ঢাকা, মঙ্গলবার, ২২ জুলাই ২০২৫, ৭ শ্রাবণ ১৪৩২

২০ প্রাণ বাঁচিয়ে নিঃশব্দে বিদায় নিলেন জিয়ার ভাতিজি মাহরিন

জাতীয় ডেস্ক . ২৪আপডেটনিউজ
২০২৫ জুলাই ২২ ১৩:১০:২৮
২০ প্রাণ বাঁচিয়ে নিঃশব্দে বিদায় নিলেন জিয়ার ভাতিজি মাহরিন

সাহস, আত্মত্যাগ আর নীরব ভালোবাসার এক গল্প

নিজস্ব প্রতিবেদক: নিজের জীবনের বিনিময়ে রক্ষা করলেন ২০ শিক্ষার্থীর জীবন। কোনো মিডিয়ার সামনে আসেননি, নাম চেয়ে নেননি কারও কাছ থেকে—তিনি ছিলেন নিঃশব্দ এক আলোর নাম। তিনি মাহরিন চৌধুরী, প্রয়াত রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের ভাতিজি। পরিচয়টা বড় করেই কখনো বলেননি, বরং চুপিচুপি দায়িত্ব পালন করে গেছেন জীবনের শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত।

রাজধানীর উত্তরা এলাকায় সোমবার (২১ জুলাই) মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজের ওপর ভেঙে পড়ে বিমানবাহিনীর একটি প্রশিক্ষণ বিমান। পুরো ভবনজুড়ে আতঙ্ক, ধোঁয়া আর ছুটোছুটির মাঝেও ধীরে, কিন্তু দৃঢ় কণ্ঠে এগিয়ে যান একজন নারী—স্কুলেরই শিক্ষিকা মাহরিন চৌধুরী। লক্ষ্য একটাই—ভবনের ভেতরে আটকে পড়া শিক্ষার্থীদের নিরাপদে বের করে আনা।

তিনি সফল হন। একে একে ২০ জন শিক্ষার্থীকে জীবন থেকে টেনে আনেন নিরাপদ আশ্রয়ে। কিন্তু নিজে আর ফিরে আসতে পারেননি। ভবনের ভেতরেই দগ্ধ হন ভয়াবহভাবে। পরে গুরুতর অবস্থায় নেওয়া হয় জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে। সেখানে লাইফ সাপোর্টে থাকা অবস্থায় রাত সাড়ে সাতটায় তিনি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন।

জাতীয় বার্ন ইউনিটের আবাসিক সার্জন ডা. শাওন বিন রহমান তার মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করেন।

মাহরিন চৌধুরীর মৃত্যু যেন কেবল একটি দুর্ঘটনা নয়, এটি এক আত্মত্যাগের প্রতীক হয়ে রইল। স্বামী মনসুর হেলাল জানান, ভোরেই মাহরিনের মরদেহ ঢাকা থেকে নিজ গ্রাম নীলফামারীর জলঢাকার বোগলাগাড়ী চৌধুরী পাড়ায় নেওয়া হয়। পারিবারিক কবরস্থানে তাকে সমাহিত করা হয়েছে।

শিক্ষিকা মাহরিনের জীবন ছিল আরও অনেক গল্পে পূর্ণ। তিনি ছিলেন মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজের একজন আদর্শ শিক্ষিকা। সততা, দায়িত্ববোধ আর মানবিকতা ছিল তার জীবনের মূলমন্ত্র।

স্বজনরা জানান, রাজনৈতিকভাবে সক্রিয় না থাকলেও বিএনপির দুঃসময়ে তিনি ছিলেন একজন সাহসী সহযাত্রী। যখন অনেকে সামনে আসতেন না, তখন মাহরিন চুপিচুপি খাবার পৌঁছে দিতেন হাসপাতালে বা কারাগারে অসুস্থ নেতাকর্মীদের জন্য। অথচ নিজে কখনো নিজের পরিচয় সামনে আনতেন না। প্রচারবিমুখ এই নারীর জীবনের বড় পরিচয় ছিল—মানুষের পাশে থাকা।

তার মামাতো ভাই এম আর চৌধুরী প্রয়াত রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের খুবই ঘনিষ্ঠ ছিলেন। জিয়ার মৃত্যুর পর এই চৌধুরী পরিবারকে আগলে রেখেছিলেন ভাই মহিদুর রহমান। এই পরিবার থেকেই উঠে আসা মাহরিন যেন বহন করছিলেন দায়িত্বের এক নীরব আলো।

মাহরিন চৌধুরীর মৃত্যুতে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে শোকের ঢেউ বয়ে যাচ্ছে। শিক্ষার্থীরা তাকে বলছে "মায়ের মতো", সহকর্মীরা বলছে "নীরব নায়িকা"। আর দেশ বলছে—এই এক একজনের জন্যই মানবতা আজও বেঁচে আছে।

মো: রাজিব আলী/

আপনার জন্য বাছাই করা কিছু নিউজ