ঢাকা, সোমবার, ৩০ জুন ২০২৫, ১৭ আষাঢ় ১৪৩২

উল্লাসে ভাসল ইরান, তেহরানের রাস্তায় বিজয়ের পতাকা

বিশ্ব ডেস্ক . ২৪আপডেটনিউজ
২০২৫ জুন ২৮ ১৯:৪৬:৫৮
উল্লাসে ভাসল ইরান, তেহরানের রাস্তায় বিজয়ের পতাকা

নিজস্ব প্রতিবেদক: ১২ দিনের রক্তাক্ত সংঘাতের পর যখন যুদ্ধবিরতির ঘোষণা এলো, তখন যেন দীর্ঘ এক অপেক্ষার অবসান ঘটল। খবরটি পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে ইরান যেন প্রাণ ফিরে পেল—বাতাসে ভাসতে লাগল বিজয়ের উল্লাস। গোটা দেশজুড়ে শুরু হলো বিজয় উৎসব, আর তেহরানসহ বড় শহরগুলোর রাজপথে নেমে এল মানুষের ঢল।

চারপাশে আগুনের আলো, জাতীয় পতাকার রঙে রাঙানো মুখ, আর কণ্ঠে একটাই স্লোগান—"জয়"। ইরানিরা যেন জানিয়ে দিল, এই যুদ্ধবিরতি তাদের কাছে কেবল সাময়িক শান্তির বার্তা নয়, এটি এক প্রতিরোধের বিজয়, আত্মমর্যাদার জয়।

ইরানের শীর্ষ নেতারা যুদ্ধবিরতিকে বলেছেন ‘ঐতিহাসিক সাফল্য’। সহরাষ্ট্রপতি মোহাম্মদ রেজা আরেফ বলেন, “এটি শুধু বোমা-বারুদের লড়াই নয়, কূটনৈতিক ময়দানে এক অভূতপূর্ব জয়। আমেরিকা ও পশ্চিমারা আজ বুঝেছে—ইরানকে দমিয়ে রাখা যাবে না।”

আরেক শক্তিশালী কণ্ঠ—মোহাম্মাদ বাঘের গালিবাফের উপদেষ্টা মাহদি মোহাম্মাদি বলেন, “এই মুহূর্ত একটি মোড় ঘোরানো সময়। ইতিহাসে এটি লেখা থাকবে নতুন যুগের সূচনা হিসেবে।” আর জাতীয় টেলিভিশনে দাঁড়িয়ে পারমাণবিক শক্তি অধিদপ্তরের মুখপাত্র বেহরুজ কামালভান্দি জানিয়ে দিলেন স্পষ্ট বার্তা, “আমাদের পথ থেমে থাকবে না। বিজ্ঞান, প্রযুক্তি আর প্রতিরোধ—এই পথেই ইরান এগিয়ে যাবে।”

বিশ্লেষকরা বলছেন, এই যুদ্ধবিরতি ইরানের এক সুপরিকল্পিত কৌশলের ফল। রণাঙ্গনের পাশাপাশি কূটনৈতিক কৌশলে তারা এখন অনেক বেশি পরিণত। যুদ্ধ থেমেছে, কিন্তু তাদের প্রতিরোধের কাহিনি আরও উচ্চতায় উঠেছে।

যুদ্ধবিরতির ঘোষণার পর রাস্তায় নামা এক তরুণ বলছিলেন, “আমরা হারিনি, আমরা দেখিয়েছি—যা কিছু ভালোবাসি, তা রক্ষা করব যে কোনো মূল্যে।” তার চোখে ছিল গর্ব, কণ্ঠে দৃঢ়তা। ঠিক সেরকমই ছিল তেহরানের আকাশ—আতশবাজিতে আলোকিত, মানুষের উল্লাসে মুখর।

তবে আন্তর্জাতিক মহল এখনো পুরোপুরি নিশ্চিন্ত হতে পারছে না। ইরান-ইসরায়েল শত্রুতির পেছনে বহু পুরনো ইতিহাস, বহু স্তরের দ্বন্দ্ব। সাময়িক শান্তির আড়ালে ভবিষ্যতের সংঘাতের ছায়া অনেকে দেখছেন। তবু ইরান বলছে—এই যুদ্ধবিরতি এক বিরতি নয়, এটি তাদের সাহসের ঘোষণা।

উল্লেখ্য, চলতি বছরের ১৩ জুন ইসরায়েল প্রথম হামলা চালায় ইরানের পারমাণবিক স্থাপনাগুলোর ওপর। পাল্টা জবাব আসে ইরান থেকেও। উত্তপ্ত পরিস্থিতিতে যুক্তরাষ্ট্র হস্তক্ষেপ করে যুদ্ধবিরতির ঘোষণা দেয়।

এখন গোটা ইরান বলছে, “আমরা ভয় পাই না। প্রতিরোধের ভাষা আমরা জানি। আমরা যখন দাঁড়াই, তখন ইতিহাস নড়ে উঠে।” যুদ্ধ থেমেছে, তবে ইরানের আত্মবিশ্বাস, দৃঢ়তা ও বিজয়ের পতাকা উড়ছে তেহরানের প্রতিটি প্রান্তে। সেই পতাকা শুধু একটি দেশের নয়, প্রতিরোধের প্রতীক হয়ে উঠেছে।

জামিরুল ইসলাম/

আপনার জন্য বাছাই করা কিছু নিউজ