ঢাকা, শুক্রবার, ৬ জুন ২০২৫, ২৩ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২

বাংলা ছবিতে বাস্তব ঘনিষ্ঠতা? দেখুন এই ৬ বিতর্কিত সিনেমা

বিনোদন ডেস্ক . ২৪আপডেটনিউজ
২০২৫ জুন ০৫ ১৯:১৩:৩৪
বাংলা ছবিতে বাস্তব ঘনিষ্ঠতা? দেখুন এই ৬ বিতর্কিত সিনেমা

যেখানে অভিনয়ের সীমা ছাড়িয়ে গেছে বাস্তব স্পর্শে—এই সিনেমাগুলো নিয়ে এখনো আলোচনা থামেনি।

নিজস্ব প্রতিবেদক: বাংলা সিনেমায় এমন কিছু অধ্যায় রয়েছে, যেখানে সাহসী দৃশ্য শুধু চমক নয়, বরং এক গভীর শিল্পভাবনা—একটি চরিত্র, একটি সমাজব্যবস্থা কিংবা একটি দার্শনিক প্রশ্নের প্রতিচ্ছবি। কোথাও ঘনিষ্ঠতা ছুঁয়ে গেছে শরীরের ভাষা, আবার কোথাও তা হয়ে উঠেছে আত্মার উন্মোচন। আজ আমরা ফিরে তাকাই এমন ছয়টি বাংলা সিনেমার দিকে, যেখানে পর্দার সাহস ছুঁয়ে গেছে বাস্তবের ধাক্কা, সৃষ্টি করেছে আলোড়ন, বিতর্ক, আবার প্রশ্নও।

১. ছত্রাক (২০১১): সাহস যেখানে নীরবতা ভেঙেছে

কান চলচ্চিত্র উৎসবে যাওয়া এই সিনেমা আলোচনায় উঠে আসে এক ‘ঘনিষ্ঠ দৃশ্য’ ঘিরে, যেখানে নায়িকা পাওলি দামকে দেখা যায় এমন এক বাস্তবতাধর্মী মুহূর্তে, যা বাংলা সিনেমার ইতিহাসে নজিরবিহীন। এটি শুধুই দৃশ্য নয়—এ যেন এক প্রতিবাদ, এক মনোজগৎের দরজা খুলে দেওয়ার চেষ্টা।

২. বেডরুম (২০১২): সম্পর্কের গভীরে সাহসের মুখোমুখি

মৈনাক ভৌমিকের এই সিনেমা আমাদের চেনা শহরের চেনা মানুষের গল্প বলে। কিন্তু গল্পের গভীরে ডুব দিলে দেখা মেলে সম্পর্কের টানাপোড়েন, মনস্তাত্ত্বিক জটিলতা, এবং কিছু মুহূর্ত—যেখানে পর্দা হয়ে ওঠে আয়না। পাওলি, পার্নো, আবির—তাঁদের অভিনয়ের চেয়েও আলোচনায় আসে সেই অনাবৃত বাস্তব, যা সিনেমাকে দিয়েছে এক নতুন মাত্রা।

৩. নাগরদোলা (২০০৫): নারীর নিঃশব্দ চিৎকার

রাজ মুখোপাধ্যায়ের পরিচালনায় রূপা গঙ্গোপাধ্যায়ের অনবদ্য সাহসী রূপায়ণে ফুটে উঠেছে এক নারীর মনের জটিল ভাষা। যৌনতা এখানে কৌতূহলের উপাদান নয়, বরং সমাজের চোখে লুকিয়ে থাকা একটি ট্যাবু—যা সিনেমা তুলে ধরেছে প্রশ্নের মতো।

৪. কসমিক সেক্স (২০১৪): আত্মা ও শরীরের মেলবন্ধন

নাম শুনেই কৌতূহল জাগে। এই সিনেমা যেন একধরনের আধ্যাত্মিক যাত্রা—যেখানে যৌনতা হয়ে ওঠে উপলব্ধি। পরিচালক অমিতাভ চক্রবর্তীর ক্যামেরা আমাদের নিয়ে যায় এক অন্তর্জগতে, যেখানে শরীর শুধু পাত্র নয়, দর্শনের মাধ্যম। রি’র সাহসী অভিনয় দর্শকের মনে ফেলে যায় প্রশ্নের দাগ।

৫. অন্তরমহল (২০০৫): ইতিহাসের ভেতরে আটকে থাকা শরীর

ঋতুপর্ণ ঘোষের নির্মাণে ঊনবিংশ শতকের অভিজাত সমাজ ও নারীর অবস্থান তুলে ধরা হয়েছে এক অনবদ্য সংবেদনশীলতায়। জ্যাকি শ্রফ, সোহা আলি খান, অভিষেক বচ্চনের অভিনয়ের পাশাপাশি, সাহসী কিছু দৃশ্যও উঠে আসে আলোচনায়। তবে সবকিছু ছাপিয়ে গল্পই হয়ে ওঠে কেন্দ্রবিন্দু—যেখানে সাহস ও সৌন্দর্য একসঙ্গে চলেছে।

৬. গান্ডু (২০১০): ভাঙচুরের এক সাহসী কবিতা

কিউ-এর এই অতি বিতর্কিত সিনেমা দেখে দর্শক কাঁপে, অনেকে হল থেকে উঠে যান, কেউবা একে বলেন ‘অ্যাংরি আর্ট’। নগ্নতা এখানে প্রতীক, শব্দ এখানে বিদ্রোহ, আর দৃশ্যগুলো যেন সমাজের গায়ে আঘাত। এ সিনেমা ভালোবাসা বা ঘৃণার বাইনারিতে বাঁধা যায় না। একে শুধু বোঝা যায় সাহস দিয়ে।

সাহস কি শুধুই নগ্নতা? নাকি এক ধরণের সত্য?

এই ছয়টি সিনেমা আমাদের ভাবায়—কোনটা অভিনয়, আর কোনটা শিল্পের দায়বদ্ধতা? সহবাসের দৃশ্য কি শুধুই দর্শক টানার কৌশল, নাকি চরিত্রের সত্তাকে উন্মোচনের জন্য দরকারি অস্ত্র? কখনো কখনো শিল্প যখন বাস্তবকে স্পর্শ করে, তখন সেটি আর কল্পনা থাকে না—তা হয়ে ওঠে আয়না। যে আয়নায় আমরা দেখি সমাজের মুখ, নিজের প্রশ্ন, আর কিছু অস্বস্তিকর সত্য।

বাংলা সিনেমা তাই শুধু সাহস দেখায়নি, সাহস দিয়েও চিন্তার জগতে আলোড়ন তুলেছে। এসব সিনেমা প্রমাণ করেছে, সাহসী দৃশ্যের পেছনেও থাকতে পারে এক গভীর বার্তা—যা অন্ধকারকে চেনায় নতুন আলোয়।

FAQ (প্রশ্ন ও উত্তর):

প্রশ্ন ১: সত্যিই কি বাংলা সিনেমায় সহবাসের দৃশ্য ছিল?

উত্তর: কিছু বাংলা সিনেমায় ঘনিষ্ঠ দৃশ্য এতটাই বাস্তব ছিল যে দর্শকদের মধ্যে এ নিয়ে বিতর্ক ও কৌতূহল তৈরি হয়। যেমন ‘ছত্রাক’ ও ‘গান্ডু’ সিনেমায় এ ধরনের বিতর্ক হয়েছে।

প্রশ্ন ২: এই দৃশ্যগুলো কি শুধুই চমক ছিল?

উত্তর: অনেক ক্ষেত্রেই না। পরিচালকরা সাহসী উপস্থাপনার মাধ্যমে শিল্প, দর্শন ও মনস্তত্ত্ব ফুটিয়ে তুলেছেন। ফলে দৃশ্যগুলো বিতর্কের পাশাপাশি বার্তাবাহীও ছিল।

প্রশ্ন ৩: কোন ৬টি সিনেমা সবচেয়ে আলোচিত ছিল?

উত্তর: ছত্রাক, বেডরুম, নাগরদোলা, কসমিক সেক্স, অন্তরমহল ও গান্ডু—এই ছয়টি সিনেমা ঘনিষ্ঠতার সাহসী প্রকাশে আলোচিত হয়।

তানিয়া বৃষ্টি/

আপনার জন্য বাছাই করা কিছু নিউজ