ঢাকা, সোমবার, ২৩ জুন ২০২৫, ৯ আষাঢ় ১৪৩২

টেস্ট অধিনায়কত্ব ছাড়ছেন শান্ত, শ্রীলঙ্কা সিরিজেই শেষ অধ্যায়?

খেলা ডেস্ক . ২৪আপডেটনিউজ
২০২৫ জুন ২৩ ১০:৪৫:৩০
টেস্ট অধিনায়কত্ব ছাড়ছেন শান্ত, শ্রীলঙ্কা সিরিজেই শেষ অধ্যায়?

নিজস্ব প্রতিবেদক: টেস্ট দলের নেতৃত্ব থেকে সরে দাঁড়াচ্ছেন নাজমুল হোসেন শান্ত। সময়ের অন্যতম সম্ভাবনাময় ক্রিকেটারটি যে দায়িত্ব এক সময় গর্বের সঙ্গে বরণ করেছিলেন, সেই দায়িত্বই এবার রেখে যেতে চাইছেন নিরবে। বাংলাদেশের ক্রিকেটে যে অদৃশ্য টানাপোড়েন ও জটিলতা চলে, শান্তর এই সিদ্ধান্ত যেন তারই প্রতিচ্ছবি।

ক্রিকবাজ এক খবরে জানিয়েছে, শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে চলমান দুই ম্যাচের টেস্ট সিরিজ শেষে শান্ত অধিনায়ক হিসেবে আর থাকছেন না। সিদ্ধান্তটা তার নিজের। কেউ কেড়ে নেয়নি, কিন্তু পরিস্থিতি যেন তাকে সেই পথে ঠেলে দিয়েছে।

ভেতরে জমে থাকা আক্ষেপের আগুন

শান্তর ঘনিষ্ঠ সূত্র বলছে, ‘ও খুব কষ্টে আছে। আমি ওকে অনেকদিন চিনি, ও এমন সিদ্ধান্ত হঠাৎ নেয় না। বোর্ডের আচরণে সে অনেকটা ভেঙে পড়েছে।’

শুধু অধিনায়কত্ব হারানো নয়, বরং যেভাবে নেতৃত্ব থেকে সরিয়ে দেওয়া হলো, সেটাই সবচেয়ে বেশি কষ্ট দিয়েছে শান্তকে। গত ১২ জুন হঠাৎই ওয়ানডে দলে মেহেদি হাসান মিরাজকে অধিনায়ক ঘোষণা করে বিসিবি। অথচ সেই সময় শান্ত শ্রীলঙ্কা সফর ঘিরে খেলোয়াড়দের সঙ্গে পরিকল্পনা নিয়ে ব্যস্ত ছিলেন। এমনকি প্রধান কোচ ফিল সিমন্সের সঙ্গে বৈঠক করার কথাও ছিল। কিন্তু এক ফোনকলেই বদলে যায় সব। সেই বৈঠক আর হয় না।

এরপর জুম মিটিংয়ে চূড়ান্ত হয় নতুন ওয়ানডে অধিনায়ক। শান্ত জানতে পারেন সংবাদমাধ্যম থেকে।

একসময় চেয়েছিলেন নিজেই সব ছেড়ে দিতে

শান্ত যে এই সিদ্ধান্তে পৌঁছেছেন, তার পেছনে দীর্ঘদিনের অস্বস্তি জমে ছিল। একসময় তিনি নিজেই সব ফরম্যাটের নেতৃত্ব ছাড়তে চেয়েছিলেন, মন দিতে চেয়েছিলেন ব্যাটিংয়ে। কিন্তু তৎকালীন বিসিবি সভাপতি ফারুক আহমেদ তাকে বোঝান, অন্তত টেস্ট আর ওয়ানডে দল যেন চালিয়ে যান। তিনি কথা রাখেন। কিন্তু বোর্ড কি রাখে?

টি-টোয়েন্টি অধিনায়কত্ব শান্ত নিজে ছেড়ে দেন। ওয়ানডে থেকে সরিয়ে দেওয়া হয় হঠাৎ করেই। আর এবার টেস্ট দল থেকেও সরে দাঁড়ানোর সিদ্ধান্ত।

বোর্ড বলছে সম্মতিতে সিদ্ধান্ত, শান্ত বলছেন না কিছু

বোর্ড সভাপতি আমিনুল ইসলাম বুলবুল অবশ্য দাবি করেছেন, শান্তর নেতৃত্ব কেড়ে নেওয়া হয়নি, বরং বোর্ডের সম্মতিতে সিদ্ধান্ত হয়েছে। শান্তও ‘খেলোয়াড়সুলভ মানসিকতায়’ তা মেনে নিয়েছেন বলে জানান তিনি।

কিন্তু বাস্তবতা কী বলে?

শান্তর মুখ থেকে কোনো বক্তব্য আসেনি। তিনি নিশ্চুপ। নীরবতা অনেক সময় শব্দের চেয়েও গাঢ় হয়। সেই নীরবতায়ই ফুটে উঠছে তার অভিমান, হতাশা আর ক্লান্তি।

অস্থির এক নেতৃত্বের যুগ

শান্ত ছিলেন বিসিবির দেওয়া ‘এক বছরের পরীক্ষামূলক অধিনায়ক’। সেই বছর এখনও শেষ হয়নি। কিন্তু শুরুর আগেই যেন শেষের ঘন্টা বেজে গেল। বাংলাদেশের ক্রিকেটে নেতৃত্বের চেয়ারটা যে কতটা অস্থির আর হালকা হয়ে গেছে, শান্তর ঘটনাই তার প্রমাণ।

এখন প্রশ্ন একটাই—এই অস্থিরতার শেষ কোথায়?

নাজমুল হোসেন শান্তর টেস্ট অধিনায়কত্বের বিদায় কোনো আনুষ্ঠানিক ‘বিদায়ী সংবর্ধনা’ পাচ্ছে না। নেই কোনো চোখে জল, নেই সংবেদনশীল বার্তা। আছে শুধু একটি সংবাদ, কিছু অভিমান, আর একটি দেশের ক্রিকেট নেতৃত্ব নিয়ে নতুন করে প্রশ্ন।

সম্ভবত শান্ত এখন কেবলই ব্যাট হাতে নিজের মতো করে লড়াই করতে চান। যে শান্ত নেতৃত্বের ভার কাঁধে তুলে নিয়েছিলেন দেশকে এগিয়ে নিতে, তিনি আজ ভারমুক্ত হতে চাইছেন নিজেকেই বাঁচাতে।

ক্রিকেট মাঠে নতুন ইনিংস শুরু হবে ঠিকই, কিন্তু নেতৃত্বের এই অধ্যায়ের শেষ পৃষ্ঠায় লেখা থাকবে—“ছায়ায় ঢাকা একজন নেতা, যাকে বিদায় নিতে হলো আলোর আড়ালে।”

আল-আমিন ইসলাম/

আপনার জন্য বাছাই করা কিছু নিউজ