ঢাকা, সোমবার, ৭ জুলাই ২০২৫, ২৩ আষাঢ় ১৪৩২

আ. লীগের সব নেতাকে ভোটে অযোগ্য ঘোষণার দাবি এনডিএম-এর

রাজনীতি ডেস্ক . ২৪আপডেটনিউজ
২০২৫ জুলাই ০৭ ১৯:৪৪:৫৮
আ. লীগের সব নেতাকে ভোটে অযোগ্য ঘোষণার দাবি এনডিএম-এর

নিজস্ব প্রতিবেদক: আসন্ন ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ ও তাদের অঙ্গসংগঠনের সব নেতাকে নির্বাচনে অযোগ্য ঘোষণার দাবি জানিয়েছে ন্যাশনাল ডেমোক্রেটিক মুভমেন্ট (এনডিএম)। সোমবার নির্বাচন কমিশনের (ইসি) সঙ্গে এক গুরুত্বপূর্ণ বৈঠকে দলটি এই প্রস্তাব তুলে ধরে।

এনডিএম চেয়ারম্যান ববি হাজ্জাজ বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের বলেন,

“সরকারি নির্বাহী আদেশে নিষিদ্ধ বা নিবন্ধন স্থগিত থাকা রাজনৈতিক দলের কোনো নেতা যেন নির্বাচনে অংশ নিতে না পারেন—এটি নিশ্চিত করতে হবে।”

তিনি জানান, এই প্রস্তাবে মূলত আওয়ামী লীগকেই বোঝানো হয়েছে, যাদের দলীয় নিবন্ধন বর্তমানে স্থগিত বলে দাবী এনডিএমের।

আইনের স্পিরিট মানতে হবে: ববি হাজ্জাজ

ববি হাজ্জাজ বলেন,

“নিবন্ধন স্থগিত দলকে নির্বাচনে অংশগ্রহণের সুযোগ দিলে নির্বাচনী আইনের মূল আত্মা ক্ষুণ্ন হয়। আইন শুধু কাগজে নয়, বাস্তবে প্রয়োগ করতে হবে। নির্বাচন কমিশন যেন আইনি কাঠামোর আলোকে এ বিষয়ে দ্রুত পদক্ষেপ নেয়।”

ঋণ খেলাপি ও জামিনদার সংক্রান্ত প্রস্তাব

এনডিএম বৈঠকে আরও প্রস্তাব দেয় যে,

১০ লাখ টাকা পর্যন্ত ব্যক্তিগত ঋণে যদি প্রার্থী জামিনদার হন এবং মূল ঋণগ্রহীতা খেলাপি হয়ে যান, সেক্ষেত্রে মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার আগে ঋণ পরিশোধ করে প্রার্থী নির্বাচনে অংশ নেওয়ার সুযোগ পাবেন।

আসন পুনর্বিন্যাসে স্বচ্ছতা ও নিরপেক্ষতা চায় এনডিএম

সংসদীয় আসন পুনর্বিন্যাসের প্রসঙ্গে ববি হাজ্জাজ বলেন,

বর্তমান আইনের ৭ ধারা অনুযায়ী নির্বাচন কমিশনের সিদ্ধান্তই চূড়ান্ত।

আগামী ৬০ দিনের মধ্যে পুনর্বিন্যাস সংক্রান্ত গেজেট প্রকাশ করতে হবে।

এক জেলার আসন অন্য জেলায় স্থানান্তর করা যাবে না।

উপজেলাকে অবিভাজিত রাখার নীতিমালা অনুসরণ করতে হবে।

আসন নির্ধারণে জনসংখ্যা, ভোটার সংখ্যা, ভৌগোলিক সীমারেখা, যাতায়াত ব্যবস্থা ও জনগণের প্রত্যাশা—সবই বিবেচনায় রাখার দাবি জানানো হয়।

নির্বাচনী আচরণবিধি আরও বাস্তবমুখী করার প্রস্তাব

নির্বাচনী প্রচারে নিয়ন্ত্রণ ও সমতা নিশ্চিত করতে এনডিএম কয়েকটি নতুন প্রস্তাব দেয়:

প্রতিটি আসনে প্রার্থীদের ছবি ও তথ্যসহ একটি বড় বিলবোর্ড নির্বাচন কমিশনের ব্যবস্থাপনায় স্থাপন করা।

জনবহুল স্থানে প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীদের অংশগ্রহণে পরিচিতি সভা আয়োজন।

মনোনয়নপত্র জমার সময় ১০ জন সমর্থককে প্রার্থীর সঙ্গে যাওয়ার অনুমতি।

পিভিসি ব্যানার নিষিদ্ধের সিদ্ধান্ত প্রত্যাহার।

সামাজিক মাধ্যমে ব্যক্তিগত চরিত্র হনন বা ধর্মীয় আক্রমণ নিষিদ্ধের সুস্পষ্ট বিধান যুক্ত করার প্রস্তাব।

নির্বাচনী ব্যয়সীমা বাড়ানোর দাবি

বর্তমান ২৫ লাখ টাকার ব্যয়সীমা বাড়িয়ে ৪০ লাখ টাকায় উন্নীত করার সুপারিশ করেছে এনডিএম। ববি হাজ্জাজ বলেন,

“বর্তমান বাজার ও প্রচারণা খরচের বাস্তবতার সঙ্গে এটি সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়। ব্যয়সীমা বাড়ানো ছাড়া সবার জন্য সমান সুযোগ নিশ্চিত করা সম্ভব না।”

নির্বাচনের সম্ভাব্য সময় ও সংলাপ আয়োজনের আহ্বান

ববি হাজ্জাজ জানান,

আগামী ফেব্রুয়ারির প্রথমার্ধে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।

তাই সব রাজনৈতিক দলের সঙ্গে দ্রুত সংলাপ আয়োজন করা জরুরি।

এছাড়া নির্বাচনের তারিখ ও তফসিল নিয়ে নির্বাচন কমিশনের যদি সরকারের সঙ্গে কোনো আলোচনা হয়ে থাকে, তা জাতির সামনে প্রকাশ করার দাবি জানানো হয়।

চাপের রাজনীতির নতুন মোড়

এনডিএম-এর এই দাবিকে রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা দেখছেন একটি কৌশলগত চাপের কৌশল হিসেবে।নির্বাচনের মাঠ প্রস্তুতির আগেই যে প্রার্থী তালিকায় বড়সড় ছাঁটাই দাবি উঠছে, তা নিশ্চিতভাবেই রাজনৈতিক পরিস্থিতিকে নতুনভাবে উত্তপ্ত করে তুলবে।

আল-আমিন ইসলাম/

আপনার জন্য বাছাই করা কিছু নিউজ