মাছের মাথায় ‘সোনার খনি’, লাখ টাকায় বিক্রি করছেন যশোরের নেওয়াজ

নিজস্ব প্রতিবেদক: একসময় মাছ কাটার পর মাথার ভেতরের অজানা ছোট্ট অংশটি ফেলে দেওয়া হতো অবহেলায়। অথচ সেই অংশই আজ পরিচিতি পাচ্ছে ‘সোনার খনি’ নামে। মাছের মস্তিষ্কের পাশে থাকা ক্ষুদ্র গ্রন্থি পিটুইটারি গ্লান্ড, যা মাছের প্রজনন ক্ষমতা বাড়ায় এবং হরমোন উৎপাদনে অপরিহার্য। এই গ্লান্ডই এখন লাখ টাকার ব্যবসায় রূপ নিয়েছে যশোরের চৌগাছার তরুণ উদ্যোক্তা বিএম নেওয়াজ শরীফের হাতে।
ফেলে দেওয়া অংশ থেকে কোটি টাকার সম্পদ
রুই, কাতলা, মৃগেল, পাঙাস, শিং, মাগুর, বোয়াল—এসব মাছের মাথার ভেতরে থাকে এই পিটুইটারি গ্লান্ড। মাছ কাটার সময় যা সাধারণত নষ্ট হয়ে যেত, সেটিই প্রক্রিয়াজাতকরণের পর হয়ে উঠছে কোটি টাকার সমমূল্যের সম্পদ। বিশেষজ্ঞদের মতে, এক কেজি গ্লান্ডে থাকে প্রায় ৫ থেকে ৬ লাখ পিস। এর বাজারমূল্য এক কোটি টাকারও বেশি। হ্যাচারি, ফার্মাসিউটিক্যাল গবেষণা ও অ্যাকুয়া টেক শিল্পে এর ব্যাপক চাহিদা রয়েছে।
নেওয়াজ শরীফের পথচলা
যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে মৎস্য বিজ্ঞানে পড়াশোনা শেষে নেওয়াজ শুরু করেন নতুন এক যাত্রা। তিনি ফুলসারা ইউনিয়নের নিমতলায় প্রতিষ্ঠা করেছেন ‘জেএসএল এগ্রো ফিসারিজ’ নামের একটি ল্যাবরেটরি। স্থানীয় মাছবাজার থেকে বটিওয়ালাদের (যারা মাছ কাটেন) কাছ থেকে গ্লান্ড সংগ্রহ করে সেখানে সংশোধন ও সংরক্ষণ করা হয়। এরপর সেগুলো বিক্রি করা হয় দেশের বিভিন্ন হ্যাচারিতে।
নেওয়াজ জানান,
“শুরুতে ৬-৭ লাখ টাকা বিনিয়োগ করেছিলাম। এখন প্রতি মাসে প্রায় অর্ধলাখ টাকা লাভ হচ্ছে। এটা সবে শুরু। সামনে বড় পরিসরে কাজ করার পরিকল্পনা আছে।”
দেশীয় চাহিদা ও রপ্তানির সম্ভাবনা
বাংলাদেশে বর্তমানে প্রায় ৯৬৪টি নিবন্ধিত হ্যাচারি রয়েছে। এ হ্যাচারিগুলোর বছরে ৩৫-৪০ কেজি হরমোনের প্রয়োজন হয়, যা পুরোপুরি আমদানিনির্ভর। নেওয়াজের বিশ্বাস, দেশীয়ভাবে উৎপাদন শুরু হলে শুধু আমদানির ওপর নির্ভরশীলতা কমবে না, বরং অতিরিক্ত হরমোন বিদেশেও রপ্তানি করা যাবে।
নতুন কর্মসংস্থান সৃষ্টি
এই উদ্যোগের কারণে উপকৃত হচ্ছেন বাজারের বটিওয়ালারাও। যশোর বড়বাজারের বটিওয়ালা খানজাহান আলী বলেন,
“একটি মাছের মাথা থেকে দুই পিস গ্লান্ড পাওয়া যায়। প্রতিটি ৪ থেকে ৮ টাকায় বিক্রি হয়। এতে আমাদের বাড়তি আয় হচ্ছে।”
পল্লী কর্ম সহায়ক ফাউন্ডেশন (পিকেএফ) ও শিশু নিলয় ফাউন্ডেশন এই খাতের সম্ভাবনা কাজে লাগাতে মাঠপর্যায়ে কাজ করছে। ইতোমধ্যে ২৫ জন বটিওয়ালাকে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে, যাতে দেশের প্রতিটি বাজারে গ্লান্ড সংগ্রহ কার্যক্রম ছড়িয়ে দেওয়া যায়।
সরকারি সহায়তার প্রতিশ্রুতি
চৌগাছা উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা মোহাম্মদ রফিকুল আলম বলেন,
“পিটুইটারি গ্লান্ড আমদানি কমাতে পারলে দেশের মৎস্যখাত উপকৃত হবে। আমরা ইতোমধ্যে নেওয়াজ শরীফের ল্যাব পরিদর্শন করেছি। সরকারিভাবে প্রশিক্ষণসহ সব ধরনের সহায়তা অব্যাহত থাকবে।”
একসময় অবহেলায় ফেলে দেওয়া মাছের মাথার অংশ এখন হয়ে উঠছে সম্পদের ভান্ডার। আর সেই ভান্ডার থেকে দেশের মৎস্য খাতে নতুন দিগন্ত খুলে দিচ্ছেন যশোরের তরুণ নেওয়াজ শরীফ।
আল-আমিন ইসলাম/
পাঠকের মতামত:
আপনার জন্য বাছাই করা কিছু নিউজ
- বিনিয়োগকারীদের জন্য ৬৪% ক্যাশ ডিভিডেন্ড ঘোষণা
- দুই কোম্পানির অস্বাভাবিক শেয়ার দর বৃদ্ধি: ডিএসইর কড়া সতর্কবার্তা জারি
- বিনিয়োগকারীদের জন্য সতর্কবার্তা: ৩,০০০ সদস্যের প্রতারক চক্রের চাঞ্চল্যকর তথ্য ফাঁস
- শেয়ার কারসাজি: বিএসইসি’র কড়া তদন্তের নির্দেশ, বিনিয়োগকারীদের মধ্যে আতঙ্ক
- শেয়ারবাজারে আলোড়ন: ৯ স্টকে বাই সিগন্যাল, নতুন সুযোগ?
- ২,৩০০ কোটি টাকার বন্ডে শেয়ারবাজারে আলোড়ন: বিএসইসি'র অনুমোদন
- বিনিয়োগকারীদের চিন্তা দুর করলো ৯ কোম্পানির শেয়ার
- দুই কোম্পানির ডিভিডেন্ডে হতাশ বিনিয়োগকারীরা
- এইচএসসি রেজাল্ট ২০২৫: ফল নিয়ে যা জানা গেল
- শেয়ারবাজারে আতঙ্ক! ১৪ প্রতিষ্ঠানের রদবদলে অন্ধকারে বিনিয়োগকারীরা
- রেকর্ড চাহিদা: বিনিয়োগকারীদের চাহিদার শীর্ষে ২৪ কোম্পানির শেয়ার
- পুঁজি সংগ্রহে ব্যর্থ শেয়ারবাজার: দায়ী কারা? ফাঁস করলেন বিশেষজ্ঞরা
- সংযুক্ত আরব আমিরাতে ভিসা নিয়মে যুগান্তকারী পরিবর্তন
- ইন্টার মায়ামি বনাম শিকাগো ফায়ার: শেষ ৮ গোলের রোমাঞ্চকর ম্যাচ
- সরকারি বেতন কাঠামো ২০২৫ নিয়ে আসলো নতুন সিদ্ধান্ত