ঢাকা, শুক্রবার, ৮ আগস্ট ২০২৫, ২৪ শ্রাবণ ১৪৩২

জুম্মার নামাজের নিয়ম ও নিয়ত; ফজিলত ও গুরুত্বপূর্ণ দোয়া

ধর্ম ডেস্ক . ২৪আপডেটনিউজ
২০২৫ আগস্ট ০৮ ০৯:৪৭:৩১
জুম্মার নামাজের নিয়ম ও নিয়ত; ফজিলত ও গুরুত্বপূর্ণ দোয়া

নিজস্ব প্রতিবেদক: সপ্তাহের সাতটি দিনের ভিড়ে শুক্রবার যেন এক নিঃশব্দ আহ্বান—আত্মার দিকে, ঈমানের দিকে, প্রভুর দিকে ফেরার এক বিশেষ দিন। মুসলিম উম্মাহর সাপ্তাহিক ঈদ বলা হয় যাকে, সেই জুমার দিন কেবল একটি ধর্মীয় আচার নয়—বরং তা এক ঐশী আয়োজন। আকাশ-জমিনের স্রষ্টা আল্লাহ তায়ালা যেদিন সৃষ্টি কর্ম সম্পন্ন করলেন, যেদিন প্রথম মানব আদম (আ.) সৃষ্টি হলেন, জান্নাতে প্রবেশ করলেন, আবার পৃথিবীতে অবতীর্ণ হলেন—সেই দিনই শুক্রবার।

এই দিনেই পৃথিবীর ইতিহাস শেষ হবে। কেয়ামতের সূর বাজবে ঠিক এদিনেই। অতএব, এ দিনটি কেবল অতীতের গৌরব নয়, বরং ভবিষ্যতের ভয় এবং বর্তমানের সেরা আশ্রয়।

ইয়াওমুল জুমা: হারানো দিনটির ফিরে পাওয়া সৌভাগ্য

হাদিসে পাওয়া যায়, পূর্ববর্তী জাতিগুলো জুমার দিনের প্রকৃত মর্যাদা থেকে বঞ্চিত ছিল। ইহুদিরা শনিবারকে তাদের উপাসনার দিন বানালো, খ্রিস্টানরা রবিবারকে। আল্লাহ তায়ালা মুসলমানদের জন্য নির্ধারণ করলেন শ্রেষ্ঠ দিন—জুমা।

রাসুলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেছেন,

“আল্লাহ তায়ালা আমাদেরকে জুমার মর্যাদা দান করেছেন, যা আগের জাতিরা জানতো না।”

(সহিহ মুসলিম, হাদিস: ৮৫৬)

আমরা, শেষ উম্মত, পেয়েছি এই দিবসের জান্নাতি স্বাদ। এ এক মহা সৌভাগ্য, এক মহা দায়িত্বও বটে।

জুমার দিনের বিশেষ দোয়া: যেখানে গুনাহ মাফ হয়, সওয়াব জমা হয়

হযরত আবু হুরাইরা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুল (সা.) বলেন,

“যে ব্যক্তি আসরের পর বসে বসে নিচের দরুদটি ৮০ বার পাঠ করবে, তার ৮০ বছরের গুনাহ মাফ হয়ে যাবে এবং ৮০ বছরের নফল ইবাদতের সওয়াব তার আমলনামায় লেখা হবে।” (সুবহানাল্লাহ!)

দরুদটি:

“আল্লাহুম্মা সাল্লি আলা মুহাম্মাদিনিন নাবিয়্যিল উম্মিয়্যি ওয়া আলা আলিহি ওয়াসাল্লিম তাসলীমা”

এ যেন এক ছোট্ট ইবাদতের মধ্য দিয়ে অসীম ক্ষমা পাওয়ার দরজা খুলে দেওয়ার ওয়াদা।

জুমার আরও কিছু বরকতময় আমল

এই দিনের প্রতিটি ঘণ্টা, প্রতিটি মিনিট যেন রহমতের বৃষ্টি ঝরায়। কিছু উল্লেখযোগ্য আমল হলো—

সূরা কাহাফ পাঠ: জুমার দিনে এই সূরা পাঠ করলে কিয়ামতের দিন আলোর ঢাল হবে।

দরুদ পাঠ ও জিকির: জুমার রাত ও দিনে নবীজির ওপর বেশি বেশি দরুদ পাঠ করায় রয়েছে বিশেষ ফজিলত।

দু’টি খুতবার মাঝে নিঃশব্দ দোয়া: মনে মনে দোয়া করা তখন অত্যন্ত মর্যাদাপূর্ণ।

সূর্যাস্তের আগে সময়টি জিকির ও দোয়ায় কাটানো: বলা হয়, এই সময় এক অদৃশ্য মুহূর্ত আছে, যেখানে দোয়া কবুল নিশ্চিত।

শিরকমুক্ত ইবাদত: শুধুই আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য দোয়া করা উচিত, অন্য কারও আশায় নয়।

দোয়ার ভেতরের মনোযোগই দোয়া কবুলের চাবিকাঠি

দোয়া করার সময় এক ধরনের একাগ্রতা প্রয়োজন। শুধু মুখে নয়, হৃদয়েও চাই তীব্র চাওয়া।

রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন,

“তোমরা কবুল হওয়ার দৃঢ় বিশ্বাস নিয়ে দোয়া করো। আল্লাহ অমনোযোগী ও উদাস হৃদয়ের দোয়া কবুল করেন না।”

(তিরমিজি, হাদিস: ৩৪৭৯)

আর হাদিসে এসেছে,

“যতক্ষণ বান্দা পাপ বা আত্মীয়তার সম্পর্ক ছিন্নের দোয়া না করে, আল্লাহ তার দোয়া কবুল করেন।”

(মুসলিম, হাদিস: ৬৮২৯)

জুমার নামাজ: মুসলিম জীবনের সাপ্তাহিক ঈমানী সম্মেলন

জুমার দিন শুধুমাত্র আমল বা দোয়ার জন্য নয়, বরং মুসলমানের জীবনে এদিন এক গুরুত্বপূর্ণ ফরজ ইবাদত—জুমার নামাজ।

নামাজের রাকাত বিন্যাস:

১. চার রাকাত সুন্নতে মুয়াক্কাদা (কাবলাল জুমা)

২. দুই রাকাত ফরজ (ইমামের পেছনে)

৩. চার রাকাত সুন্নতে মুয়াক্কাদা (বাদাল জুমা)

নিয়তসমূহ:

কাবলাল জুমা (৪ রাকাত সুন্নত)

“আমি কেবলামুখী হয়ে আল্লাহর ওয়াস্তে চার রাকায়াত কাবলাল জুমার সুন্নতের নিয়ত করলাম। আল্লাহু আকবর।”

ফরজ (২ রাকাত)

“আমি কেবলামুখী হয়ে জুমার দুই রাকায়াত ফরজ নামাজের নিয়ত করলাম। আল্লাহু আকবর।”

বাদাল জুমা (৪ রাকাত)

“আমি কেবলামুখী হয়ে আল্লাহর ওয়াস্তে চার রাকায়াত বাদাল জুমার সুন্নতের নিয়ত করলাম। আল্লাহু আকবর।”

জানুন, কারা জুমার নামাজে ফরজ আদায় করবেন?

ফরজ জুমার নামাজ কেবল সেই সব মুসলিম পুরুষদের জন্য যাঁরা:

প্রাপ্তবয়স্ক (বালেগ)

মুকিম (ভ্রমণরত নন)

স্বাধীন ব্যক্তি

যাঁদের কোনো শরয়ি ওজর নেই

নারী, শিশু, অসুস্থ ব্যক্তি বা ভ্রমণরতদের জন্য জুমা ফরজ নয়, তবে তারা অংশ নিতে পারলে ফজিলত পাওয়া যায়।

জুমার দিনের সুন্নত কাজগুলো

জুমার দিনকে আরও বেশি পবিত্র করতে রাসুল (সা.) কিছু সুন্নত শিক্ষা দিয়েছেন। যেমন:

ভালো জামা বা নতুন পোশাক পরিধান করা

আতর বা সুগন্ধি ব্যবহার করা

নখ কাটা, গোসল করা

সকাল সকাল মসজিদে যাওয়া

মনোযোগসহ খুতবা শোনা

জুমার দিন হোক আত্মশুদ্ধির মঞ্চ

জুমার দিন আমাদের আত্মা ও আমলের পুণর্গঠনের জন্য এক মহা সুযোগ। এটি শুধুই একটি নামাজের দিন নয়, বরং এটি হল এক ঈমানী স্নান, এক আধ্যাত্মিক পুনর্জন্মের সময়। প্রতিটি শুক্রবার যেন হয়ে উঠুক আমাদের জন্য এক নতুন শুরু—যেখানে গুনাহের পাতা ছিঁড়ে ফেলা যায়, ভালো কাজের নতুন খাতা খোলা যায়।

জুমা মোবারক।

FAQ (সর্বাধিক অনুসন্ধিত প্রশ্ন ও সংক্ষিপ্ত উত্তর):

প্রশ্ন ১: জুম্মার নামাজের নিয়ম কী?

উত্তর: জুম্মার নামাজ চার রাকাত কাবলাল জুমা (সুন্নত), দুই রাকাত ফরজ, এবং চার রাকাত বাদাল জুমা (সুন্নত) নিয়ে সম্পন্ন হয়।

প্রশ্ন ২: জুম্মার নামাজের নিয়ত কীভাবে করবেন?

উত্তর: নিয়ত করার সময় কেবলামুখী হয়ে আল্লাহর জন্য নামাজের রাকাত ও ধরন মনের মধ্যে স্থির করে বলতে হয়। যেমন, ফরজ নামাজের নিয়ত: “নাওয়াইতু আন উসকিতা আন জিম্মাতি... আল্লাহু আকবর।”

প্রশ্ন ৩: জুম্মার দিনে কোন দোয়াগুলো বেশি পড়া উচিত?

উত্তর: দরুদ শরিফ বিশেষভাবে বেশি পড়া উত্তম, বিশেষ করে “আল্লাহুম্মা সাল্লি আলা মুহাম্মাদিনিন...” এই দোয়াটি। এছাড়া সূরা কাহফ তিলাওয়াত ও নিয়মিত জিকির করা প্রভাবশালী।

প্রশ্ন ৪: জুম্মার নামাজের ফজিলত কী?

উত্তর: জুম্মার নামাজ ফরজ ও সুন্নতের মাধ্যমে আল্লাহর বিশেষ রহমত লাভ হয়, যা অন্য দিনের নামাজ থেকে বেশি সওয়াবের কারণ।

আল-আমিন ইসলাম/

পাঠকের মতামত:

আপনার জন্য বাছাই করা কিছু নিউজ