ঢাকা, শনিবার, ৩১ মে ২০২৫, ১৬ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২

কোরবানিতে ভাগ হতে চাইলে মানতে হবে ৭টি গুরুত্বপূর্ণ নিয়ম

২০২৫ মে ২৭ ১২:৩৫:২৫
কোরবানিতে ভাগ হতে চাইলে মানতে হবে ৭টি গুরুত্বপূর্ণ নিয়ম

নিজস্ব প্রতিবেদক: ঈদুল আজহার অন্যতম তাৎপর্যপূর্ণ অনুষঙ্গ হলো কোরবানি। এই ইবাদতের মাধ্যমে মুসলমানরা হজরত ইবরাহিম (আ.)-এর আত্মত্যাগের মহিমা স্মরণ করেন এবং আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের আশায় পশু কোরবানি করে থাকেন। এই ইবাদতে যেমন হৃদয়ের খালেস নিয়তের গুরুত্ব রয়েছে, তেমনি রয়েছে শরিয়তের নির্ধারিত নিয়মকানুন। বিশেষ করে একাধিক ব্যক্তি মিলে কোরবানি করলে কিছু বিষয় বিশেষভাবে খেয়াল রাখা জরুরি।

এক পশুতে সাতজনেরও কোরবানি!

ইসলামে বড় পশু—যেমন গরু, মহিষ ও উট—একটি পশুতে সর্বোচ্চ সাতজন পর্যন্ত ভাগাভাগি করে কোরবানি দেওয়ার অনুমতি রয়েছে। এর পেছনে রয়েছে রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর সুস্পষ্ট নির্দেশনা। এক হাদিসে তিনি বলেন, "গাভি ও উট সাত ব্যক্তির পক্ষ থেকে কোরবানি করা যাবে।" (আবু দাউদ: ২৭৯৯) সাহাবিরাও এই নিয়ম মেনে চলেছেন। হজরত জাবের (রা.) বলেন, “আমরা রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর সঙ্গে হজ করেছিলাম। তখন আমরা সাতজন মিলে একটি উট ও একটি গরু কোরবানি করি।” (সহিহ মুসলিম)

ছোট পশুতে ভাগাভাগির সুযোগ নেই

ছাগল, ভেড়া কিংবা দুম্বার মতো ছোট পশু কেবল একজনই কোরবানি দিতে পারবেন। এই পশুতে শরিকি কোরবানি শরিয়তসম্মত নয়। একাধিক ব্যক্তি ভাগ করে এসব পশু কোরবানি করলে তা গ্রহণযোগ্য হবে না।

কোরবানি কেবল আল্লাহর জন্য—নিয়তেই হতে হবে খাঁটি

কোরবানি মানেই খাঁটি নিয়ত। কেউ যদি কেবল মাংস পাওয়ার উদ্দেশ্যে শরিক হয়, তাহলে তার কোরবানি হবে না, বরং সেই শরিকির কারণে পুরো কোরবানি বাতিল হয়ে যেতে পারে। একইভাবে কোনো অমুসলিম যদি ভাগ নেয়, তাহলে পুরো কোরবানিই অগ্রহণযোগ্য হবে। কারণ কোরবানি শুধুই ইবাদত, যার উদ্দেশ্য হতে হবে একমাত্র আল্লাহর সন্তুষ্টি।

অংশ যেন হয় পরিপূর্ণ

গরু, মহিষ বা উটের শরিকি কোরবানিতে অংশীদারের ভাগ যেন এক-সপ্তমাংশের কম না হয়, তা নিশ্চিত করা অত্যন্ত জরুরি। কেউ কম অংশ নিলে কারো কোরবানিই সহিহ হবে না। সাতজনের বেশি হলে সেই কোরবানি পুরোপুরি বাতিল বলে গণ্য হবে। তবে কম হলেও সমস্যা নেই—যেমন দুই, তিন বা পাঁচজন মিলেও কোরবানি দেওয়া যায়।

গরিব ও ধনীর শরিকি সিদ্ধান্তে পার্থক্য

যদি কোনো ধনী ব্যক্তি একা কোরবানি করার জন্য পশু কেনেন এবং পরে কেউ তাতে শরিক হতে চান, তবে শরিয়ত তা অনুমতি দেয়। শরিক হলে তাঁর অংশের সমমূল্য সদকা করে দেওয়া উত্তম। কিন্তু গরিব ব্যক্তি—যার ওপর কোরবানি ফরজ নয়—যদি একা পশু কেনেন এবং পরে কেউ তাতে শরিক হয়, তাহলে তা বৈধ হবে না। সেই শরিকের অংশের মূল্য সদকা করে দিতে হবে। তবে যদি শুরু থেকেই ভাগ করে কেনার নিয়ত থাকে, তাহলে তা শরিয়তসম্মত হবে।

মাংস বণ্টনে ওজনের গুরুত্ব

কোরবানির পর মাংস বণ্টনের সময় ওজন করে সমানভাবে ভাগ করাটা বাধ্যতামূলক। অনুমান করে বা চোখের আন্দাজে ভাগ করলে শরিয়তসম্মত হয় না। প্রতিটি শরিক যেন সমান অংশ পান, তা নিশ্চিত করা ইবাদতেরই অংশ।

কোরবানি শুধুই পশু জবাই নয়—এটি আত্মত্যাগ, খালেস নিয়ত এবং আল্লাহর প্রতি ভালোবাসা প্রকাশের ইবাদত। একাধিক ব্যক্তি মিলে কোরবানি করার সুযোগ ইসলাম দিয়েছে বটে, তবে সেখানে রয়েছে কিছু সূক্ষ্ম ও গুরুত্বপূর্ণ শর্ত। এগুলো না মানলে, ত্যাগের এই ইবাদত নিষ্ফল হয়ে যেতে পারে। তাই ভাগে কোরবানি করতে হলে যেন আমরা শরিয়তের সব নিয়ম মেনে, সতর্কতার সঙ্গে এবং খাঁটি নিয়তে কোরবানি দেই—এই হোক আমাদের প্রতিজ্ঞা।

মো: রাজিব আলী/

আপনার জন্য বাছাই করা কিছু নিউজ