ঢাকা, রবিবার, ২০ জুলাই ২০২৫, ৫ শ্রাবণ ১৪৩২

মশা মারার দেশীয় মেশিন মাত্র ৬৫০০ টাকায়, তৈরি করলেন মাসুম

সারাদেশ ডেস্ক . ২৪আপডেটনিউজ
২০২৫ জুলাই ১৯ ১১:৫৮:২৬
মশা মারার দেশীয় মেশিন মাত্র ৬৫০০ টাকায়, তৈরি করলেন মাসুম

নিজস্ব প্রতিবেদক, কুমিল্লা: ডেঙ্গু-ম্যালেরিয়ার মতো রোগ প্রতিরোধে মশা নিধন এখন সময়ের বড় চ্যালেঞ্জ। অথচ বাজারে একটি ভালো মানের ফগার মেশিন কিনতে খরচ পড়ে ৮০ হাজার থেকে এক লাখ টাকা। এমন ব্যয়বহুল যন্ত্রের বিকল্প হিসেবে মাত্র ৬ হাজার ৫০০ টাকায় দেশীয় প্রযুক্তিতে মশা মারার কার্যকর মেশিন তৈরি করেছেন কুমিল্লার চৌদ্দগ্রামের স্বপ্নবাজ তরুণ মাসুম বিল্লাহ।

নারায়ণগঞ্জে একটি বেসরকারি কোম্পানিতে মাসে ৫০ হাজার টাকা বেতনে চাকরি করতেন মাসুম। কিন্তু চাকরির জীবনে স্থিতিশীলতা থাকলেও ছিল না স্বপ্নের পরিপূর্ণতা। বিশেষ করে ভাড়া বাসায় মশার যন্ত্রণায় অতিষ্ঠ হয়ে মাথায় আসে মশা নিধনের সহজ ও সাশ্রয়ী কোনো সমাধান বের করার চিন্তা। সেই থেকেই তার যাত্রা শুরু।

স্থানীয়ভাবে তৈরি, আন্তর্জাতিক মানের কার্যকারিতা

মাসুম নিজ বাড়িতে গড়ে তোলেন ‘এমএইচআই আল্ট্রা পাওয়ার মিনি ফগার মেশিন ফ্যাক্টরি’। এখানে প্রতিদিন তৈরি হচ্ছে তার উদ্ভাবিত ফগার মেশিন, যা তুলনামূলকভাবে কম দামে হলেও কার্যকারিতায় অনেক উন্নত। এই যন্ত্রে নেই প্রচলিত যন্ত্রের মতো বিকট শব্দ কিংবা পোড়া ডিজেলের দুর্গন্ধ।

এই ফগার মেশিন চালাতে প্রয়োজন হয় মাত্র ২৫০ গ্রাম বিউটেন গ্যাসের বোতল ও ২ লিটার মশা নিধনের রাসায়নিক। একটি মেশিন ব্যবহার করে একসঙ্গে প্রায় ১ লাখ ২০ হাজার বর্গফুট এলাকায় মশা ধ্বংস করা যায়।

উদ্যোক্তা থেকে অনুপ্রেরণায় রূপান্তর

মাত্র এক বছরের মধ্যেই মাসুমের তৈরি ফগার মেশিন বাজারে ব্যাপক সাড়া ফেলেছে। ইতোমধ্যে তিনি বিক্রি করেছেন প্রায় আড়াইশ' যন্ত্র। প্রতিদিন অর্ডার পাচ্ছেন ১৫ থেকে ৩০টি পর্যন্ত। তার কারখানায় কাজ করছেন এলাকার তরুণরা, যারা আগে বেকার ছিলেন।

তরুণ কর্মী ইকরাম হোসেন জানান, “বাড়িতে বসে ছিলাম। এখন মাসুম ভাইয়ের সঙ্গে কাজ করে আয় করছি। কাজ শিখছি, ভবিষ্যতের জন্য প্রস্তুত হচ্ছি।”

স্বপ্ন আরও বড়

মাসুম বলেন, “চাকরি নয়, আমি চেয়েছি নিজের কিছু তৈরি করতে। আমি এখন চাই, এই প্রকল্প আরও বড় হোক, যাতে ৪-৫শ তরুণের কর্মসংস্থান হয়। ভবিষ্যতে নিজস্ব রাসায়নিক তৈরি করারও পরিকল্পনা আছে।”

সরকারি উদ্যোগ ও এলাকাবাসীর আশাবাদ

এই উদ্ভাবনকে সময়োপযোগী ও গুরুত্বপূর্ণ মনে করছেন স্থানীয়রা। এলাকার বাসিন্দা এমরান হোসেন বলেন, “মাসুম আমাদের এলাকার গর্ব। তার তৈরি মেশিনে আমরা উপকার পাচ্ছি। ডেঙ্গুর সময় এই যন্ত্র অনেক কাজে আসবে।”

অন্যদিকে, কুমিল্লা জেলা যুব উন্নয়ন অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মো. সামসুজ্জামান বলেন, “বাজারে যেখানে একটি উন্নতমানের ফগার মেশিন কিনতে এক লাখ টাকা লাগে, সেখানে মাসুমের যন্ত্রটি অনেক সাশ্রয়ী। আমরা এই উদ্ভাবনকে সম্প্রসারণে সহায়তা করব।”

FAQ:

প্রশ্ন: মাসুম বিল্লাহ কী উদ্ভাবন করেছেন?

উত্তর: মাত্র ৬৫০০ টাকায় একটি কার্যকর ফগার মেশিন তৈরি করেছেন, যা মশা নিধনে ব্যবহার হয়।

প্রশ্ন: যন্ত্রটি কীভাবে কাজ করে?

উত্তর: ২৫০ গ্রাম বিউটেন গ্যাস ও ২ লিটার রাসায়নিক দিয়ে চালানো হয়, যা ১ লাখ ২০ হাজার বর্গফুট এলাকায় কার্যকর।

প্রশ্ন: তিনি কোথায় এই যন্ত্র তৈরি করছেন?

উত্তর: কুমিল্লার চৌদ্দগ্রামের নিজ বাড়িতে স্থাপিত কারখানায়।

প্রশ্ন: সরকারি সহায়তা কি মিলছে?

উত্তর: হ্যাঁ, যুব উন্নয়ন অধিদপ্তর উৎপাদন বাড়াতে সহায়তা করার আশ্বাস দিয়েছে।

মো: রাজিব আলী/

আপনার জন্য বাছাই করা কিছু নিউজ