এক ভাগের কুরবানিতে দুই ভাই শরিক, যা বললেন শায়খ আহমাদুল্লাহ

নিজস্ব প্রতিবেদক: আদি মানব আদম (আ.)-এর যুগেই যাত্রা শুরু কুরবানির। তাঁর দুই পুত্র হাবিল ও কাবিল প্রথমবারের মতো আল্লাহর সন্তুষ্টির উদ্দেশ্যে কুরবানি করেন। কারও কুরবানি কবুল হয়, কারওটা বাতিল। এখানেই ইঙ্গিত—ইবাদত শুধু কাজের পরিমাণে নয়, বরং নিয়ত ও পদ্ধতির বিশুদ্ধতায় নির্ধারিত হয়। তাই কুরবানির মতো পবিত্র ইবাদতে সামান্য ভুলও হতে পারে মারাত্মক।
ঈদুল আজহা সামনে রেখে কুরবানির নানা জটিল প্রশ্নে পথ দেখিয়েছেন জনপ্রিয় ইসলামি বক্তা ও আস-সুন্নাহ ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান শায়খ আহমাদুল্লাহ। সম্প্রতি ভাইরাল হওয়া এক আলোচনায় তিনি খোলাসা করেন—এক ভাগ কুরবানিতে একাধিক ব্যক্তি শরিক হলে সেই কুরবানি আদৌ কবুল হয় কি না।
দুই ভাই এক ভাগে কুরবানি—সেই কুরবানি কি কবুল?
অনেক সময় দেখা যায়, একটি গরুতে সাত ভাগের এক ভাগে দুই ভাই বা দুই বন্ধু শরিক হচ্ছেন। এতে খরচও বাঁচে, ভাবও থাকে। কিন্তু শরিয়তের দৃষ্টিতে? শায়খ আহমাদুল্লাহ বলেন, “এই ধরনের শরিকানা কুরবানি সহিহ হবে না। কারণ, এক ভাগে একাধিক ব্যক্তি শরিক হলে শরিয়ত তা মঞ্জুর করে না।”
তিনি হানাফি মাজহাবের একটি নির্ভরযোগ্য ফিকহগ্রন্থ আদদুররুল মুখতার (খণ্ড ৯, পৃষ্ঠা ৪৫৭)-এর ব্যাখ্যা দিয়ে বলেন, এক ভাগে একজনের বেশি হলে পুরো কুরবানিই বাতিল হয়ে যায়।
তাহলে সমাধান কী?
শায়খ আহমাদুল্লাহ এক চমৎকার সমাধান দেন—“যদি দুই ভাই মিলে এক ভাগের দাম দেন, তবে তাদের একজন অপরজনকে ‘গিফট’ স্বরূপ তার অংশ দিয়ে দিতে পারে। এরপর সেই ব্যক্তি একা মালিক হয়ে নিজের পক্ষ থেকে কুরবানি করলে, সেটি হবে সহিহ ও কবুলযোগ্য।”
এ পদ্ধতি বাস্তবিক অর্থে মালিকানা একক করে দেয়, ফলে শরিয়তের শর্ত পূরণ হয়। ইসলাম কখনোই কঠোরতা চায় না, বরং চায় সঠিক পথে সহজতা।
রাসুল (সা.) কী করেছেন?
কুরবানির শরিকানা পদ্ধতির উৎস কিন্তু রাসুল (সা.)-এর সময় থেকেই। হজরত জাবির (রা.)-এর বর্ণনায় আছে, “আমরা রাসুল (সা.)-এর সঙ্গে হজের ইহরাম বাঁধলাম। তিনি আমাদের উট ও গরুতে সাতজন করে শরিক হয়ে কুরবানি করার নির্দেশ দিলেন।” (সহিহ মুসলিম: ১৩১৮, ৩০৪৯)
এখানে বিশেষভাবে লক্ষ্যণীয়, সাত ভাগে সাতজন, অর্থাৎ প্রতি ভাগে একজন করে শরিক ছিলেন। কারও ভাগে দুইজন নয়। অতএব, আজও এই নিয়মেই কুরবানি করতে হবে।
পরিবারের সবাই এক কুরবানিতে অংশ নিতে পারবে?
অনেকেই ভাবেন, একান্নবর্তী পরিবারে একটি কুরবানি করলেই বুঝি পুরো পরিবারের পক্ষ থেকে আদায় হয়ে গেল। কিন্তু বাস্তবতা ভিন্ন। শায়খ আহমাদুল্লাহ বলেন, “পরিবারের যতজনের ওপর কুরবানি ওয়াজিব হবে, তাদের প্রত্যেককেই কুরবানি করতে হবে। একটি পশু দিয়ে সবার দায়মুক্তি হয় না।”
অর্থাৎ যদি পরিবারের একাধিক সদস্য নেসাব পরিমাণ সম্পদের মালিক হন, তবে প্রত্যেকের পক্ষে আলাদা কুরবানি দিতে হবে, কিংবা বড় পশুতে পৃথক পৃথক অংশ নিতে হবে।
কাদের ওপর কুরবানি ওয়াজিব?
প্রাপ্তবয়স্ক, সুস্থ মস্তিষ্কসম্পন্ন মুসলমান নর-নারী—যারা ১০ জিলহজ ফজর থেকে ১২ জিলহজ সূর্যাস্ত পর্যন্ত সময়ে প্রয়োজনের অতিরিক্ত নেসাব পরিমাণ সম্পদের মালিক হবেন, তাদের ওপর কুরবানি ওয়াজিব।
নেসাব নির্ধারণে হিসাবযোগ্য সম্পদগুলো হলো:
নগদ অর্থ
সোনা, রুপা ও অলংকার
প্রয়োজনের অতিরিক্ত জমি
ব্যবসার পণ্য
ব্যবহার অপ্রয়োজনীয় আসবাবপত্র
এই সম্পদ যদি প্রাথমিক প্রয়োজন মিটিয়ে হাতে থাকে, তাহলেই কুরবানির ওয়াজিবতা আসবে।
কুরবানি কোনো সামাজিক উৎসব নয়—এটা একান্তভাবে ইবাদত, আত্মত্যাগের নাম। সেখানে একটু অবহেলাও ইবাদত বাতিল করে দিতে পারে। এক ভাগে দুইজনের শরিকি কুরবানি হয়তো দেখতে সহজ, কিন্তু ধর্মীয় দৃষ্টিকোণ থেকে তা মারাত্মক ভুল। শায়খ আহমাদুল্লাহর ব্যাখ্যা আমাদের সেই ভুল সংশোধনের দিকেই আহ্বান জানায়—যাতে আমাদের কুরবানি কবুল হয় মহান আল্লাহর দরবারে।
মো: রাজিব আলী/
আপনার জন্য বাছাই করা কিছু নিউজ
- আজ এক ভরি ২৪ ক্যারেট সোনার দাম ১,১১,৮১৬ টাকা!
- ঈদের আগে সোনার বাজারে স্বস্তি, আসলো নতুন সিদ্ধান্ত
- আইপিএল শেষে দুঃসংবাদ দিলেন মুস্তাফিজ
- ছক্কার বদলে এক রান, আম্পায়ারকে একহাত নিলেন প্রীতি
- বাংলাদেশে আজকের সোনা বাজার মূল্য: ১৮, ২১ ও ২২ ক্যারেট সোনা ও রুপার দাম
- পুঁজিবাজারে বড় সাত সিদ্ধান্ত: ডেরিভেটিভ লেনদেনের যুগে প্রবেশ, কমল বিও হিসাব ফি
- রুদ্ধদ্বার বৈঠকে সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেছেন ড. ইউনূস
- সারাদেশে অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ সোনার দোকান
- ঈদের আগে শিক্ষকদের মুখে হাসি, সুখবর দিল অর্থ মন্ত্রণালয়
- ডিএসই-ডিবিএ বৈঠকে পুঁজিবাজার চাঙ্গা করতে যুগান্তকারী প্রস্তাবনা
- আইপিএলে সাকিবকে ছাড়িয়ে শীর্ষে মুস্তাফিজ, স্টার্কও পিছনে
- মহার্ঘ ভাতার পাশাপাশি চাকরিজীবীদের দু:সংবাদ দিল অর্থ উপদেষ্টা
- বাংলাদেশ-পাকিস্তান: শেষদিকে হঠাৎ বিপর্যয়, বদলে গেল ম্যাচ
- শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত ১৪টি কোম্পানি লাইসেন্স বাতিলেরউদ্যোগ
- সৌদি আরব ও বাংলাদেশে ঈদুল আজহার সম্ভাব্য তারিখ ঘোষণা