ঢাকা, রবিবার, ২২ জুন ২০২৫, ৮ আষাঢ় ১৪৩২

ভয়াবহ অন্ধকারে ঢাকার একাংশ

সারাদেশ ডেস্ক . ২৪আপডেটনিউজ
২০২৫ জুন ২২ ২৩:০৪:৪৮
ভয়াবহ অন্ধকারে ঢাকার একাংশ

নিজস্ব প্রতিবেদক: শনিবার রাত। শহরের ব্যস্ততা একটু একটু করে থেমে আসছে। তবু রাস্তায় আলো, বাসায় এসি, ল্যাপটপ, মোবাইল চার্জার—সবকিছুই চলছে বিদ্যুতের ওপর ভর করে। হঠাৎ করেই যেন কেউ নিভিয়ে দিল রাজধানীর আলো! অন্ধকারে ডুবে গেল ঢাকার বড় একাংশ—রামপুরা, হাতিরঝিল, ফার্মগেট, গুলশান, মগবাজার, বনানী, বাংলামোটর... যেন আধুনিক শহরের বুকে হঠাৎ নেমে এলো এক প্রাচীন রাত্রি।

ঘড়ির কাঁটা তখন রাত ৯টা ৫০ মিনিট। রামপুরায় অবস্থিত পাওয়ার গ্রিড কোম্পানি অব বাংলাদেশের (পিজিসিবি) ২৩০/১৩২ কেভি গ্রিড সাবস্টেশনে আকস্মিক কারিগরি ত্রুটি দেখা দেয়। মুহূর্তেই বন্ধ হয়ে যায় বিদ্যুৎ সরবরাহ। মগবাজার, মধুবাগ, কারওয়ান বাজার, হাতিরপুলসহ ডিপিডিসির অধীন বহু এলাকাজুড়ে শুরু হয় লোডশেডিং।

রাস্তায় নেমে আসে নীরবতা। ট্র্যাফিক সিগন্যাল অচল, বাসার ইনভার্টারে বাঁচার চেষ্টা, আবার কারও ফোনে শেষ ব্যাটারির আলোয় ঘরের কাজ। জীবন যেন হঠাৎ থেমে যায়।

বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের (বিপিডিবি) মুখপাত্র শামীম হাসান ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে জানান, “রামপুরায় পিজিসিবির গ্রিডে বৈদ্যুতিক গোলযোগ হয়েছে। এর ফলে ডিপিডিসির আওতাধীন বহু এলাকা বিদ্যুৎহীন হয়ে পড়ে। পিজিসিবির প্রকৌশলীরা সর্বোচ্চ চেষ্টা করছেন। আধাঘণ্টা থেকে এক ঘণ্টার মধ্যে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হতে পারে।”

পিজিসিবি এক বার্তায় জানায়, “গ্রিডে অনাকাঙ্ক্ষিত ত্রুটির কারণে ঢাকার একাংশে বিদ্যুৎ সরবরাহ বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে। দ্রুত সমাধানে আমাদের প্রকৌশলীরা কাজ করছেন।”

শহরের অভিজাত এলাকা গুলশান ১ ও ২ থেকেও খবর মিলেছে, পুরো এলাকা অন্ধকারে। কেউ কেউ বারান্দা থেকে শহরের দিকের অন্ধকার দেখছেন, কেউ আবার মোবাইল টর্চ জ্বালিয়ে শিশুদের পড়া ধরছেন। হোটেল-রেস্তোরাঁর কাজ থেমে গেছে অনেকখানিই।

কেউ কেউ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে লিখেছেন, “নতুন কোনো বিপর্যয় কি সামনে?” কেউ আবার বিদ্যুৎ বিভ্রাটকে নিয়ে রসিকতা করে লিখেছেন, “লাইট গিয়েছে, কিন্তু ভালোবাসা এখনও জ্বলছে!”

তবে একমত সবাই—একবিংশ শতকের ঢাকা শহরে এমন লোডশেডিং কল্পনার বাইরে। পরিস্থিতি স্বাভাবিক না হওয়া পর্যন্ত উৎকণ্ঠা কাটছে না নগরবাসীর।

সরকারের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, ত্রুটির উৎস শনাক্ত করে দ্রুত সমাধানের পাশাপাশি প্রয়োজনীয় প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থাও নেওয়া হবে যেন ভবিষ্যতে এমন হঠাৎ অন্ধকার না নামে।

একটি গ্রিড সাবস্টেশনের ঝলকানি কতটা আলো কেড়ে নিতে পারে, তা হাড়েহাড়ে টের পেল রাজধানীর লাখো মানুষ। বিদ্যুৎ শুধু আলো নয়, এ যেন শহরের প্রাণ, প্রযুক্তির স্পন্দন। সেই স্পন্দন থেমে গেলে শহরটাও যেন কিছুটা নিস্তেজ হয়ে যায়।

মো: রাজিব আলী/

আপনার জন্য বাছাই করা কিছু নিউজ