ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১০ জুলাই ২০২৫, ২৫ আষাঢ় ১৪৩২

MD. Razib Ali

Senior Reporter

রিয়াল বনাম পিএসজি: ২৫ মিনিটেই বদলে গেল ম্যাচের চিত্র, কে গেল ফাইনালে?

খেলা ডেস্ক . ২৪আপডেটনিউজ
২০২৫ জুলাই ১০ ০৩:১২:৫০
রিয়াল বনাম পিএসজি: ২৫ মিনিটেই বদলে গেল ম্যাচের চিত্র, কে গেল ফাইনালে?

নিজস্ব প্রতিবেদক: মেটলাইফ স্টেডিয়াম, যুক্তরাষ্ট্র – ইউরোপীয় ফুটবলের দুই পরাশক্তির লড়াইয়ে স্পষ্ট ব্যবধানে জয় তুলে নিয়ে ক্লাব বিশ্বকাপ ২০২৫-এর ফাইনালে পা রেখেছে ফ্রান্সের ক্লাব প্যারিস সেন্ট জার্মেই (পিএসজি)। ঐতিহাসিক এই সেমিফাইনালে তারা ৪-০ গোলে পরাজিত করেছে স্পেনের রিয়াল মাদ্রিদকে, যা রীতিমতো অবিশ্বাস্য এক স্কোরলাইন।

প্রথমার্ধেই তিন গোল করে পিএসজি প্রমাণ করে দেয়—এদিন মাঠে একমাত্র দল ছিল তারাই। স্প্যানিশ জায়ান্টদের কোনো জায়গাই দেয়নি ফরাসি ক্লাবটি। আক্রমণ, মাঝমাঠ কিংবা রক্ষণ—সব জায়গাতেই একচেটিয়া দাপট দেখায় লুইস এনরিকে’র শিষ্যরা।

ম্যাচের ঘটনা প্রবাহ

খেলার মাত্র ৬ মিনিটেই গোল পেয়ে যায় পিএসজি। দলের স্প্যানিশ মিডফিল্ডার ফাবিয়ান রুইজ বক্সের বাইরে থেকে নিয়ন্ত্রিত প্লেসিংয়ে বল জালে জড়ান। রিয়াল গোলকিপার লুনিন চেষ্টা করেও কিছু করতে পারেননি। এর তিন মিনিট পর, অর্থাৎ ৯ মিনিটে, পিএসজি ব্যবধান দ্বিগুণ করে। এবার গোলদাতা ওসমান ডেম্বেলে, যিনি রাইট উইং থেকে দুর্দান্ত গতিতে ঢুকে ডান পায়ের শটে বল পাঠান জালে।

ম্যাচে তখনও ঘড়িতে ২৫ মিনিট হয়নি, এরই মধ্যে ২৪ মিনিটে আবারও গোল করেন ফাবিয়ান রুইজ। কর্নার থেকে রিবাউন্ড পাওয়া বল হেডে লক্ষ্যভেদ করেন এই স্প্যানিশ মিডফিল্ডার। মাত্র একার ম্যাচেই তার জোড়া গোল, যা রিয়াল মাদ্রিদের রক্ষণভাগকে পুরোপুরি ভেঙে দেয়।

দ্বিতীয়ার্ধে রিয়াল কিছুটা ফিরে আসার চেষ্টা করলেও তারা খুব একটা সুযোগ তৈরি করতে পারেনি। মধ্যমাঠে কামাভিঙ্গা ও ক্রুস চাপের মুখে ছিলেন পুরো সময়। ৮৭ মিনিটে বদলি হিসেবে নামা গনসালো রামোস স্কোরলাইন ৪-০ করেন, এবং ম্যাচের নিয়তি তখনই চূড়ান্ত হয়ে যায়।

ম্যাচ পরিসংখ্যান (চূড়ান্ত):

পরিসংখ্যানপিএসজিরিয়াল মাদ্রিদ
গোল
মোট শট ১৬ ১১
অন টার্গেট শট
বল দখল (পজেশন) ৬৮% ৩২%
মোট পাস ৬৪৮ ৩০৫
পাস সফলতা ৯২% ৮৩%
ফাউল
হলুদ কার্ড
লাল কার্ড
অফসাইড
কর্ণার

ম্যাচ বিশ্লেষণ

পিএসজির এই জয়ে সবচেয়ে বড় ভূমিকা রেখেছে মাঝমাঠ ও দ্রুতগতির উইং অ্যাটাক। ফাবিয়ান রুইজ ও উগার্তে’র জুটি রিয়ালের পাসিং লাইন বন্ধ করে দেয়। ওসমান ডেম্বেলে ও ব্র্যাডলি বারকোলার গতিময়তা বারবার রিয়ালের ফুলব্যাকদের সমস্যায় ফেলে।

রিয়াল মাদ্রিদের পক্ষ থেকে ভিনিসিয়ুস জুনিয়র কিংবা রদ্রিগো কেউই ম্যাচে তেমন কোনো সুযোগ তৈরি করতে পারেননি। মধ্যমাঠে টনি ক্রুস ছিলেন নিষ্প্রভ। পুরো ম্যাচে রিয়াল মাত্র দুটি শট রাখতে পেরেছে লক্ষ্যে, যা তাদের আক্রমণভাগের দৈন্যতার প্রমাণ।

গোলকিপার ডোনারুমা পেয়েছেন সহজ ক্লিন শিট। রক্ষণভাগে মার্কুইনিয়োস ও লুকাস হার্নান্দেজ ছিলেন দুর্দান্ত। ম্যাচ শেষে অনেকেই একে পিএসজির সাম্প্রতিক ইতিহাসে অন্যতম সেরা পারফরম্যান্স হিসেবে বিবেচনা করছেন।

ফাইনাল সামনে: পিএসজি এখন ইতিহাসের দ্বারপ্রান্তে

এই জয়ের মাধ্যমে প্রথমবারের মতো ক্লাব বিশ্বকাপের ফাইনালে উঠল পিএসজি। তাদের প্রতিপক্ষ হবে দ্বিতীয় সেমিফাইনালে জয়ী দল। ফাইনালকে সামনে রেখে এখন প্রশ্ন—এই দুর্দান্ত ফর্ম ধরে রেখে কি পিএসজি নিজেদের প্রথম বিশ্ব খেতাব জিতে নিতে পারবে?

পিএসজি কোচ লুইস এনরিকে ম্যাচ শেষে বলেন, “এটা আমাদের জন্য শুধু একটি জয় নয়, এটা ছিল আমাদের ফুটবল দর্শনের প্রকাশ। আজ দলের প্রত্যেকটা খেলোয়াড় ছিল ফোকাসড, একনিষ্ঠ, এবং ক্ষুধার্ত।”

অন্যদিকে রিয়াল কোচ কার্লো আনচেলত্তি বলেন, “আমরা আজ খারাপ খেলেছি। কোনো অজুহাত নেই। পিএসজি তাদের কাজটা অসাধারণভাবে করেছে।”

পিএসজির জন্য এটি শুধু একটি সেমিফাইনাল জয় নয়, এটি ছিল ইউরোপের অন্যতম সেরা ক্লাবকে মাঠে চূর্ণ করার নিখুঁত প্রদর্শনী। এখন তারা দাঁড়িয়ে আছে ইতিহাসের দোরগোড়ায়। ফুটবল বিশ্ব অপেক্ষায়, পিএসজি কি পারবে চ্যাম্পিয়নের মুকুট মাথায় পরতে?

মো: রাজিব আলী/

আপনার জন্য বাছাই করা কিছু নিউজ