ঢাকা, শুক্রবার, ২৮ নভেম্বর ২০২৫, ১৪ অগ্রহায়ণ ১৪৩২

MD. Razib Ali

Senior Reporter

পাকিস্তানের সাবেক প্রধানমন্ত্রীর 'জীবিত থাকার প্রমাণ নেই'!

বিশ্ব ডেস্ক . ২৪আপডেটনিউজ
২০২৫ নভেম্বর ২৮ ১৫:০০:০৪
পাকিস্তানের সাবেক প্রধানমন্ত্রীর 'জীবিত থাকার প্রমাণ নেই'!

পাকিস্তানের সাবেক প্রধানমন্ত্রী এবং তেহরিক-ই-ইনসাফ (পিটিআই) চেয়ারম্যান ইমরান খানের শারীরিক অবস্থা ও তার বর্তমান বন্দিদশা নিয়ে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন তার ছেলে কাসিম খান। তিনি অত্যন্ত মারাত্মক অভিযোগ উত্থাপন করে বলেছেন, তার বাবার ‘জীবিত থাকার কোনো নিশ্চয়তা বা প্রমাণ’ তারা পাচ্ছেন না। অন্যদিকে, এসব অভিযোগকে ‘ভিত্তিহীন’ আখ্যা দিয়ে দৃঢ়তার সঙ্গে খণ্ডন করেছে আদিয়ালা জেল কর্তৃপক্ষ।

পুত্রের উদ্বেগ: 'ইচ্ছাকৃতভাবে লুকানোর চেষ্টা'

কাসিম খান অভিযোগ করেছেন, তার বাবা দীর্ঘ ৮৪৫ দিন ধরে বন্দিদশায় রয়েছেন এবং গত ছয় সপ্তাহ ধরে তাকে একাকী একটি ‘ডেথ সেলে’ রাখা হয়েছে। পরিবার বা আদালতের স্পষ্ট নির্দেশ থাকা সত্ত্বেও জেল কর্তৃপক্ষ কাউকে সাক্ষাতের সুযোগ দিচ্ছে না।

তিনি লেখেন, "এই পুরো অন্ধকার পরিস্থিতি কোনো নিরাপত্তা ব্যবস্থা নয়। এটি ইচ্ছাকৃতভাবে তার অবস্থা গোপন করার চেষ্টা।" কাসিম খানের দাবি, বাবার বোনদেরও প্রবেশের অনুমতি দেওয়া হচ্ছে না এবং তিনি ও তার ভাইয়েরা বাবার সঙ্গে 'কোনো যোগাযোগ' করতে পারছেন না। তিনি সরকার এবং ‘তার হ্যান্ডলারদের’ জবাবদিহিতার জন্য সতর্ক করেছেন।

কাসিম খান আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থাগুলির কাছে অবিলম্বে হস্তক্ষেপের আর্জি জানিয়ে বলেছেন, পাকিস্তানের ‘সবচেয়ে জনপ্রিয় রাজনৈতিক নেতাকে’ যে ‘অমানবিক বিচ্ছিন্নতায়’ রাখা হয়েছে, তা অবিলম্বে বন্ধ করতে হবে এবং দ্রুত তার জীবিত থাকার প্রমাণ সরবরাহ করতে হবে।

তীব্র সেন্সরশিপের দাবি ও হিটলারের সময়ের সঙ্গে তুলনা

ইমরান খানের বোন নুরিন নিয়াজি এএনআই-কে জানিয়েছেন, পাকিস্তানে বর্তমানে 'ভয়াবহ বাধানিষেধ' (সেন্সরশিপ) বলবৎ রয়েছে। তিনি বলেন, সাংবাদিকদের ও সংবাদমাধ্যম মালিকদের গ্রেফতার করা হচ্ছে এবং ভয় দেখানো হচ্ছে। তার অভিযোগ, গণমাধ্যমের ওপর এত কঠোর চাপ দেওয়া হয় যে ছাড়া পাওয়ার পর তারা আর মুখ খুলতে পারেন না।

তিনি আরও উল্লেখ করেন, পরিচিত কিছু সাংবাদিক দেশ ছেড়ে পালিয়ে যেতে বাধ্য হয়েছেন, অথচ তাদের পাসপোর্ট ও সম্পত্তি আটকে রাখা হয়েছে। নুরিন নিয়াজির ভাষায়, বর্তমান পরিস্থিতি ‘হিটলারের সময়ের কথা’ মনে করিয়ে দেয়।

তিনি শাহবাজ শরিফের নেতৃত্বাধীন সরকারের বিরুদ্ধেও একাধিক অভিযোগ আনেন। তার মতে, সরকার ‘একেবারেই জনপ্রিয় নয়,’ নির্বাচন হয়েছে ‘প্রতারণার মাধ্যমে,’ এবং সরকার দুর্বল ও দমনমূলক। তবে তিনি মনে করেন, পশ্চিমা রাষ্ট্রগুলো পাকিস্তানের ‘প্রতারণা’ সম্পর্কে ওয়াকিবহাল হওয়া সত্ত্বেও কোনো পদক্ষেপ নেবে না।

পিটিআই-এর প্রতিবাদ: মুখ্যমন্ত্রীর ধর্ণা

পিটিআই নেতৃত্বও চলমান পরিস্থিতির বিরুদ্ধে সরব। খাইবার পাখতুনখোয়ার মুখ্যমন্ত্রী সোহাইল আফ্রিদি টানা অষ্টমবার ইমরান খানের সঙ্গে দেখা করার সুযোগ পাননি। গত ২৭ নভেম্বর তিনি আদিয়ালা জেলের কাছে ধর্ণায় বসলে পুলিশ তাকে ও পিটিআই কর্মীদের জেল ফটকে পৌঁছাতে দেয়নি।

আফ্রিদি প্রশ্ন তোলেন, কেন আদালতের আদেশ লঙ্ঘন করা হচ্ছে এবং ‘২.৫ কোটি মানুষের’ প্রতিনিধিকে আটকে রাখা হচ্ছে। তিনি অভিযোগ করেন, খানের বোন, আইনি প্রতিনিধি ও চিকিৎসকদেরও প্রবেশ করতে দেওয়া হচ্ছে না।

একইভাবে, পিটিআই নেতা জুলফি বুখারি এবং মেহর বানো কুরেশি অবিলম্বে সরকারের কাছে খানের স্বাস্থ্যের বিষয়ে একটি পরিষ্কার ও স্বচ্ছ বিবৃতি দাবি করেছেন এবং পরিবারকে সাক্ষাতের অনুমতি দেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন।

জেল কর্তৃপক্ষের খণ্ডন: 'সম্পূর্ণ সুস্থ আছেন'

অন্যদিকে, আদিয়ালা জেল কর্তৃপক্ষ সমস্ত অভিযোগ দৃঢ়তার সঙ্গে খণ্ডন করেছে। তারা এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া খবর ‘ভিত্তিহীন’।

কর্তৃপক্ষ নিশ্চিত করেছে, ইমরান খান ‘সম্পূর্ণ সুস্থ’ আছেন এবং তাকে অন্য কোথাও সরিয়ে নেওয়া হয়নি। তাদের দাবি, কোনো জরুরি চিকিৎসা বা বিপজ্জনক পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়নি।

বোনদের ওপর 'নৃশংস' হামলার অভিযোগ ও জেলের নিয়ন্ত্রণ বিতর্ক

সম্প্রতি অনলাইনে কয়েকটি বিদেশি সোশ্যাল মিডিয়া অ্যাকাউন্ট থেকে ইমরান খানের কারাগারে মৃত্যুর গুজব ছড়ালেও, কোনো নির্ভরযোগ্য সংস্থা তা নিশ্চিত করেনি।

তবে পরিস্থিতি আরও ঘোলাটে হয় যখন খানের তিন বোন – নুরিন নিয়াজি, আলীমা খান ও ড. উজমা খান – অভিযোগ করেন যে জেলের বাইরে শান্তিপূর্ণ অবস্থানের সময় পুলিশ তাদের ওপর ‘নিষ্ঠুর ও পূর্বপরিকল্পিত’ হামলা চালায়। তারা বলেন, পুলিশ স্ট্রিটলাইট নিভিয়ে তাদের টেনে-হিঁচড়ে সরিয়ে দেয় এবং নুরিন নিয়াজিকে চুল ধরে টেনে নামানো হয়, এতে তিনি আহত হন। তারা জানান, এক মাসেরও বেশি সময় ধরে তারা ভাইয়ের সঙ্গে দেখা করতে পারেননি।

উল্লেখ্য, আদিয়ালা জেল পাঞ্জাব সরকারের অধীনে, যার মুখ্যমন্ত্রী মরিয়ম নওয়াজ। তবে তিনি বলেছেন, খানের সাক্ষাৎ-সংক্রান্ত বিষয়ে তার ‘কোনো নিয়ন্ত্রণ নেই।’ অন্যদিকে, ইমরান খান এর আগে দাবি করেছিলেন, জেলের সমস্ত বিষয় একজন সেনা কর্নেল নিয়ন্ত্রণ করছেন।

আল-মামুন/

পাঠকের মতামত:

আপনার জন্য বাছাই করা কিছু নিউজ

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ