ঢাকা, বুধবার, ৯ জুলাই ২০২৫, ২৫ আষাঢ় ১৪৩২

জ্বরের পর জীবনের চরম মোড়: মেয়ে গেলেন ছেলে

সারাদেশ ডেস্ক . ২৪আপডেটনিউজ
২০২৫ জুন ১২ ১২:১৫:১৩
জ্বরের পর জীবনের চরম মোড়: মেয়ে গেলেন ছেলে

নিজস্ব প্রতিবেদক: জীবন কখন, কোন বাঁকে ঘুরে যাবে, তা কে বলতে পারে! এমনই এক বিরল, বাস্তব গল্পের জন্ম হয়েছে জামালপুরের সরিষাবাড়ীর পিংনা ইউনিয়নের মেইয়া গ্রামে। সেখানে এক তরুণীর শরীর আর সত্তায় ঘটেছে এমন এক পরিবর্তন, যা শুনে বিস্ময়ে হতবাক সবাই। শাহানাজ আক্তার নামের ১৮ বছর বয়সী মেয়ে, এখন তুহিন মিয়া নামে পরিচিত—একজন পুরুষ।

ঘটনার শুরুটা একেবারেই সাধারণ। ২০২৪ সালে এসএসসি পাস করে শাহানাজ ঢাকায় বেঙ্গল কোম্পানিতে চাকরির সুযোগ পান। স্বপ্ন নিয়ে পাড়ি জমান রাজধানীতে। কিন্তু তিন মাস না যেতেই হঠাৎ জ্বরে আক্রান্ত হন তিনি। জ্বর যেমন আসে, তেমনি সেরে যায়—কিন্তু রেখে যায় অদ্ভুত এক পরিবর্তনের সূত্রপাত।

ওষুধ খাওয়ার পর ধীরে ধীরে বদলে যেতে থাকে শরীরের গঠন, পাল্টে যেতে থাকে কণ্ঠস্বর। আয়নার সামনে দাঁড়ানো সেই মেয়ে যেন প্রতিদিন একটু একটু করে অন্য কাউকে হয়ে উঠছিল।

তিন মাস পর, ৯ জুন সোমবার। পিংনার মেইয়া গ্রামে ফিরে আসেন শাহানাজ—তবে এবার আর আগের রূপে নয়। পুরোপুরি ছেলেসুলভ গড়ন ও আচরণে ফিরে আসা সেই তরুণীর নাম এখন তুহিন মিয়া।

তুহিন বলেন, “প্রথমে ভয় পেয়ে গিয়েছিলাম। শরীরের এমন পরিবর্তন তো আর হুট করে মেনে নেওয়া যায় না। পরে সাভারের এক হাসপাতালে গেলে ডাক্তার জানান, শরীরে অতিরিক্ত পুরুষ হরমোন থাকার কারণে এমনটা হয়েছে। তারা আশ্বস্ত করেন—আমি শারীরিকভাবে সুস্থ এবং এই পরিবর্তন স্বাভাবিকভাবেই হয়েছে। এখন আমি নিজেকে একজন পুরুষ হিসেবেই দেখছি, এতে কোনও সমস্যা নেই।”

তুহিনের বাবা আবদুল বাসেদ বললেন, “আমার ছিল দুই মেয়ে, এক ছেলে। আল্লাহর কুদরতে এখন হল দুটি ছেলে, একটি মেয়ে। আল্লাহ যা চান, তা-ই হয়। আমরা সন্তানকে যেভাবে আছে, সেভাবেই গ্রহণ করেছি।”

এদিকে, বিষয়টি জানাজানি হতেই গ্রামে শুরু হয়েছে চাঞ্চল্য। কেউ ভিড় করছেন কৌতূহল নিয়ে, কেউ চুপচাপ ভাবছেন এ কেমন বিস্ময়!

তবে চিকিৎসা বিজ্ঞান কিছুটা দ্বিধান্বিত। সরিষাবাড়ী উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. দেবাশীষ রাজবংশী বলেন, “শুধু হরমোনের প্রভাবে মেয়ে থেকে ছেলে হয়ে যাওয়া বিজ্ঞানের দৃষ্টিতে অসম্ভব। তবে জন্মগত কিছু জটিলতা এবং হরমোনগত ভারসাম্যহীনতা থাকলে এমন কিছু উপসর্গ দেখা দিতে পারে। সবকিছু নির্ভর করে পূর্ণাঙ্গ মেডিক্যাল পরীক্ষার ওপর।”

তুহিন এখন নিজেকে খুঁজে পেয়েছেন নতুনভাবে—নতুন পরিচয়ে, নতুন সম্ভাবনায়। তার এই রূপান্তর শুধুই এক দেহগত বদল নয়, এটা এক সাহসিকতার গল্প। সমাজের চোখে বিস্ময়ের হলেও, তুহিনের কাছে এটি নিজের সত্যকে খুঁজে পাওয়ার এক অমূল্য মুহূর্ত।

জীবন এমনই—যেখানে জ্বরও হতে পারে নিজের পরিচয় আবিষ্কারের চাবিকাঠি।

FAQ (প্রশ্নোত্তর):

প্রশ্ন: শাহানাজ থেকে তুহিন কিভাবে রূপান্তরিত হলেন?

উত্তর: জ্বরের পর ওষুধ সেবনের একপর্যায়ে শরীরের গঠন ও কণ্ঠস্বর বদলাতে থাকে। ডাক্তারদের মতে, শরীরে অতিরিক্ত পুরুষ হরমোন থাকার কারণে এই রূপান্তর ঘটে।

প্রশ্ন: চিকিৎসা বিজ্ঞানে কি এমন রূপান্তর সম্ভব?

উত্তর: সাধারণভাবে মেডিক্যাল সায়েন্সে এমন রূপান্তরের সম্ভাবনা নেই, তবে জন্মগত হরমোনগত জটিলতা থাকলে কিছু ক্ষেত্রে শরীর ও আচরণে পরিবর্তন আসতে পারে।

প্রশ্ন: পরিবার কীভাবে বিষয়টি গ্রহণ করেছে?

উত্তর: পরিবারের সদস্যরা প্রথমে বিস্মিত হলেও পরে বিষয়টি মেনে নেন এবং শাহানাজের নতুন নাম দেন তুহিন মিয়া।

প্রশ্ন: বর্তমানে তুহিনের শারীরিক অবস্থা কেমন?

উত্তর: তুহিন নিজেই জানিয়েছেন, তিনি এখন শারীরিকভাবে সম্পূর্ণ সুস্থ এবং নিজেকে একজন পুরুষ হিসেবেই গ্রহণ করেছেন।

মো: রাজিব আলী/

আপনার জন্য বাছাই করা কিছু নিউজ