Alamin Islam
Senior Reporter
ভূমিকম্প হলে যে দোয়া পড়তে বলেছেন রাসূল (সা.)
স্রষ্টা তাঁর বান্দাদের পরীক্ষার জন্য কখনও কখনও কঠিন পরিস্থিতির সম্মুখীন করেন—তা সে বিপদ-আপদই হোক বা প্রাকৃতিক দুর্যোগ। ভূমিকম্প হলো পরম করুণাময়ের এক বিস্ময়কর কুদরত, যা মানবজাতিকে তাদের অসহায়ত্বের কথা স্মরণ করিয়ে দেয়। এমন চরম মুহূর্তে আল্লাহর কুদরতের সামনে বিনয়াবনত হওয়া এবং পরিত্রাণ পাওয়ার জন্য দোয়া করাই হলো একজন বিশ্বাসীর প্রধান কর্তব্য।
১. দুর্যোগ কেন? কোরআনে বর্ণিত নম্রতার আহ্বান
মানুষ যখন আল্লাহপ্রদত্ত এসব শাস্তির সম্মুখীন হয়, তখন বিনম্রতা ও বশ্যতা স্বীকার করা আবশ্যক। পবিত্র কোরআনে আল্লাহতায়ালা পূর্ববর্তী জাতিদের প্রতি একই বার্তা দিয়েছিলেন। সূরা আনআমে এর কারণ স্পষ্ট করা হয়েছে:
"আপনার পূর্বে আমি বহু জাতির কাছে রাসূল প্রেরণ করেছি; এরপর তাদের দারিদ্র্য ও দুঃখ-কষ্টের মুখে ফেলেছি, যেন তারা বিনম্র-নত হয়।" (সূরা আনআম: ৪২)
কিন্তু যখন আজাব নেমে এলো, তখন তারা বিনীত হলো না। বরং তাদের হৃদয় কঠিন হয়ে গেল। শয়তান তাদের অপকর্মগুলোই তাদের দৃষ্টিতে শোভন করে দেখিয়েছিল। (সূরা আনআম: ৪৩)
যখন তারা উপদেশ ভুলে গেল, তখন আল্লাহ তাদের জন্য সব কিছুর দ্বার উন্মুক্ত করে দিলেন। তারা যখন এতে অহংকারী হলো, ঠিক তখনই তিনি অকস্মাৎ তাদের পাকড়াও করলেন—ফলস্বরূপ তারা গভীর হতাশাগ্রস্ত হলো। (সূরা আনআম: ৪৪)
ভূমিকম্পসহ যেকোনো প্রাকৃতিক বিপর্যয়কে তাই আমাদের কর্মফল হিসেবেই বিবেচনা করা উচিত। দুর্যোগকালে আল্লাহর কাছে পরিত্রাণ চাওয়ার পাশাপাশি সর্বদা পাপাচার থেকে বিরত থাকা তাই বাঞ্ছনীয়।
২. ভূকম্পনের সময় ফকিহ সমাজের নির্দেশিত আমল
ভূমিকম্পের সময় পাঠ করার জন্য নির্দিষ্ট কোনো দোয়া সহীহ হাদিসে বর্ণিত না হলেও, ফকিহ সমাজ এবং হাদিসের আলোকে কিছু বিশেষ আমল ও সদকার প্রতি জোর দিয়েছেন:
নফল নামাজ: এই সময়ে বান্দাদের উচিত আল্লাহর কাছে ক্ষমা ও আশ্রয় চেয়ে বেশি বেশি নফল সালাত আদায় করা।
দান ও সদকা: হাদিসে এসেছে— দান-সদকা সমস্ত বিপদ-আপদ দূর করে। (সহীহ বুখারি)। তাই এই সময় দান-সদকা করার কথা বলেছেন অনেক উলামা।
দয়া প্রদর্শন: রাসূলুল্লাহ (সা.) নির্দেশ দিয়েছেন, "যে ব্যক্তি দুনিয়াবাসীর প্রতি দয়া প্রদর্শন করে, আসমানওয়ালা (আল্লাহতায়ালা) তার প্রতি দয়া করেন।" (তিরমিযি)। অন্যের প্রতি সদয় হওয়াও আল্লাহর দয়া প্রাপ্তির অন্যতম পথ।
উল্লেখ্য, খলিফা ওমর বিন আব্দুল আযিয (রা.) এই দুর্যোগের সময় অধীনস্থ আমীরদের চিঠি লিখে বেশি বেশি দান-সদকা করার নির্দেশ দিতেন।
৩. যেকোনো বিপদের জন্য বিশ্বনবীর (সা.) শেখানো দোয়া ইউনুস
যেকোনো সংকটময় ও অস্থিতিশীল পরিস্থিতিতে পাঠের জন্য দোয়া ইউনুস খুবই গুরুত্বপূর্ণ এবং এটি পাঠ করা সুন্নত। আল্লাহর নবী ইউনুস (আ.) চরম বিপদে বারবার এই দোয়া পড়েছিলেন এবং আল্লাহ তাঁকে সেই সংকট থেকে মুক্তি দিয়েছিলেন।
বিপদের সময় দোয়া ইউনুস:
আরবি: لَا إِلَهَ إِلَّا أَنْتَ سُبْحَانَكَ، إِنِّي كُنْتُ مِنَ الظَّالِمِينَ
উচ্চারণ: লা ইলাহা ইল্লা আনতা সুবহানাকা ইন্নি কুনতু মিনাজ জ-লিমিন।
অর্থ: তুমি ছাড়া কোনো মাবুদ নেই, তুমি পবিত্র সুমহান। আমি নিশ্চয়ই জালিমদের দলভুক্ত।
৪. নেতার দায়িত্ব ও তাকওয়ার গুরুত্ব
ভূমিকম্পসহ যেকোনো বিপদ থেকে জনপদকে রক্ষা করার জন্য কেবল সাধারণ মানুষ নয়, নেতৃস্থানীয়দেরও সুনির্দিষ্ট করণীয় আছে।
নেতৃত্বশীলদের উচিত: অধীনদের সত্য ও সঠিক পথে চলার আদেশ দেওয়া, নিজ এলাকায় আল্লাহর আইন প্রতিষ্ঠা করা এবং সৎকাজের আদেশ ও অসৎ কাজে নিষেধ করা। আল্লাহতায়ালা এই আমলকারীদের প্রতিই করুণা বর্ষণ করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন:
"আর বিশ্বাসী পুরুষরা ও বিশ্বাসী নারীরা হচ্ছে পরস্পর একে অন্যের বন্ধু, তারা সৎকাজের আদেশ দেয় এবং অসৎ কাজে নিষেধ করে...। এসব লোকের প্রতিই আল্লাহ অতিসত্বর করুণা বর্ষণ করবেন।" (সূরা তাওবা: ৭১)
প্রকৃতপক্ষে, আল্লাহর ভয় (তাকওয়া)-ই হলো সর্বশ্রেষ্ঠ নিষ্কৃতির পথ। আল্লাহতায়ালা ঘোষণা করেন, "আর যে কেউ আল্লাহকে ভয় করবে, আল্লাহ তার নিষ্কৃতির পথ করে দেবেন।" (সূরা তালাক: ২)।
৫. ভয়ঙ্কর ভূমিকম্পের পূর্বাভাস: রাসূল (সা.)-এর সতর্কবাণী
রাসূলুল্লাহ (সা.) এমন এক সময়ের আগাম সতর্কবাণী দিয়েছেন, যখন সমাজে ব্যাপক নৈতিক ও ধর্মীয় স্খলন দেখা দেবে। তিনি বলেছেন, যখন সমাজে অবৈধ উপায়ে সম্পদ অর্জন, খেয়ানত, জাকাতকে জরিমানা হিসেবে দেখা, ধর্মীয় শিক্ষা ছাড়া বিদ্যা অর্জন, স্ত্রীর আনুগত্যে মায়ের সঙ্গে খারাপ ব্যবহার, বন্ধুর প্রাধান্য ও পিতার দূরত্ব, মসজিদে উচ্চস্বরে শোরগোল, দুর্বল ব্যক্তির শাসন, নিকৃষ্ট ব্যক্তির নেতৃত্ব, খারাপ কাজের মাধ্যমে খ্যাতি অর্জন, বাদ্যযন্ত্র ও নারী শিল্পীর প্রচলন, মদপান এবং পূর্ববর্তী মানুষজনকে অভিশাপ দেওয়া—ইত্যাদি চলতে থাকবে, তখন তীব্র বাতাস প্রবাহিত হবে এবং এমন একটি ভূমিকম্প হবে যা সেই ভূমিকে তলিয়ে দেবে। (তিরমিজি, হাদিস নং-১৪৪৭)।
সুতরাং, যেহেতু এই ধরনের ভয়াবহ দুর্যোগ নিবারণ, প্রতিরোধ বা পূর্বাভাস পাওয়ার প্রযুক্তি আজও মানুষের আয়ত্তে আসেনি, তাই এর ভয়াবহতা থেকে বাঁচতে একমাত্র উপায় হলো—আল্লাহর কাছে বিনম্র ক্ষমা ও আশ্রয় প্রার্থনা করা।
আল-মামুন/
পাঠকের মতামত:
আপনার জন্য বাছাই করা কিছু নিউজ
- বাংলাদেশ জাতীয় ক্রিকেট দল বনাম আয়ারল্যান্ড ক্রিকেট দল ম্যাচের স্কোরকার্ড
- বাংলাদেশ বনাম আয়ারল্যান্ড দ্বিতীয় টেস্ট: দ্বিতীয় দিন শেষে চালকের আসনে বাংলাদেশ
- বাংলাদেশ বনাম আয়ারল্যান্ড দ্বিতীয় টেস্ট: সেয়ানে সেয়ানে লড়াই, দেখে নিন স্কোর
- ভয়াবহ ভূমিকম্পে ঢাকাসহ কেঁপে উঠল সারাদেশ
- বাংলাদেশের পরবর্তী ফুটবল ম্যাচ কবে
- বিএনপি অভ্যন্তরীণ কোন্দল: যেসব আসনে পরিবর্তন হচ্ছে প্রার্থী
- বাংলাদেশ বনাম আয়ারল্যান্ড: বোলিংয়ে বাংলাদেশ, খেলাটি সরাসর দেখুন Live
- বাংলাদেশ বনাম আয়ারল্যান্ড ২য় টেস্ট: মুশফিকের 'নট আউট' ৯৯! দেখেনিন সংক্ষিপ্ত স্কোর
- বাংলাদেশ বনাম আয়ারল্যান্ড দ্বিতীয় টেস্ট: ব্যাটিংয়ে বাংলাদেশ, সরাসরি দেখুন Live
- শেখ হাসিনার রায় নিয়ে অবশেষে মুখ খুললেন রুমিন ফারহানা
- বাংলাদেশ বনাম শ্রীলঙ্কা: শ্বাসরুদ্ধকর লড়াইয়ে শেষ হলো ম্যাচ, জানুন ফলাফল
- বাংলাদেশ বনাম শ্রীলঙ্কা: খেলাটি সরাসরি দেখুন Live
- বিশ্ব বাজারে আবারও বাড়লো সোনার দাম
- ব্রাজিলের পরবর্তী ম্যাচ কবে
- বিনিয়োগকারীদের মুখের হাঁসি কেড়ে নিল ৮ কোম্পানির শেয়ার