ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ২৫ ডিসেম্বর ২০২৫, ১১ পৌষ ১৪৩২

তারেক রহমানের স্বদেশ প্রত্যাবর্তন: ভারতের নয়া কূটনৈতিক চাল?

রাজনীতি ডেস্ক . ২৪আপডেটনিউজ
২০২৫ ডিসেম্বর ২৫ ২২:৩৩:৪৮
তারেক রহমানের স্বদেশ প্রত্যাবর্তন: ভারতের নয়া কূটনৈতিক চাল?

বাংলাদেশের সাম্প্রতিক রাজনৈতিক পটপরিবর্তন শুধু দেশের অভ্যন্তরেই নয়, বরং পুরো দক্ষিণ এশিয়ার ভূ-রাজনৈতিক মানচিত্রে বড় ধরনের পরিবর্তন নিয়ে এসেছে। দীর্ঘ ১৭ বছরের নির্বাসন কাটিয়ে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের দেশে প্রত্যাবর্তন এবং বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের অধীনে ভারতের সাথে বাংলাদেশের সম্পর্কের টানাপোড়েন এখন আন্তর্জাতিক মহলে আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু।

ভারত-বাংলাদেশ সম্পর্কের টানাপোড়েন

২০২৪ সালের গণঅভ্যুত্থানের পর ঐতিহাসিক, সাংস্কৃতিক ও বাণিজ্যিকভাবে ঘনিষ্ঠ ভারত-বাংলাদেশ সম্পর্কের মধ্যে বড় ধরনের স্থবিরতা দেখা দিয়েছে। অভিযোগ রয়েছে, দীর্ঘ সময় ধরে নয়াদিল্লি বাংলাদেশকে একটি রাষ্ট্র হিসেবে দেখার চেয়ে আওয়ামী লীগের দৃষ্টিভিকোণ থেকে দেখতেই বেশি স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করেছে। আওয়ামী লীগের মাধ্যমে বাংলাদেশে প্রভাব বিস্তারের এই কৌশল এখন ভারতের জন্য বুমেরাং হয়ে দাঁড়িয়েছে। শেখ হাসিনা ও আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতাদের ভারতে আশ্রয় প্রদান এবং বাংলাদেশে সাম্প্রতিক ভারত-বিরোধী মনোভাব বৃদ্ধির ফলে দুই দেশের সম্পর্ক এখন সর্বোচ্চ তিক্ততার পর্যায়ে রয়েছে।

ইসলামপন্থী দলগুলোর উত্থান ও ভারতের উদ্বেগ

ভারতীয় সংবাদমাধ্যম 'ইন্ডিয়া টুডে'-র এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বাংলাদেশের রাজনীতিতে বর্তমানে জামায়াতে ইসলামীসহ ইসলামপন্থী দলগুলো ইতিহাসের সবচেয়ে শক্তিশালী অবস্থানে রয়েছে। শেখ হাসিনা সরকারের সময় ভারতের সমর্থনে এসব দলকে দমন করা হলেও, বর্তমান পরিস্থিতিতে তাদের সক্রিয়তা ভারতের জন্য বাড়তি উদ্বেগের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। বিশেষ করে, ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের সাথে পাকিস্তানের ঘনিষ্ঠতার ইঙ্গিত নয়াদিল্লির দুশ্চিন্তা আরও বাড়িয়ে দিয়েছে।

তারেক রহমানের প্রত্যাবর্তন: ভারতের জন্য কেন 'সুখবর'?

দীর্ঘ ১৭ বছর পর তারেক রহমানের দেশে ফিরে আসা এবং বিএনপির রাজনীতিতে সক্রিয় হওয়াকে ভারত এখন ইতিবাচক হিসেবে দেখছে। ইন্ডিয়া টুডে-র বিশ্লেষণে তারেক রহমানের ফিরে আসাকে ভারতের জন্য একটি 'ইতিবাচক সংবাদ' হিসেবে বর্ণনা করা হয়েছে। এর কারণ হিসেবে বলা হয়েছে:

১. আওয়ামী লীগ নির্বাচনে অংশ নিতে না পারায় বিএনপিই এখন দেশের সবচেয়ে বড় ও অভিজ্ঞ রাজনৈতিক শক্তি।

২. চরমপন্থী ইসলামপন্থী দলগুলোর তুলনায় বিএনপিকে ভারত অনেক বেশি উদার ও গণতান্ত্রিক বিকল্প হিসেবে বিবেচনা করছে।

৩. রাজনৈতিক বাস্তবতা বিবেচনায় ভারতের সামনে এখন বিএনপির ওপর আস্থা রাখা ছাড়া খুব বেশি বিকল্প নেই।

অতীত ও বর্তমানের কূটনৈতিক সমীকরণ

প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, বেগম খালেদা জিয়ার শাসন আমলে বিএনপি ভারতের সাথে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক বজায় রেখেছিল এবং চীন ও পাকিস্তানের সাথে ভারসাম্যের রাজনীতি বজায় রেখেছিল। কিন্তু বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের আমলে পাকিস্তানের সাথে ক্রমবর্ধমান ঘনিষ্ঠতা ভারতকে নতুন করে ভাবতে বাধ্য করছে। এই পরিস্থিতিতে তারেক রহমানের নেতৃত্বে বিএনপি যদি আগামীতে সরকার গঠন করে, তবে ভারতের সাথে পুনরায় একটি স্থিতিশীল সম্পর্ক তৈরি হতে পারে বলে আশা করছে নয়াদিল্লি।

তারেক রহমানের প্রত্যাবর্তন বিএনপির নেতাকর্মীদের মধ্যে নতুন উদ্দীপনা সৃষ্টি করেছে, যা আগামী ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে দলটিকে আরও শক্তিশালী অবস্থানে নিয়ে যাবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। এখন দেখার বিষয়, দক্ষিণ এশিয়ার এই পরিবর্তিত ভূ-রাজনীতিতে ভারত ও বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ সম্পর্ক কোন দিকে মোড় নেয়।

আল-মামুন/

ট্যাগ: শেখ হাসিনা ড. মুহাম্মদ ইউনূস তারেক রহমান ভারত-বাংলাদেশ সম্পর্ক তারেক রহমানের দেশে ফেরা তারেক রহমানের প্রত্যাবর্তন ১৩তম জাতীয় সংসদ নির্বাচন বিএনপির রাজনীতি দক্ষিণ এশিয়ার ভূ-রাজনীতি ইন্ডিয়া টুডে রিপোর্ট তারেক রহমান কবে দেশে ফিরলেন? তারেক রহমানকে নিয়ে ভারতের নতুন পরিকল্পনা কী? বাংলাদেশের রাজনীতিতে তারেক রহমানের প্রভাব বিএনপি ও ভারতের বর্তমান সম্পর্ক ২০২৫ ইন্ডিয়া টুডে-র রিপোর্টে তারেক রহমান সম্পর্কে কী বলা হয়েছে? বাংলাদেশের ইসলামপন্থী দলগুলো নিয়ে ভারতের উদ্বেগ বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকার ও ভারত সম্পর্ক আওয়ামী লীগ ছাড়া নির্বাচন ও বিএনপির অবস্থান এটিএন নিউজ

পাঠকের মতামত:

আপনার জন্য বাছাই করা কিছু নিউজ