ঢাকা, রবিবার, ১৮ মে ২০২৫, ৪ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২

ভিসা বন্ধের তালিকায় নতুন নাম, বাংলাদেশিদের জন্য বড় ধাক্কা

প্রবাসী ডেস্ক . ২৪আপডেটনিউজ
২০২৫ মে ১৮ ১২:৩৩:১১
ভিসা বন্ধের তালিকায় নতুন নাম, বাংলাদেশিদের জন্য বড় ধাক্কা

নিজস্ব প্রতিবেদক: বাংলাদেশি পাসপোর্ট হাতে যাঁরা শুধুই ঘুরতে চান, তাঁদের জন্য বিশ্বজুড়ে এখন এক অদৃশ্য দেয়াল। ট্যুরিস্ট ভিসার আবেদন মানেই এখন জিজ্ঞাসাবাদ, ভিডিও কলে অফিস প্রমাণ, অসংখ্য কাগজপত্র—তাও শেষ পর্যন্ত না পাওয়ার শঙ্কা থেকেই যায়।

সর্বশেষ ধাক্কাটা এসেছে ভিয়েতনাম থেকে। কোনো রকম পূর্ব ঘোষণা ছাড়াই বাংলাদেশি নাগরিকদের জন্য ট্যুরিস্ট ভিসা বন্ধ করে দিয়েছে দেশটি। এর আগে তুরস্ক, সিঙ্গাপুর, কম্বোডিয়া, সংযুক্ত আরব আমিরাত, এমনকি মধ্য এশিয়ার কয়েকটি দেশও একই পথে হেঁটেছে।

অন্যের অপরাধে শাস্তি কেন?

ঢাকার এক বিজ্ঞাপনী সংস্থায় কাজ করেন জুনায়েদ। প্রতিবার ছুটি পেলেই পাসপোর্টে নতুন সিল বসানোর পরিকল্পনা করেন। এখন সে পরিকল্পনায় বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে সন্দেহ।

“ভিসার জন্য এখন প্রমাণ করতে হয়, আমি ভ্রমণ করতে চাই—পালাতে নয়,” বলেন তিনি। “ভিডিও কলে অফিস দেখাতে হয়, স্যালারি স্লিপ জমা দিতে হয়, এমনকি ব্যক্তিগত ভ্রমণ পরিকল্পনাও ব্যাখ্যা করতে হয়।”

‘ওভার স্টে’ যেন ভ্রমণশিল্পের কালো দাগ

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, পর্যটনের নামে বিদেশে গিয়ে ওভার স্টে করে থাকা কিংবা অবৈধভাবে কাজ শুরু করার প্রবণতা বাংলাদেশিদের জন্য একটি বড় বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে।

আটাবের সাধারণ সম্পাদক আফসিয়া জান্নাত সালেহ বলছেন, “ভ্রমণের নামে আদম পাচার হচ্ছে। যারা আর ফিরে আসছে না, তাদের কারণেই বিদেশি দূতাবাসগুলো আমাদের ওপর আস্থা হারাচ্ছে।”

টোয়াবের পরিচালক তাসনিম আমিন শোভন এর সঙ্গে একমত। “একজনের কারণে শতজন ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন। এটা খুবই দুঃখজনক,” বলেন তিনি।

মূল সমস্যায় আঙুল রাখলেন গবেষক

রিফিউজি অ্যান্ড মাইগ্রেটরি মুভমেন্ট রিসার্চ ইউনিট (রামরু)-এর নির্বাহী পরিচালক সি আর আবরার মনে করেন, সমস্যার শিকড়ে যেতে হবে।“কারা পাঠাচ্ছে, কীভাবে পাঠাচ্ছে, আর কোথায় গিয়ে তারা থেমে যাচ্ছে—এসব বিশ্লেষণ না করলে আমরা শুধু উপসর্গ নিয়েই লড়াই করব, রোগটা থেকে যাবে,” বলেন তিনি।

তিনি আরও বলেন, “সরকারের উচিত গবেষকদের সঙ্গে যৌথভাবে কাজ করে তথ্যভিত্তিক নীতিমালা তৈরি করা, যাতে প্রকৃত ভ্রমণকারীরা বঞ্চিত না হন।”

ভবিষ্যৎ আরও কঠিন হতে পারে

ভিসা বন্ধের এই প্রবণতা অব্যাহত থাকলে তালিকায় যুক্ত হতে পারে আরও বহু দেশ। তখন চাইলেও ঘুরতে যাওয়া কঠিন হয়ে উঠবে। তাই সময় থাকতেই দরকার রাষ্ট্র, পর্যটন ব্যবসায়ী এবং সচেতন নাগরিকদের মধ্যে একটি সমন্বিত উদ্যোগ।

সবাই যদি সৎ থাকত, তাহলে হয়তো এম্বাসিতে প্রমাণ নিয়ে হাজির হতে হতো না। পাসপোর্ট থাকলেই হয়ে যেত পথচলা। এখন অন্যের ভুলের বোঝা বইতে হচ্ছে সৎ ভ্রমণপিপাসুদের—এ যেন গন্তব্যের আগেই রুখে দাঁড়ানো অদৃশ্য এক ইমিগ্রেশন অফিসার।

FAQ (প্রশ্নোত্তর):

প্রশ্ন ১: কেন কিছু দেশ বাংলাদেশিদের ট্যুরিস্ট ভিসা বন্ধ করছে?

উত্তর: অনেক দেশ পর্যটনের নামে বাংলাদেশিরা বিদেশে গিয়ে ভিসার মেয়াদ না মেনে অবস্থান করছেন বা অনিয়ম করছেন, যার ফলে ভিসা নিষেধাজ্ঞা বাড়ছে।

প্রশ্ন ২: কোন কোন দেশ বাংলাদেশিদের ভিসা দিতে বাধা দিচ্ছে?

উত্তর: সম্প্রতি ভিয়েতনামসহ তুরস্ক, সিঙ্গাপুর, সংযুক্ত আরব আমিরাত, কম্বোডিয়া ও মধ্য এশিয়ার কয়েকটি দেশ বাংলাদেশিদের ট্যুরিস্ট ভিসা কঠোর করছে বা বন্ধ করেছে।

প্রশ্ন ৩: এই সমস্যা থেকে সৎ পর্যটকরা কীভাবে বাঁচতে পারেন?

উত্তর: সরকার, ট্যুর অপারেটর ও নাগরিকদের সম্মিলিত উদ্যোগ দরকার। সৎভাবেই ভ্রমণ পরিকল্পনা এবং নিয়ম মেনে চলা একমাত্র উপায়।

প্রশ্ন ৪: সরকারের কি কোনো ভূমিকা আছে এই সমস্যায়?

উত্তর: অবশ্যই, গবেষক ও সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে সমন্বয় করে তথ্যভিত্তিক নীতি প্রণয়নে সরকারকে এগিয়ে আসতে হবে।

জাকারিয়া ইসলাম/

আপনার জন্য বাছাই করা কিছু নিউজ