ঢাকা, শুক্রবার, ৮ আগস্ট ২০২৫, ২৩ শ্রাবণ ১৪৩২

MD. Razib Ali

Senior Reporter

নতুন নামে নতুন প্রতীকে নির্বাচনে অংশ নিচ্ছে আওয়ামী লীগ?

রাজনীতি ডেস্ক . ২৪আপডেটনিউজ
২০২৫ আগস্ট ০৮ ০০:০৬:৫১
নতুন নামে নতুন প্রতীকে নির্বাচনে অংশ নিচ্ছে আওয়ামী লীগ?

গোপন কৌশলে নির্বাচনী প্রস্তুতি, বাড়ছে রাজনৈতিক উত্তাপ

নিজস্ব প্রতিবেদক: বাংলাদেশের রাজনৈতিক অঙ্গন আবারও উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে ২০২৬ সালের ফেব্রুয়ারিতে অনুষ্ঠেয় ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে ঘিরে। অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস সম্প্রতি জাতির উদ্দেশ্যে দেওয়া ভাষণে এই নির্বাচনের আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দেন। এরপরই দেশের রাজনীতিতে শুরু হয়েছে নতুন হিসাব-নিকাশ, কৌশল নির্ধারণ ও সম্ভাব্য জোট গঠনের আলোচনা।

এই নির্বাচনের অন্যতম আলোচিত বিষয় হয়ে উঠেছে ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগের সম্ভাব্য গোপন অংশগ্রহণ। যদিও দলটি আনুষ্ঠানিকভাবে নিষিদ্ধ, তবে রাজনৈতিক মহলে গুঞ্জন—আওয়ামী লীগ ভিন্ন নামে ও প্রতীকে নির্বাচনে অংশ নিতে তৎপর হয়ে উঠেছে।

আওয়ামী লীগের ‘ছদ্মবেশী’ প্রস্তুতি

বিভিন্ন সূত্র ও গণমাধ্যমের প্রতিবেদনে দাবি করা হয়েছে, নিষিদ্ধ থাকলেও আওয়ামী লীগ সরাসরি নির্বাচনে অংশ না নিয়ে ‘স্বতন্ত্র’ প্রার্থী বা ডামি রাজনৈতিক দল গঠনের মাধ্যমে নির্বাচন করার কৌশল নিচ্ছে। এই কৌশলের আওতায় থাকবে নতুন মুখ, নতুন প্রতীক ও নতুন দলীয় ব্যানার—তবে মূল নেপথ্য নিয়ন্ত্রণ থাকবে পুরনো নেতাদের হাতেই।

বিশ্লেষকরা বলছেন, আওয়ামী লীগ তাদের দীর্ঘদিনের প্রশাসনিক অভিজ্ঞতা, বিপুল অর্থবিত্ত এবং নেটওয়ার্ককে কাজে লাগিয়ে নির্বাচনে প্রভাব বিস্তারের পরিকল্পনা করছে। নিষিদ্ধ থাকলেও মাঠ ছাড়েনি দলটি, বরং নির্বাচনী কৌশলে এসেছে বৈচিত্র্য ও গোপনীয়তা।

গ্রেপ্তার ও প্রশাসনিক তৎপরতা বাড়ছে

গোপনে নির্বাচনী প্রশিক্ষণ দেওয়ার অভিযোগে এক সেনা কর্মকর্তাকে আটক করা হয় সম্প্রতি, যেটি এই গোপন তৎপরতার প্রমাণ হিসেবে বিবেচনা করছেন অনেকে। রাজধানীর বসুন্ধরার একটি কনভেনশন সেন্টারে গোপন বৈঠকের সময় আওয়ামী লীগ ও তার সহযোগী সংগঠনের একাধিক নেতাকর্মীকে গ্রেপ্তার করা হয়।

প্রত্যক্ষদর্শী সূত্রে জানা গেছে, বৈঠকে সরকারবিরোধী স্লোগান, ঢাকায় লোক জড়ো করে অস্থিতিশীল পরিবেশ তৈরি ও নির্বাচনে প্রভাব বিস্তারের নানা পরিকল্পনা ছিল আলোচনায়।

এদিকে নির্বাচন কমিশন বিগত তিনটি জাতীয় নির্বাচনে দায়িত্বে থাকা নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটদের তথ্য চেয়ে পাঠিয়েছে, যা রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে স্বচ্ছতা ও নিরপেক্ষতা প্রশ্নে উদ্বেগের ইঙ্গিত দেয়।

ইসির অবস্থান

প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) এ এম এম নাসির উদ্দীন সাংবাদিকদের জানিয়েছেন, নিষিদ্ধ রাজনৈতিক দলের সদস্যরা ভোটার হিসেবে ভোট দিতে পারবেন। তবে তারা প্রার্থী হতে পারবেন কিনা—সে বিষয়ে তিনি সুস্পষ্ট বক্তব্য দেননি।

তবে কমিশন একটি অংশগ্রহণমূলক, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন অনুষ্ঠানে বদ্ধপরিকর বলে জানান সিইসি। ভোটারদের আস্থা ফেরাতে নেওয়া হয়েছে একাধিক পদক্ষেপ।

বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের প্রতিক্রিয়া

বিএনপি, গণফোরামসহ বেশ কয়েকটি দল এই নির্বাচনের সিদ্ধান্তকে ইতিবাচক হিসেবে গ্রহণ করেছে। তারা অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের আহ্বান জানিয়ে এর প্রস্তুতিও শুরু করেছে।

অন্যদিকে জামায়াতে ইসলামীর মতো কিছু রাজনৈতিক দল ‘জুলাই সনদ’ অনুসারে নির্বাচন আয়োজনের দাবি জানিয়েছে। তাদের মতে, এখনও নির্বাচনের পর্যাপ্ত পরিবেশ তৈরি হয়নি এবং সরকারের আরও নিরপেক্ষ আচরণ প্রয়োজন।

জটিল সমীকরণের সামনে বাংলাদেশ

২০২৬ সালের জাতীয় নির্বাচনকে ঘিরে বাংলাদেশের রাজনীতিতে এক নতুন জটিলতা সৃষ্টি হয়েছে। একদিকে ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগের ছায়াতন্ত্রে নির্বাচনী অংশগ্রহণের চেষ্টা, অন্যদিকে অন্তর্বর্তী সরকারের নিরপেক্ষতা ও নির্বাচন কমিশনের স্বাধীনতা নিয়ে প্রশ্ন—সব মিলিয়ে নির্বাচন ঘিরে জনগণের মনে মিশ্র প্রতিক্রিয়া কাজ করছে।

নির্বাচনের দিন যতই ঘনিয়ে আসছে, ততই বাড়ছে রাজনৈতিক উত্তাপ, সন্দেহ ও নাটকীয়তা। দেশের জনগণ অপেক্ষা করছে একটি অবাধ, সুষ্ঠু ও নির্ভেজাল নির্বাচনের, যেখানে তারা নির্ভয়ে ও স্বাধীনভাবে তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পারবে।

মো: রাজিব আলী/

পাঠকের মতামত:

আপনার জন্য বাছাই করা কিছু নিউজ

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ