ঢাকা, শনিবার, ১৬ আগস্ট ২০২৫, ১ ভাদ্র ১৪৩২

এক কেজি মাছের পিটুইটারি গ্লান্ডের দাম কোটি টাকা, জানলে অবাক হবেন

সারাদেশ ডেস্ক . ২৪আপডেটনিউজ
২০২৫ আগস্ট ১৬ ২০:১৯:১৮
এক কেজি মাছের পিটুইটারি গ্লান্ডের দাম কোটি টাকা, জানলে অবাক হবেন

নিজস্ব প্রতিবেদক: যশোরের চৌগাছা উপজেলার তরুণ উদ্যোক্তা বিএম নেওয়াজ শরীফ মাছের মাথা থেকে সংগ্রহ করছেন একটি অমূল্য সম্পদ—পিটুইটারি গ্লান্ড, যা বছরে একাধিকবার মাছকে ডিম ছাড়ার সক্ষমতা দেয় এবং হরমোন উৎপাদনের ক্ষেত্রে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এক কেজি প্রক্রিয়াজাত পিটুইটারি গ্লান্ডের বাজারমূল্য কোটি টাকারও বেশি, যা মৎস্য খাতে নতুন সম্ভাবনার দিক উন্মোচন করছে।

পিটুইটারি গ্লান্ড: ফেলে দেওয়া অংশ এখন ‘সোনার খনি’

রুই, কাতলা, মৃগেল, পাঙাস, শিং, মাগুর, বোয়ালসহ কার্প জাতীয় মাছের মাথার ভেতরে থাকা এই ক্ষুদ্র গ্রন্থি সাধারণত মাছ কাটার সময় ফেলে দেওয়া হতো। কিন্তু গবেষণায় দেখা গেছে, এই গ্লান্ড থেকেই কৃত্রিম প্রজননের জন্য অপরিহার্য হরমোন তৈরি করা হয়।

বিশেষজ্ঞদের মতে, এক কেজি গ্লান্ডে থাকে প্রায় ৫–৬ লাখ পিস। হ্যাচারি, ফার্মাসিউটিক্যাল গবেষণা ও অ্যাকুয়া টেক কোম্পানিগুলোতে এর ব্যাপক চাহিদা রয়েছে।

নেওয়াজের ল্যাব ও উদ্যোগ

ফুলসারা ইউনিয়নের নিমতলায় নেওয়াজ শরীফ স্থাপন করেছেন জেএসএল এগ্রো ফিসারিজ। স্থানীয় মাছবাজারের বটিওয়ালাদের কাছ থেকে সংগ্রহ করা গ্লান্ড এখানে সংশোধন ও সংরক্ষণ করা হয়, পরে দেশের বিভিন্ন হ্যাচারিতে সরবরাহ করা হয়।

নেওয়াজ বলেন,

“শুরুতে ৬–৭ লাখ টাকা বিনিয়োগ করেছি। এখন প্রতি মাসে প্রায় অর্ধলাখ টাকা লাভ করছি। এটি সবে শুরু, সামনে বড় পরিসরে কাজ করার পরিকল্পনা আছে।”

দেশীয় চাহিদা ও রপ্তানি সম্ভাবনা

দেশে বর্তমানে নিবন্ধিত হ্যাচারির সংখ্যা প্রায় ৯৬৪টি। এসব হ্যাচারিতে বছরে ৩৫–৪০ কেজি হরমোনের প্রয়োজন হয়, যা এখন পুরোপুরি আমদানির ওপর নির্ভর। দেশের মধ্যে উৎপাদন শুরু করলে আমদানির ওপর নির্ভরতা কমবে এবং অতিরিক্ত হরমোন বিদেশেও রপ্তানি করা সম্ভব হবে।

কর্মসংস্থান সৃষ্টি ও প্রশিক্ষণ

মাছ কাটার সময় ফেলে দেওয়া অংশই নতুন আয়ের উৎস হিসেবে দাঁড়িয়েছে। যশোর বড়বাজারের বটিওয়ালা খানজাহান আলী বলেন,

“প্রতিটি মাছের মাথা থেকে দুই পিস গ্লান্ড সংগ্রহ করা যায়। প্রতিপিস ৪–৮ টাকায় বিক্রি হয়। এতে আমাদের বাড়তি আয় হচ্ছে।”

পল্লী কর্ম সহায়ক ফাউন্ডেশন (পিকেএফ) এবং শিশু নিলয় ফাউন্ডেশনের মাধ্যমে ইতোমধ্যে ২৫ জন বটিওয়ালাকে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে, যাতে দেশের প্রতিটি বাজারে পিটুইটারি গ্লান্ড সংগ্রহ কার্যক্রম ছড়িয়ে দেওয়া যায়।

সরকারি সহায়তা

চৌগাছা উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা মোহাম্মদ রফিকুল আলম বলেন,

“পিটুইটারি গ্লান্ড আমদানি কমাতে পারলে দেশের মৎস্যখাত উপকৃত হবে। আমরা ইতোমধ্যে নেওয়াজের ল্যাব পরিদর্শন করেছি এবং সরকারিভাবে প্রশিক্ষণ ও সহায়তা চালিয়ে যাচ্ছি।”

একসময় ফেলে দেওয়া মাছের মাথার অংশ আজ হয়ে উঠেছে কোটি টাকার সম্পদ। যশোরের তরুণ নেওয়াজ শরীফের উদ্যোগ শুধু স্থানীয় অর্থনীতিতে নয়, জাতীয় পর্যায়েও মৎস্য খাতের নতুন সম্ভাবনার দরজা খুলে দিয়েছে।

FAQ (প্রশ্ন ও উত্তর)

Q1: পিটুইটারি গ্লান্ড কী?

A1: এটি মাছের মাথার ছোট একটি গ্রন্থি, যা হরমোন নিঃসরণ করে মাছের প্রজনন ক্ষমতা বৃদ্ধি করে।

Q2: পিটুইটারি গ্লান্ড কোথায় পাওয়া যায়?

A2: রুই, কাতলা, মৃগেল, পাঙাস, শিং, মাগুর, বোয়ালসহ কার্প জাতীয় মাছের মাথার পেছনের অংশে থাকে।

Q3: পিটুইটারি গ্লান্ডের বাজার মূল্য কত?

A3: প্রক্রিয়াজাতকরণের পর এক কেজির দাম কোটি টাকারও বেশি হতে পারে।

Q4: এটি কীভাবে ব্যবহার করা হয়?

A4: হরমোন উৎপাদন, কৃত্রিম প্রজনন ও হ্যাচারি শিল্পে ব্যবহার করা হয়।

Q5: দেশীয় উৎপাদন কতটা সম্ভব?

A5: দেশে হ্যাচারি ও মৎস্য গবেষণা কেন্দ্রের মাধ্যমে সহজেই উৎপাদন করা সম্ভব, যা আমদানির ওপর নির্ভরতা কমাবে।

Q6: সাধারণ মানুষ বা মাছ কাটার শ্রমিকরা কি উপকৃত হতে পারে?

A6: হ্যাঁ, বটিওয়ালারা পিটুইটারি গ্লান্ড সংগ্রহ করে বাড়তি আয় করতে পারবে এবং প্রশিক্ষণের মাধ্যমে আরও দক্ষ হতে পারবে।

জামিরুল ইসলাম/

পাঠকের মতামত:

আপনার জন্য বাছাই করা কিছু নিউজ