুটি ভালো’ থেকে নেমে ‘৪ বা প্রান্তিক’ হয়েছে। সামগ্রিকভাবে সিএএমইএলএস রেটিং ‘২ বা সন্তোষজনক’ থেকে এক ধাপ নেমে ‘৩ বা মোটামুটি ভালো’ পর্যায়ে নেমে এসেছে।

এছাড়া, ৩০ জুন, ২০২৫ ত্রৈমাসিক প্রতিবেদনে বাংলাদেশ ব্যাংক উল্লেখ করেছে যে, ব্যাংকের ন্যূনতম মূলধন পর্যাপ্ততার হার ৯.৮৩% থেকে কমে ৯.০২%-এ দাঁড়িয়েছে। এটি ব্যাংকের ঝুঁকি গ্রহণের সক্ষমতা হ্রাস এবং ভবিষ্যৎ মূলধন সংকটের আশঙ্কা তৈরি করছে।

একটি সূত্র জানিয়েছে, রাফাত উল্লাহ খানকে ব্যাংকটির এমডি পদে অনুমোদনের জন্য একটি প্রভাবশালী গ্রুপ বাংলাদেশ ব্যাংকে অবিরাম তদবির চালাচ্ছে।

তানভির ইসলাম/

পাঠকের মতামত:

আপনার জন্য বাছাই করা কিছু নিউজ