ঢাকা, মঙ্গলবার, ১৫ জুলাই ২০২৫, ৩১ আষাঢ় ১৪৩২

বাবা-মায়ের বিরুদ্ধে মামলায় মেহরিন, শেষ পর্যন্ত হার মানলেন পরিবার

সারাদেশ ডেস্ক . ২৪আপডেটনিউজ
২০২৫ জুলাই ১৫ ২০:০৩:২২
বাবা-মায়ের বিরুদ্ধে মামলায় মেহরিন, শেষ পর্যন্ত হার মানলেন পরিবার

আইনি লড়াই নয়, এবার বোঝাপড়ার পথে ফিরছে মেহরিনের পরিবার

নিজস্ব প্রতিবেদক: ঢাকার সিএমএম আদালতে নিজের বাবা-মায়ের বিরুদ্ধেই মামলা করে আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে চলে এসেছিলেন তরুণী মেহরিন আহমেদ।

'পারিবারিক সহিংসতা প্রতিরোধ ও সুরক্ষা আইন, ২০১০'-এর আওতায় দায়ের করা মামলায় তিনি আদালতের কাছে নিজের মা-বাবার হাত থেকেই সুরক্ষা চেয়েছিলেন।

এ ঘটনা শুধু বিস্ময়কর নয়, বরং পারিবারিক মূল্যবোধ ও সামাজিক নৈতিকতার ক্ষেত্রে নতুন এক প্রশ্নও তুলে দেয়—সন্তান যখন আইনের কাছে আশ্রয় খোঁজে, তখন পরিবার কোথায় দাঁড়ায়?

সম্পর্কের টানাপোড়েন থেকে আদালতের পথ

মেহরিনের পরিবার বাইরে থেকে দেখতে হয়তো স্বাভাবিকই ছিল—কর্মজীবী বাবা-মা, ইংলিশ মিডিয়ামে পড়ুয়া মেয়ে। কিন্তু সেই বাইরের গ্ল্যামারের আড়ালে জমে উঠছিল সম্পর্কের শূন্যতা।

পাঁচ-ছয় বছর ধরে মা-মেয়ের মধ্যে তেমন কোনো কথাবার্তাই হয়নি, একই ছাদের নিচে থেকেও ছিলেন যেন আলাদা দুই পৃথিবীর বাসিন্দা।এই ভাঙনের চূড়ান্ত প্রকাশ ঘটে যখন মেহরিন সাহস করে বাবা-মায়ের বিরুদ্ধেই আদালতের দ্বারস্থ হন।

মামলা থেকে মধ্যস্থতায়—হার মানলেন পরিবার

ঘটনার প্রায় এক মাস পর এই মামলায় আসে নতুন মোড়।

মঙ্গলবার এক সংবাদ সম্মেলনে মেহরিনের আইনজীবী জানান, মেহরিনের মা এখন আর আইনি লড়াই নয়, মেয়ের সঙ্গে বোঝাপড়ার পথেই ফিরতে চান।

তিনি লিখিতভাবে কনসিলিয়েশন (মধ্যস্থতা) চেয়ে আবেদন করেছেন এবং জানান, মেয়ে সম্পর্কে তিনি আর ভুল বোঝাবুঝি রাখতে চান না।

মেহরিনের আইনজীবীর ভাষায়,

“মেহরিন অত্যন্ত মেধাবী ও আত্মমর্যাদাসম্পন্ন এক তরুণী। তবে কর্মজীবী মা-বাবা হওয়ার কারণে তাদের মধ্যে দীর্ঘদিন যোগাযোগহীনতা ছিল। এখন পরিবার নিজ থেকেই সমাধানের চেষ্টা করছে।”

সমাজে বার্তা দিল মেহরিনের সিদ্ধান্ত

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অপরাধ সমাজবিজ্ঞানী ড. তৌহিদুল হক বলেন,

“এটা নিছক একটি মামলা নয়। এটা আমাদের সমাজে পারিবারিক সম্পর্কের ভাঙনের প্রতিচ্ছবি। মেহরিনের মতো ঘটনা হয়তো অনেক পরিবারেই ঘটছে, শুধু প্রকাশ পাচ্ছে না।”

তিনি আরও বলেন,

“শিক্ষা বা স্ট্যাটাস নয়—পরিবারে সবচেয়ে জরুরি হলো সংবেদনশীল সম্পর্ক, সম্মান ও বোঝাপড়া। সন্তানদের মাঝে নৈতিকতা ও মূল্যবোধ গড়ে তোলাও মূলত পারিবারিক দায়িত্ব।”

ভারতীয় এক যুবকের মামলা মনে করায় এই ঘটনা

২০১৯ সালে ভারতের নাগরিক রাফায়েল স্যামুয়েল বিশ্বজুড়ে চাঞ্চল্য ছড়ান—তিনি মা-বাবার বিরুদ্ধে মামলা করেন “তাকে জিজ্ঞেস না করেই জন্ম দেওয়ার” অভিযোগে।

সে সময় পুরো বিশ্বে বিষয়টি নিয়ে হাস্যরসের পাশাপাশি উঠে আসে গভীর সামাজিক আলোচনা।

মেহরিনের মামলাও অনেকটা তেমনই—তবে এখানকার প্রেক্ষাপট আরও বাস্তব, আরও সম্পর্কনির্ভর।

পরিণতি যাই হোক, আলোচনার দরজা খুলে দিয়েছে এই ঘটনা

মামলা শেষ পর্যন্ত চলবে কি না, মেহরিন ও তার পরিবার আদালতের বাইরে একে সমাধান করতে পারবেন কি না—তা সময়ই বলে দেবে।

তবে একথা নিশ্চিত, এই ঘটনা আমাদের চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিয়েছে—পরিবারের ভেতরেও নিরাপত্তাহীনতা তৈরি হতে পারে, যদি সম্পর্কের যত্ন না নেওয়া হয়।

এখন দেখা যাক—আইন নয়, ভালোবাসা ও বোঝাপড়ার পথেই কি মেহরিনের পরিবার আবার এক হবে?

আল-আমিন ইসলাম/

আপনার জন্য বাছাই করা কিছু নিউজ