ঢাকা, শুক্রবার, ৮ আগস্ট ২০২৫, ২৪ শ্রাবণ ১৪৩২

MD. Razib Ali

Senior Reporter

এএফসি বাছাই: দক্ষিণ কোরিয়াকে সরিয়ে পয়েন্ট টেবিলে বাংলাদেশের চমক

খেলা ডেস্ক . ২৪আপডেটনিউজ
২০২৫ আগস্ট ০৮ ১৯:১৯:১৪
এএফসি বাছাই: দক্ষিণ কোরিয়াকে সরিয়ে পয়েন্ট টেবিলে বাংলাদেশের চমক

নিজস্ব প্রতিবেদক: এ যেন লাল-সবুজে মোড়া স্বপ্নের উড়ান! এএফসি অনূর্ধ্ব-২০ নারী ফুটবল চ্যাম্পিয়নশিপের বাছাই পর্বে একের পর এক জয় ছিনিয়ে নিচ্ছে বাংলাদেশ নারী দল। লাওসের মাটিতে মাঠে নেমেই প্রথম ম্যাচে ৩-১ গোলের জয়, এরপর পূর্ব তিমুরকে ৮-০ গোলের পাহাড়ে চাপা দিয়ে অদম্য গতি তুলে ধরেছে আফিদা-সাগরিকারা।

এই জয়ে গ্রুপ 'এইচ'-এ এখন একক শীর্ষে বাংলাদেশ। দুই ম্যাচে দুই জয়, গোল ব্যবধান ১১:১ — পয়েন্ট তালিকায় ছয় পয়েন্ট নিয়ে সবার ওপরে তারা। যেখানে দক্ষিণ কোরিয়া, যাদের ধরা হয় এ গ্রুপের জায়ান্ট, তারা দুই ম্যাচে এক জয় ও এক ড্র করে চার পয়েন্টে রয়েছে দ্বিতীয় স্থানে।

পূর্ব তিমুরের বিপক্ষে গোলবন্যা

বলা যায়, গোলের উৎসবে মেতে উঠেছিল বাংলাদেশ দল। ম্যাচজুড়ে একের পর এক আক্রমণে প্রতিপক্ষকে কোণঠাসা করে রাখেন লাল-সবুজের তরুণীরা। হ্যাটট্রিক করে ম্যাচের সেরা পারফর্মার হন তৃষ্ণা। তার তিনটি গোলের মধ্যে শেষ গোলটি ছিল চোখ ধাঁধানো—সাগরিকার চমৎকার ড্রাইভিং রান ও পাসে ফাঁকা পোস্টে নিখুঁত প্লেসিংয়ে বল জালে জড়ান তৃষ্ণা।

তৃষ্ণার আগুনঝরা পারফরম্যান্সের পাশাপাশি আলো ছড়ান সাগরিকাও। একক প্রচেষ্টায় দুর্দান্ত একটি গোল করেন তিনি, যেখানে প্রতিপক্ষ ডিফেন্ডার ও গোলরক্ষককে কাটিয়ে বল পাঠান জালে। লাওসের বিপক্ষেও জোড়া গোল করা এই ফরোয়ার্ড বাংলাদেশের আক্রমণভাগে এখন নির্ভরতার নাম।

যাদুকরী মুহূর্ত: শান্তির অলিম্পিক গোল

ম্যাচের অন্যতম স্মরণীয় দৃশ্য তৈরি করেন শান্তি মারডি। ৩২ মিনিটে তার নেওয়া কর্নার কিক সরাসরি গোলপোস্টের ভেতর দিয়ে জালে প্রবেশ করে। এমন গোলকে ‘অলিম্পিক গোল’ বলা হয় — যেখানে কোনো খেলোয়াড় স্পর্শ না করেই কর্নার কিক থেকে সরাসরি গোল হয়। বলের বক্রতা, গতিপথ এবং সময়ের নিখুঁত ব্যবহারে শান্তি যেন এক দুর্লভ শিল্প সৃষ্টি করলেন!

শান্তির কর্নার কিক থেকেই আসে আরও একটি গোল — এবার গোলদাতা নবিরুন খাতুন। একইভাবে স্বপ্নার কর্নার থেকেও হেডে গোল করেন শিখা। ফলে কর্নার থেকে আসা তিনটি গোলই পরিকল্পিত ট্যাকটিকসের ছাপ রেখে যায়।

দ্বিতীয়ার্ধেও আগুন ঝরায় লাল-সবুজের মেয়েরা

প্রথমার্ধে চার গোলের পর দ্বিতীয়ার্ধেও সেই ধারাবাহিকতা বজায় রাখে বাংলাদেশ। তবে এবার গোলগুলো আসে ওপেন প্লে থেকে — যেখানে ফুটবলের টেকনিক্যাল ও ট্যাকটিক্যাল দক্ষতা ফুটে ওঠে। শেষ সময়ে মুনকি আক্তারের একটি দারুণ গোল দিয়ে ম্যাচের ইতি টানে রেফারির বাঁশি।

গ্রুপের চিত্র ও বাংলাদেশের সম্ভাবনা

পয়েন্ট টেবিলে এখন এই চিত্র:

স্থানদলম্যাচজয়ড্রহারগোল ব্যবধানপয়েন্ট
???????? বাংলাদেশ U20 W ১১:১ (+১০)
???????? দক্ষিণ কোরিয়া U20 W ৯:০ (+৯)
???????? লাওস U20 W ১:৩ (−২)
???????? পূর্ব তিমুর U20 W ০:১৭ (−১৭)

আগামী ম্যাচ বাংলাদেশের বিপক্ষে খেলবে দক্ষিণ কোরিয়া — শক্তিতে ও অভিজ্ঞতায় যাদের তুলনা চলে না। তবুও বাংলাদেশ যদি সম্মানজনক পারফরম্যান্স করে বা গোল ব্যবধান ভালো রাখে, তাহলে আটটি গ্রুপের মধ্যে সেরা তিন রানার্সআপ হিসেবেও মূল পর্বে জায়গা করে নেওয়ার সুযোগ থাকবে।

স্বপ্ন দেখা যাচ্ছে, এবার ছোঁয়ার অপেক্ষা

এই জয় শুধু সংখ্যা নয়, এটি আত্মবিশ্বাসের প্রতিচ্ছবি। এটি প্রমাণ করে, পরিকল্পিত খেলাধুলায় বাংলাদেশ পিছিয়ে নেই। শান্তি, সাগরিকা, তৃষ্ণা, মুনকি — প্রতিটি নাম হয়ে উঠছে ভবিষ্যতের প্রেরণা। দক্ষিণ কোরিয়ার বিপক্ষে লড়াই কেবল ম্যাচ নয়, এটি হতে পারে বাংলাদেশের কিশোরীদের জন্য আন্তর্জাতিক ফুটবলে নিজেকে প্রমাণের মঞ্চ।

আল-আমিন ইসলাম/

পাঠকের মতামত:

আপনার জন্য বাছাই করা কিছু নিউজ

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ