ঢাকা, শুক্রবার, ২৫ জুলাই ২০২৫, ১০ শ্রাবণ ১৪৩২

MD. Razib Ali

Senior Reporter

প্রশিক্ষণ বিমান দুর্ঘটনার পেছনে চাঞ্চল্যকর সত্য উন্মোচন

জাতীয় ডেস্ক . ২৪আপডেটনিউজ
২০২৫ জুলাই ২৫ ১৯:১৪:৫৩
প্রশিক্ষণ বিমান দুর্ঘটনার পেছনে চাঞ্চল্যকর সত্য উন্মোচন

নিজস্ব প্রতিবেদক: ঢাকার উপকণ্ঠের এক শান্ত আবাসিক এলাকায় সম্প্রতি ঘটে যাওয়া প্রশিক্ষণ বিমান দুর্ঘটনা দেশের সামরিক ইতিহাসে নতুন করে আলোড়ন সৃষ্টি করেছে। শুধু একটি দুর্ঘটনা নয়, এটি উঠে এনেছে এমন চাঞ্চল্যকর সত্য যা রাষ্ট্রীয় দুর্নীতি, অর্থলুট ও অব্যবস্থাপনার জটিল জালকে প্রকাশ্যে আনে।

দুপুরের রোদে হঠাৎ আকাশ থেকে আগুন ছিটকে পড়ে একটি স্কুলের ছাদে একটি প্রশিক্ষণ ফাইটার বিমান। ধোঁয়া, চিৎকার আর কান্নার মাঝে পড়ে ছিল একটি শিশুর খাতা, যেখানে লেখা ছিল—“আমি বড় হয়ে পাইলট হব।” এই স্বপ্নের খাতা ভাঙা বিমানের ডানায় আটকে থেকে মনে করিয়ে দেয়, এই দুর্ঘটনা শুধু একটি বিমানের পতন নয়, বরং একটি দীর্ঘদিনের দুর্নীতির চক্রের করুণ ফল।

দুর্নীতির ছায়ায় ফাইটার বিমান কেনার চুক্তি

সরকারি তথ্য অনুযায়ী নতুন প্রশিক্ষণ বিমান কেনার জন্য যথেষ্ট বাজেট নেই। কিন্তু প্রশ্ন ওঠে, কেন একজন শিক্ষানবিশ পাইলটকে এক ঘণ্টার ফ্লাইট ট্রেনিং দিতে লাখ কোটি টাকা খরচ হয়, অথচ নতুন প্লেন কেনার বরাদ্দ নেই? সাবেক মেজর জিয়াউল হকের বিশ্লেষণ অনুযায়ী, এই সকল বিমান কেনার ক্ষেত্রে লুকানো আছে গভীর দুর্নীতির মুদ্রাঙ্কন।

আরও পড়ুন:

মাইলস্টোন কলেজ বিমান বিধ্বস্ত: শিক্ষার্থীর সংখ্যা জানালেন শিক্ষক

মাইলস্টোন কলেজ: হাজিরা তালিকা নেই, স্কুলে শিক্ষার্থীদের সংখ্যা নিয়ে রহস্য

১৯৯৯ সালে রাশিয়া থেকে কেনা আটটি MiG-29 যুদ্ধবিমান প্রকল্পে দেখা গেছে ৪-৫ শতাংশ কমিশন লেনদেনের অভিযোগ। বিমানের অনেক যন্ত্রাংশ ছিল নিম্নমানের কিংবা নষ্ট। চীনের কাছ থেকে কেনা ১৬টি F-7 বিমানের দাম প্রথমে ঘোষণা করা হয়েছিল ৯৩.৬ মিলিয়ন ডলার, পরে তা বেড়ে দাঁড়ায় ১৬৯ মিলিয়ন ডলারে, যার প্রায় ৯ মিলিয়নের কোনও নির্ভরযোগ্য হিসাব নেই।

টেন্ডার মানেই লুটপাটের কারখানা

Yak-130, K-8 Karakorum, PT-6 ট্রেইনার বিমান কেনার ক্ষেত্রে কমিশন হিসেবে লুকানো হয়েছে ৭-২০ শতাংশ পর্যন্ত অর্থ। কিছু বিমানের ইঞ্জিন ছিল পুরনো এবং বাতিল তালিকাভুক্ত, তবুও কাগজে নতুন দেখানো হয়েছিল। এছাড়াও জাল ভাউচার, মিথ্যা সার্ভিস রিপোর্টের মাধ্যমে রক্ষণাবেক্ষণ খাতে অতিরিক্ত খরচ দেখানো হয়েছে।

‘ফিট টু ফ্লাই’ সনদ ও ঘুষ: প্রাণঘাতী এক সংকট

চট্টগ্রামে এক প্রশিক্ষণ বিমানের দুর্ঘটনায় তদন্তে উঠে আসে ভয়ঙ্কর তথ্য—ত্রুটি থাকা সত্ত্বেও ঘুষের বিনিময়ে দেওয়া হয়েছে ‘ফিট টু ফ্লাই’ সনদ। এই সনদই অনেক সময় নির্দোষ পাইলটদের মৃত্যুর কারণ হয়ে দাঁড়ায়।

দুর্নীতির জাল বিছিয়ে পাইলটের জীবন বাজি

২০১৪ সালে এয়ার চিফ মার্শাল আব্দুল হান্নানের বিরুদ্ধে ৩ হাজার কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগ ওঠে। শুধু তিনি নন, এই দুর্নীতির পিছনে আছেন রাজনীতিক, আমলা ও ব্যবসায়ীরাও। প্রতিরক্ষা খাতে বরাদ্দের প্রায় ৪০-৫০ শতাংশ অপচয় হয় জাকজমক, বিদেশ সফর ও ব্যক্তিগত খরচে, যা অপারেশনাল খাতের তীব্র সংকট তৈরি করে।

এক শিশুর স্বপ্ন থেকে জাতির করুণ বাস্তবতা

দুর্ঘটনাস্থলে পড়ে থাকা সেই শিশুর খাতার পাতায় লেখা—“আমি বড় হয়ে পাইলট হব।” সে জানতো না যে তার স্বপ্ন রাষ্ট্রীয় দুর্নীতির তীব্রতর এক আঘাতে ধ্বংস হবে। প্রতিটি ঘুষের টাকার নিচে লুকিয়ে আছে এক পরিবারের কান্না, প্রতিটি কমিশনের নীচে পুড়ে যায় একটি সম্ভাবনা।

প্রশিক্ষণ বিমান দুর্ঘটনার পেছনে যে চাঞ্চল্যকর সত্য উন্মোচিত হয়েছে তা শুধু একটি বিমানের পতন নয়, এটি এক গভীর রাষ্ট্রীয় দুর্নীতির প্রমাণ। যেখানে নিরাপত্তার বদলে অশুভ লেনদেন চলে, সেখানে জাতির পাইলটরা জীবনের ঝুঁকি নিয়ে আকাশ ছোঁয়ার স্বপ্ন হারায়। এই সত্যকে অস্বীকার করে দেশকে কতদিন অন্ধকারে রাখা যাবে? দুর্নীতি-অব্যবস্থাপনার বিরুদ্ধে কার্যকর পদক্ষেপই দেশের নিরাপত্তার একমাত্র হাতিয়ার।

FAQ:

প্রশ্ন: প্রশিক্ষণ বিমান দুর্ঘটনার পেছনে কী সত্য উন্মোচিত হয়েছে?

উত্তর: রাষ্ট্রীয় দুর্নীতি, কমিশন লেনদেন ও নিম্নমানের যন্ত্রাংশের কারণে দুর্ঘটনা ঘটেছে।

প্রশ্ন: কেন নতুন ফাইটার বা প্রশিক্ষণ বিমান কেনা সম্ভব হচ্ছে না?

উত্তর: বাজেটের অপচয় ও দুর্নীতির কারণে যথাযথ বিমানের ক্রয় পিছিয়ে যাচ্ছে।

প্রশ্ন: ‘ফিট টু ফ্লাই’ সার্টিফিকেট কি কেনা-বেচা হয়?

উত্তর: দুর্নীতির কারণে ঘুষ দিয়ে ফিট টু ফ্লাই সনদ দেওয়া হয়, যা নিরাপত্তার জন্য বিপজ্জনক।

প্রশ্ন: এই দুর্নীতির দায় কারা বহন করে?

উত্তর: রাজনীতিক, সামরিক উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা, আমলা ও ব্যবসায়ীসহ বহুরূপী দল।

মো: রাজিব আলী/

আপনার জন্য বাছাই করা কিছু নিউজ

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ