ঢাকা, শুক্রবার, ৮ আগস্ট ২০২৫, ২৪ শ্রাবণ ১৪৩২

সুদানে আমিরাতের বিমানে ভয়াবহ হামলা, ৪০ ভাড়াটে সেনা নিহত—পেছনে কারা?

বিশ্ব ডেস্ক . ২৪আপডেটনিউজ
২০২৫ আগস্ট ০৮ ১৮:৫২:২৫
সুদানে আমিরাতের বিমানে ভয়াবহ হামলা, ৪০ ভাড়াটে সেনা নিহত—পেছনে কারা?

নিজস্ব প্রতিবেদক: আফ্রিকার যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশ সুদানে এবার ভয়াবহ এক হামলার শিকার হলো সংযুক্ত আরব আমিরাতের একটি সামরিক বিমান। দেশটির দারফুর অঞ্চলের নায়লা বিমানবন্দরে অবতরণের মুহূর্তে রকেট হামলায় ধ্বংস হয়ে যায় বিমানটি। এতে কলম্বিয়ার ৪০ জন ভাড়াটে সেনাসহ বিমানে থাকা সবাই প্রাণ হারান। বিস্ফোরণের তীব্রতায় মুহূর্তেই আকাশে ছাই হয়ে যায় পুরো বিমান।

বিমানটি আমিরাতের একটি সামরিক কার্গো ফ্লাইট ছিল, যার উদ্দেশ্য ছিল সুদানে র‌্যাপিড সাপোর্ট ফোর্সেস (RSF)-এর জন্য অস্ত্র এবং ভাড়াটে সেনা সরবরাহ। উড্ডয়ন করেছিল পারস্য উপসাগরে অবস্থিত আমিরাতের একটি নৌঘাঁটি থেকে। কিন্তু দারফুরে অবতরণের আগমুহূর্তেই সেই মিশন চিরতরে থেমে গেল।

অবাক করার বিষয় হলো—এই হামলার দায় স্বীকার করেছে সুদান সরকারের নিজস্ব সেনাবাহিনী। তাদের দাবি, তারা জানত এই বিমানে রয়েছে RSF-এর জন্য অস্ত্র এবং বিদেশি যোদ্ধা। দেশের ভেতর এমন হস্তক্ষেপ ঠেকাতে বিমানটি লক্ষ্য করে রকেট নিক্ষেপ করা হয়, এবং তাতে শতভাগ সাফল্য আসে।

কারা এই ৪০ জন?

নিহতদের সবাই কলম্বিয়ার নাগরিক এবং পেশাদার ভাড়াটে সেনা বলে নিশ্চিত করেছে সুদানি সামরিক বাহিনী। তারা বলছে, আমিরাত এসব ভাড়াটে যোদ্ধাকে চুক্তিভিত্তিকভাবে নিয়োগ দিয়ে RSF-এর হয়ে যুদ্ধ করাচ্ছে। সাম্প্রতিক সময়ে ৮০ জনের বেশি কলম্বিয়ান যোদ্ধা সুদানে প্রবেশ করেছে বলেও দাবি সেনাবাহিনীর।

এদিকে, কলম্বিয়ার প্রেসিডেন্ট গুস্তাভো পেত্রো নিহত সেনাদের মরদেহ দেশে ফিরিয়ে আনার ঘোষণা দিয়েছেন। এক্সে (Twitter) দেওয়া এক পোস্টে তিনি লেখেন, “আমাদের নাগরিকদের মৃত্যু শোকাবহ, আমরা তাদের মরদেহ দ্রুত ফিরিয়ে আনার ব্যবস্থা নিচ্ছি।”

আমিরাতের ভূমিকা নিয়ে বিতর্ক

সুদানের সেনাপ্রধান জেনারেল আবদেল ফাত্তাহ আল বুরহান বহুদিন ধরেই অভিযোগ করে আসছেন, RSF-এর পেছনে রয়েছে বিদেশি শক্তির প্রত্যক্ষ মদদ—বিশেষ করে সংযুক্ত আরব আমিরাতের। যদিও আমিরাত সব সময় এই অভিযোগ অস্বীকার করে এসেছে।

জাতিসংঘের এক সাম্প্রতিক প্রতিবেদনে বলা হয়, ২০২৪ সালের শেষ প্রান্তিক থেকেই কলম্বিয়ান ভাড়াটে সেনারা RSF-এর পক্ষে সক্রিয়ভাবে লড়াই করছে। তবে এবার বিমান বিধ্বস্ত হয়ে এই তথ্য আরও জোরালোভাবে সামনে এসেছে।

আন্তর্জাতিক মহলে উত্তেজনা

এই হামলার পর আন্তর্জাতিক অঙ্গনে বাড়ছে উদ্বেগ। বিশ্লেষকরা বলছেন, একটি রাষ্ট্র যদি ভাড়াটে সেনাদের মাধ্যমে আরেক দেশের গৃহযুদ্ধে হস্তক্ষেপ করে, তা বিশ্ব রাজনীতির জন্য বড় হুমকি। একইসঙ্গে প্রশ্ন উঠছে—পেছনে আসলে কে? কাদের মদদে চলছে এই ‘ভাড়াটে যুদ্ধ’?

এই বিমান হামলা শুধু একটি যন্ত্রের ধ্বংস নয়, বরং সুদানের গৃহযুদ্ধের গভীরে লুকিয়ে থাকা আন্তর্জাতিক রণনীতির মুখোশ উন্মোচন। পরিস্থিতি এখন আরও জটিল, আর যুদ্ধ থামার কোনো লক্ষণ নেই।

মো: রাজিব আলী/

পাঠকের মতামত:

আপনার জন্য বাছাই করা কিছু নিউজ