ঢাকা, রবিবার, ২০ জুলাই ২০২৫, ৫ শ্রাবণ ১৪৩২

MD. Razib Ali

Senior Reporter

যেসব দেশে বিয়ে করলেই নাগরিকত্ব, প্রেমে খুলে যায় পাসপোর্ট

বিশ্ব ডেস্ক . ২৪আপডেটনিউজ
২০২৫ জুন ১৪ ১৬:৫৫:৫১
যেসব দেশে বিয়ে করলেই নাগরিকত্ব, প্রেমে খুলে যায় পাসপোর্ট

নিজস্ব প্রতিবেদক: আজকের বিশ্বে প্রেম ও সম্পর্ক আর শুধু আবেগ আর অনুভূতির মধ্যে সীমাবদ্ধ নেই। বৈশ্বিক যুগে ভালোবাসা এখন হয়ে উঠতে পারে একটি নতুন দেশের নাগরিকত্ব পাওয়ার সেতুবন্ধন। অবাক করা হলেও সত্যি, বিশ্বের অনেক দেশেই আপনি যদি সেই দেশের নাগরিককে বিয়ে করেন, তাহলে নির্দিষ্ট কিছু শর্ত পূরণ করে আপনি পেতে পারেন সেই দেশের নাগরিকত্ব।

এই প্রক্রিয়াটি কখনো খুব সহজ, আবার কিছু দেশে কিছুটা জটিলও। তবে প্রেম ও বিয়েকে কেন্দ্র করে যেসব দেশ নাগরিকত্ব দেয়ার সুযোগ রাখে, সেগুলোর তালিকা ক্রমেই দীর্ঘ হচ্ছে। নিচে এমন কিছু দেশের নাম তুলে ধরা হলো, যেখানে সত্যিকারের সম্পর্ক আপনাকে এনে দিতে পারে একটি নতুন পাসপোর্ট।

কেপ ভার্দে

আফ্রিকার পশ্চিম উপকূলে অবস্থিত কেপ ভার্দে একটি ছোট কিন্তু সৌন্দর্যবেষ্টিত দ্বীপরাষ্ট্র। এই দেশের নাগরিককে বিয়ে করলে নাগরিকত্ব পাওয়ার জন্য আলাদা কোনো শর্ত নেই। বসবাসের প্রয়োজন নেই, ভাষার কোনো বাধা নেই, এমনকি সংস্কৃতি জানারও বাধ্যবাধকতা নেই। কেবল বৈধ বিয়ে হলেই নাগরিকত্বের আবেদন করা যায়। এটি বিশ্বের অন্যতম সহজ বিয়েভিত্তিক নাগরিকত্ব নীতির উদাহরণ।

স্পেন

দক্ষিণ ইউরোপের প্রাচীন ঐতিহ্যের দেশ স্পেন নাগরিকত্বের ক্ষেত্রে বেশ উদার। স্প্যানিশ নাগরিককে বিয়ের পর মাত্র এক বছর একসঙ্গে বসবাস করলেই নাগরিকত্বের জন্য আবেদন করা যায়। তবে এর জন্য প্রয়োজন হবে বৈধ বিয়ের সনদ, একসঙ্গে থাকার প্রমাণ এবং স্প্যানিশ ভাষা ও সংস্কৃতির প্রাথমিক জ্ঞান। স্পেনে নাগরিকত্ব পাওয়া গেলে অনেক ক্ষেত্রে লাতিন আমেরিকার কিছু দেশ, ফিলিপাইন ও পর্তুগালের দ্বৈত নাগরিকত্বও মিলতে পারে।

আর্জেন্টিনা

আর্জেন্টিনায় কোনো নাগরিককে বিয়ে করলে মাত্র দুই বছর পরেই আপনি নাগরিকত্বের জন্য আবেদন করতে পারবেন। অবশ্যই বিয়ে বৈধ হতে হবে এবং আবেদনকারীর সাধারণ স্প্যানিশ ভাষাজ্ঞান থাকতে হবে। এ ছাড়া তার বিরুদ্ধে কোনো ফৌজদারি মামলা বা অপরাধের রেকর্ড থাকলে আবেদন বাতিল হতে পারে।

মেক্সিকো

মেক্সিকোতে একজন নাগরিককে বিয়ে করলে দুই বছর পর নাগরিকত্বের জন্য আবেদন করা যায়। মজার বিষয় হলো, মেক্সিকান নাগরিকত্ব গ্রহণ করলেও আপনার পূর্ববর্তী দেশের নাগরিকত্ব ধরে রাখতে পারবেন। অর্থাৎ দ্বৈত পাসপোর্ট রাখার সুযোগ এখানে বিদ্যমান।

তুরস্ক

তুর্কি নাগরিককে বিয়ে করলে নাগরিকত্ব পেতে হলে অন্তত তিন বছর বৈধভাবে একসঙ্গে বসবাস করতে হবে। তুরস্কে ভাষা বা সংস্কৃতি শেখার আলাদা কোনো বাধ্যবাধকতা নেই, যা এই প্রক্রিয়াকে অনেক সহজ করে তোলে। তুর্কি পাসপোর্টে বিশ্বের শতাধিক দেশে ভিসা ছাড়া প্রবেশের সুযোগ রয়েছে, যা আন্তর্জাতিক ভ্রমণকারীদের জন্য বিশেষ আকর্ষণীয়।

সুইজারল্যান্ড

সুইজারল্যান্ডে সাধারণত অভিবাসন আইন কঠোর হলেও বৈধ বিয়ের মাধ্যমে নাগরিকত্ব পাওয়া সম্ভব। কোনো সুইস নাগরিককে বিয়ে করে দেশটিতে একসঙ্গে তিন বছর বসবাস করলে পাঁচ বছর পর নাগরিকত্বের জন্য আবেদন করা যায়। তবে যদি আপনি দেশের বাইরে থাকেন, এবং ছয় বছর বৈধ বৈবাহিক সম্পর্ক বজায় থাকে, তাহলেও আবেদন করতে পারবেন। শর্ত হিসেবে থাকতে হবে স্থানীয় ভাষাজ্ঞান, সংস্কৃতিতে অভ্যস্ততা এবং কোনো অপরাধে জড়িত না থাকার প্রমাণ।

অন্যান্য দেশ

এছাড়াও কানাডা, ফ্রান্স, আয়ারল্যান্ড, নিউজিল্যান্ড, ডেনমার্কসহ আরও অনেক দেশ বিয়ের ভিত্তিতে নাগরিকত্ব দেয়। তবে এসব দেশে সাধারণত নির্দিষ্ট সময় একসঙ্গে বসবাস করতে হয়, এবং স্থানীয় ভাষা ও সংস্কৃতি সম্পর্কে কিছু ধারণা থাকতে হয়।

সতর্কতা ও নীতিমালা

যদিও এই সুযোগ অনেক আকর্ষণীয়, তবে মনে রাখতে হবে এসব দেশের অভিবাসন কর্তৃপক্ষ ভুয়া বিয়ে বা কাগজে-কলমে সম্পর্ককে খুব কঠোরভাবে তদন্ত করে। বিয়ের নামে কোনো প্রতারণা প্রমাণিত হলে শুধু নাগরিকত্ব বাতিলই নয়, জেল জরিমানার মতো আইনি জটিলতাও দেখা দিতে পারে। তাই আইন মেনে, সত্যিকারের সম্পর্কের ভিত্তিতে এগিয়ে যাওয়া উচিত।

বিয়ের মাধ্যমে নাগরিকত্ব পাওয়ার বিষয়টি অনেকের কাছেই স্বপ্নের মতো শোনালেও এটি এখন বাস্তবতা। এক দেশের নাগরিককে ভালোবেসে বিয়ে করলে আপনি শুধু একটি সম্পর্কই গড়ছেন না, বরং ভবিষ্যতের দরজাও খুলে দিচ্ছেন নিজের জন্য। তাই যেখানে প্রেম, সেখানে এখন সুযোগও।

FAQ ও উত্তর (FAQ with Answers):

প্রশ্ন: কোন দেশে বিয়ের মাধ্যমে নাগরিকত্ব সবচেয়ে সহজে পাওয়া যায়?

উত্তর: কেপ ভার্দে, তুরস্ক ও মেক্সিকোতে বিয়ের পর কম শর্তে নাগরিকত্ব পাওয়া যায়।

প্রশ্ন: বিয়ের পর নাগরিকত্ব পাওয়ার জন্য কি দেশের ভেতর বসবাস করতে হয়?

উত্তর: কিছু দেশে (যেমন তুরস্ক, সুইজারল্যান্ড) একসঙ্গে বসবাসের শর্ত থাকে, তবে কেপ ভার্দে-তে এমন শর্ত নেই।

প্রশ্ন: বিয়ের মাধ্যমে নাগরিকত্ব নিতে কি ভাষা জানা বাধ্যতামূলক?

উত্তর: কিছু দেশে (যেমন স্পেন, সুইজারল্যান্ড) ভাষা সম্পর্কে প্রাথমিক জ্ঞান থাকতে হয়।

প্রশ্ন: বিয়ের পর কত বছর নাগরিকত্বের জন্য অপেক্ষা করতে হয়?

উত্তর: দেশভেদে ১-৩ বছর, স্পেনে ১ বছর, আর্জেন্টিনায় ২ বছর, তুরস্কে ৩ বছর।

মো: রাজিব আলী/

আপনার জন্য বাছাই করা কিছু নিউজ