ঢাকা, বুধবার, ১৯ নভেম্বর ২০২৫, ৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩২

Alamin Islam

Senior Reporter

মানি লন্ডারিং: সাবেক মন্ত্রী সাইফুজ্জামানসহ ৩ জনের সাড়ে ৪ কোটি শেয়ার অবরুদ্ধ

শেয়ারনিউজ ডেস্ক . ২৪আপডেটনিউজ
২০২৫ নভেম্বর ১৯ ১৫:০৮:০৯
মানি লন্ডারিং: সাবেক মন্ত্রী সাইফুজ্জামানসহ ৩ জনের সাড়ে ৪ কোটি শেয়ার অবরুদ্ধ

অবৈধ পন্থায় বিপুল পরিমাণ অর্থ উপার্জনের অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে সাবেক ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী জাবেদ, তাঁর ভাই আনিসুজ্জামান চৌধুরী রনি (ইউসিবি ব্যাংক পিএলসির সাবেক পরিচালক), এবং রনির স্ত্রী ইমরানা জামান চৌধুরীর (মেঘনা ব্যাংক পিএলসির সাবেক পরিচালক) মালিকানাধীন মেঘনা ব্যাংকের প্রায় ৪ কোটি ৬৪ লাখ শেয়ার লেনদেন স্থগিত করা হয়েছে। অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি) কর্তৃক পরিচালিত প্রাথমিক অনুসন্ধানে এসব শেয়ার ক্রয়ে অবৈধ অর্থের সম্পৃক্ততার প্রমাণ মেলায় ঢাকা মহানগর সিনিয়র স্পেশাল জজ আদালত এই সম্পত্তি জব্দ করার আদেশ দেন।

বুধবার (১৯ নভেম্বর) সিআইডির বিশেষ পুলিশ সুপার (মিডিয়া ও জনসংযোগ) জসীম উদ্দিন খানের স্বাক্ষরিত এক প্রেস বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে এই গুরুত্বপূর্ণ তথ্য জনসমক্ষে প্রকাশ করা হয়।

আনুমানিক ৬০ কোটি টাকার শেয়ার অবরুদ্ধ

সিআইডি সূত্র জানায়, এই অভিযুক্তদের ব্যক্তিগত হিসাব ও তাদের প্রতিষ্ঠিত 'স্টিডফাস্ট ম্যানেজমেন্ট ট্রেডিং লিমিটেড' নামক একটি প্রতিষ্ঠানের নামে প্রাথমিক অবস্থায় ৪ কোটি ৫৩ লাখ ৩০ হাজার ২০০টি শেয়ার কেনা হয়েছিল। শেয়ারগুলো কেনার সময় যার বাজারমূল্য ছিল আনুমানিক ৫৯ কোটি ৯৫ লাখ টাকা। স্টক লভ্যাংশ যুক্ত হওয়ার পর মোট শেয়ারের সংখ্যা বর্তমানে ৪ কোটি ৬৪ লাখ ৬৩ হাজার ৪৫৫টিতে উন্নীত হয়েছে।

এই সম্পদগুলো জব্দের (ফ্রিজ করার) জন্য সিআইডির আবেদনের প্রেক্ষিতে আদালত গতকাল (মঙ্গলবার) এই নিষেধাজ্ঞা জারি করেন। সিআইডির ফাইন্যান্সিয়াল ক্রাইম ইউনিট এই চাঞ্চল্যকর মামলার তদন্ত করছে।

বিদেশ থেকে অর্থ এনে বৈধকরণের অপচেষ্টা

প্রাথমিক অনুসন্ধানে সিআইডি জানতে পেরেছে, অভিযুক্তরা দীর্ঘ সময় ধরে চাঁদাবাজি, জালিয়াতি এবং সংঘবদ্ধ অপরাধের মাধ্যমে বিপুল কালো টাকা অর্জন করেছেন। এই অর্থের একটি বড় অংশ বিদেশে পাচার করা হয়েছিল এবং পরবর্তীতে দেশে ফেরত এনে তাকে বৈধ সম্পদ হিসেবে দেখানোর চেষ্টা করা হয়।

টাকা বৈধকরণের প্রক্রিয়ার বিশদ বিবরণ দিয়ে সিআইডি জানায়, ২০২২ সালের জুলাই থেকে সেপ্টেম্বর মাসের মধ্যে সিঙ্গাপুর ও দুবাই থেকে মোট ২ কোটি ২২ লাখ ৫ হাজার ৪৪৪ মার্কিন ডলার দেশে আনা হয়। এই ডলার অভিযুক্তদের ঘনিষ্ঠ সহযোগী আবুল কাসেমের মাধ্যমে ইউসিবি ব্যাংক ও এনআরবিআইসি ব্যাংকের ফরেন কারেন্সি (এফসি) অ্যাকাউন্টগুলোতে জমা করা হয়।

পরে ইমরানা জামান চৌধুরী এবং ‘স্টিডফাস্ট ম্যানেজমেন্ট ট্রেডিং লিমিটেড’ এর নামে ৬০ কোটি টাকা নগদ এবং পে-অর্ডারের মাধ্যমে জমা দেওয়া হয়। এই অর্থ কমিউনিটি ব্যাংকের একটি নির্দিষ্ট অ্যাকাউন্টে স্থানান্তর করে সেখান থেকে ৫৯ কোটি ৯৫ লাখ টাকা ব্যবহার করে মেঘনা ব্যাংকের শেয়ার ক্রয় করা হয়।

সাবেক মন্ত্রীর কর্মচারীরাই 'কাগুজে' প্রতিষ্ঠানের পরিচালক

শেয়ার ক্রয়ে ব্যবহৃত ‘স্টিডফাস্ট ম্যানেজমেন্ট ট্রেডিং লিমিটেড’ নামের প্রতিষ্ঠানটির নির্বাহী পরিচালক হিসেবে উৎপল পাল এবং পরিচালক হিসেবে নাসিম উদ্দিন মোহাম্মদ আদিলের নাম দেখানো হয়েছে। সিআইডি অনুসন্ধানে বেরিয়ে এসেছে যে, এই দুই ব্যক্তিই সাবেক মন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী জাবেদের মালিকানাধীন আরামিট গ্রুপেরও কর্মচারী এবং তাঁর ঘনিষ্ঠ সহযোগী হিসেবে কাজ করেন।

এই অপরাধের সাথে জড়িত অন্যান্য অজ্ঞাত সদস্যদের চিহ্নিতকরণ এবং আইনি প্রক্রিয়া সুসম্পন্ন করার লক্ষ্যে সিআইডির অনুসন্ধান কার্যক্রম জোরেশোরে চলছে।

আল-মামুন/

পাঠকের মতামত:

আপনার জন্য বাছাই করা কিছু নিউজ