ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১১ ডিসেম্বর ২০২৫, ২৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩২

MD. Razib Ali

Senior Reporter

বর্গা জমিতে ওশর: মালিক ও চাষীর যাকাত, জানুন সঠিক নিয়ম: আব্দুর রাজ্জাক বিন ইউসুফ

ধর্ম ডেস্ক . ২৪আপডেটনিউজ
২০২৫ ডিসেম্বর ১০ ১০:৪৫:১৩
বর্গা জমিতে ওশর: মালিক ও চাষীর যাকাত, জানুন সঠিক নিয়ম: আব্দুর রাজ্জাক বিন ইউসুফ

বর্গা (ভাগ-চাষ) জমিতে উৎপাদিত ফসলের ওশর (যাকাত): মালিক ও বর্গাচাষী কে কতটুকু দেবে? স্পষ্ট করলেন আব্দুর রাজ্জাক বিন ইউসুফ

এই গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্নের জবাব দিয়েছেন আব্দুর রাজ্জাক বিন ইউসুফ। সমাজের একটি বহুল প্রচলিত ও গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো বর্গা (ভাগ-চাষ) ভিত্তিতে জমি চাষ এবং তার উৎপাদিত ফসলের উপর ওশর (কৃষি যাকাত) প্রদানের নিয়ম। আল-ইতিসাম টিভিতে বগুড়ার কাহালু থানার নাদিরুজ্জামান জানতে চেয়েছিলেন, বর্গা নেওয়া জমি থেকে উৎপন্ন ফসলের ওশর কীভাবে দিতে হবে?

আব্দুর রাজ্জাক বিন ইউসুফ এই সামাজিক ও অর্থনৈতিকভাবে তাৎপর্যপূর্ণ বিষয়ের শরীয়তসম্মত সমাধান প্রদান করেন, যা কোরআন ও সহীহ সুন্নাহর আলোকে প্রতিষ্ঠিত।

ভাগ-চাষের (বর্গার) বৈধতা ও ঐতিহাসিক ভিত্তি

তিনি বলেন, বর্গা বা ভাগ-চাষের ভিত্তিতে জমি চাষ করা বৈধ। রাসূলুল্লাহ (সা.) যখন খায়বার জয় করেন, তখন তিনি সেখানকার ইহুদিদের সাথে ভাগাভাগির ভিত্তিতে জমি চাষের চুক্তি করেছিলেন। চুক্তি অনুসারে, ইহুদিরা চাষ করবে এবং উৎপন্ন ফসলের অর্ধেক তারা রাসূল (সা.)-কে দেবে এবং অর্ধেক নিজেরা নেবে। এই ঘটনাটি প্রমাণ করে যে, ফসল ভাগ করে নেওয়া বা বর্গা প্রথা ইসলামে অনুমোদিত।

ওশর (কৃষি যাকাত) এর মূলনীতি ও নিসাব (ন্যূনতম পরিমাণ)

ওশর বা কৃষি যাকাত ওয়াজিব (বাধ্যতামূলক) হওয়ার জন্য ফসলের একটি নির্দিষ্ট পরিমাণ বা 'নিসাব' এ পৌঁছাতে হয়।

শস্যের নিসাব:

শস্যের নিসাব হলো পাঁচ ওয়াসাক (অশাক)।

বর্তমান হিসাবে, পাঁচ ওয়াসাক প্রায় ১৮ মন ৩০ কেজি শস্যের সমান।

শাইখ স্পষ্ট করেন, যখন কোনো ব্যক্তি তার জমিতে এই পরিমাণ শস্যের মালিক হয়ে যাবেন, তখনই তাকে ওশর প্রদান করতে হবে।

বর্গা জমিতে ওশর প্রদানের নিয়ম

বর্গা বা ভাগ-চাষের ক্ষেত্রে, ওশর বা যাকাত দিতে হবে উৎপাদিত ফসলের মালিককে—অর্থাৎ যার ভাগে নিসাব পরিমাণ শস্য পৌঁছাবে।

১. মালিক এবং বর্গাচাষী উভয়ের জন্য প্রযোজ্য: যেহেতু বর্গা চুক্তিতে শস্য ভাগাভাগি হয় (যেমন অর্ধেক মালিক এবং অর্ধেক বর্গাচাষী), তাই ফসল তোলার পর যার যার ভাগে নিসাব পরিমাণ শস্য (১৮ মন ৩০ কেজি) হবে, তাকেই তার অংশের উপর ওশর দিতে হবে।

২. ওশরের হার: ওশরের পরিমাণ নির্ভর করে শস্য উৎপাদনে ব্যবহৃত পানির উৎসের উপর:

* ১০ ভাগের এক ভাগ (১০%): যে শস্য উৎপাদনে তেমন কোনো খরচ বা পরিশ্রম (যেমন সেচ, সার) করতে হয় না (যেমন আকাশের বৃষ্টির পানি বা পুকুরের পানি বা ঠাকরি কালাইয়ের মতো ফসল), সেগুলোর ক্ষেত্রে ওশর দিতে হবে ১০ ভাগের এক ভাগ (দশ মোনে এক মন বা ২০ মোনে দুই মন)।

* ২০ ভাগের এক ভাগ (৫%): যে শস্য উৎপাদনে সেচ, সার বা অন্য কোনো কারণে পর্যাপ্ত পরিমাণে খরচ বা পরিশ্রম করতে হয়, সেগুলোর ক্ষেত্রে ওশর হবে ২০ ভাগের এক ভাগ (২০ মোনে এক মন)।

আব্দুর রাজ্জাক বিন ইউসুফ বুখারী শরীফের একটি হাদিস (হাদিস নং ১৪৮৩) উল্লেখ করে বিষয়টি পরিষ্কার করেন, যেখানে রাসূল (সা.) বলেছেন: "যেসব শস্য আকাশের পানিতে (বা প্রাকৃতিক উপায়ে) উৎপাদিত হয়, সেগুলোর ওশর হলো দশ ভাগের এক ভাগ (১০%)। আর যেসব শস্য সেচের মাধ্যমে (খরচের মাধ্যমে) উৎপাদিত হয়, সেগুলোর ওশর হলো বিশ ভাগের এক ভাগ (৫%)।"

সিদ্ধান্ত:

বর্গা চুক্তির ক্ষেত্রে, জমির মালিক এবং চাষী—উভয়েরই যার যার প্রাপ্ত শস্যের পরিমাণ নিসাবে (১৮ মন ৩০ কেজি) পৌঁছালে, তাকে তার অংশের উপর উল্লিখিত নিয়ম অনুযায়ী (ব্যয় সাপেক্ষে ৫% অথবা ব্যয় না হলে ১০%) ওশর বা যাকাত দিতে হবে।

আব্দুর রাজ্জাক বিন ইউসুফ এর ভিডিওটি দেখতে এখানেক্লিক করুন।

আল-মামুন/

পাঠকের মতামত:

আপনার জন্য বাছাই করা কিছু নিউজ