ঢাকা, শনিবার, ৪ অক্টোবর ২০২৫, ১৯ আশ্বিন ১৪৩২

বাংলাদেশ অধিনায়ক আফিদার ভূয়সী প্রশংসা করলো দ্য গার্ডিয়ান

খেলা ডেস্ক . ২৪আপডেটনিউজ
২০২৫ আগস্ট ১৯ ২২:২৫:১২
বাংলাদেশ অধিনায়ক আফিদার ভূয়সী প্রশংসা করলো দ্য গার্ডিয়ান

নিজস্ব প্রতিবেদক: বাংলাদেশ নারী ফুটবল দল লিখেছে নতুন এক ইতিহাস। প্রথমবারের মতো মেয়েদের এশিয়ান কাপের মূলপর্বে খেলতে যাচ্ছে লাল-সবুজের কন্যারা। বয়সভিত্তিক প্রতিযোগিতাতেও (অনূর্ধ্ব-২০) এবারই প্রথম উত্তীর্ণ হয়েছে বাংলাদেশ। বাছাইপর্বে শতভাগ জয় আর দারুণ পারফরম্যান্সের সুবাদে ফিফার সর্বশেষ র‍্যাঙ্কিংয়ে বাংলাদেশ নারী দল এগিয়েছে এক লাফে ২৪ ধাপ, এখন তাদের অবস্থান ১০৪। এই অসাধারণ অর্জনকে বাংলাদেশের ফুটবল ইতিহাসে মাইলফলক হিসেবে দেখছে বিশ্ব গণমাধ্যম।

ব্রিটিশ শীর্ষস্থানীয় পত্রিকা দ্য গার্ডিয়ান বাংলাদেশ দলের এই অগ্রযাত্রা এবং অধিনায়ক আফিদা খন্দকারের নেতৃত্বের ভূয়সী প্রশংসা করেছে। গণমাধ্যমটির সঙ্গে আলাপে তরুণ অধিনায়ক বলেন,

“এই সাফল্য শুধু আমাদের নয়, বরং বাংলাদেশের প্রতিটি মেয়ের, যারা স্বপ্ন দেখতে সাহস করে। আমরা প্রমাণ করেছি—বিশ্বাস, পরিশ্রম আর ঐক্যের মাধ্যমে অসম্ভবকেও সম্ভব করা যায়। তবে এখানেই শেষ নয়, সামনে আরও কঠিন চ্যালেঞ্জ অপেক্ষা করছে, আমরা তা নিতে প্রস্তুত।”

বাবার হাত ধরে ফুটবলে যাত্রা

আফিদার ফুটবলের হাতেখড়ি বাবার কাছ থেকেই। সাতক্ষীরার জেলা পর্যায়ে ফুটবল খেলেছেন তিনি। পরে সংসারের দায়িত্বে মাঠ ছেড়ে পাড়ি জমান মধ্যপ্রাচ্যে। দেশে ফিরে ব্যবসার পাশাপাশি ছোট একটি ফুটবল একাডেমি গড়ে তোলেন। সেই একাডেমির প্রথম শিক্ষার্থী ছিলেন তার দুই মেয়ে—আফিদা ও আফরা। তবে বড় মেয়ে আফরা বেছে নেন বক্সিংয়ের পথ, বিকেএসপির হয়ে পেশাদার বক্সিংয়ে ক্যারিয়ার গড়েছেন।

ফুটবল শেখার শুরুতে বাবার কঠোর পরিশ্রমের কথা উল্লেখ করে আফিদা বলেন,

“বাবাই আমার ফুটবল ভালোবাসার প্রেরণা। তিনি সবসময় বিশ্বাস করতেন, মেয়েরাও ছেলেদের মতো ভালো খেলতে পারে, বরং আরও ভালো। মাঠে তিনি ছিলেন কড়া কোচ, কখনোই ছাড় দিতেন না। সেই অনুশাসন আর পরিশ্রমই আজ আমাকে এখানে এনেছে।”

পরিবারই প্রেরণার উৎস

মাত্র ১১ বছর বয়সেই বাফুফের ট্রেনিং ক্যাম্পে ডাক পান আফিদা। তিনি মনে করেন, পরিবারের নিরলস সমর্থন ছাড়া এতদূর আসা সম্ভব হতো না।

“আমরা সত্যিই সৌভাগ্যবান যে বাবা-মায়ের পূর্ণ সমর্থন পেয়েছি। আমাদের সাফল্য অন্য মেয়েদেরও অনুপ্রাণিত করবে। কঠোর পরিশ্রম করেছি বটে, তবে পরিবার পাশে না থাকলে এতটা পথ পাড়ি দেওয়া যেত না।”

স্বপ্ন আরও বড়

১৮ বছর বয়সী এই অধিনায়ক বিশ্বাস করেন, এশিয়ান কাপে জায়গা করে নেওয়াটা কেবল শুরু। তার চোখে আরও বড় স্বপ্ন—“আমি চাই, সাম্প্রতিক সময়ে মেয়েদের অর্জন সঠিক স্বীকৃতি পাক। তবে এখানেই থামব না। বাংলাদেশ নারী ফুটবল বিশ্বকে দেখাবে আমাদের সামর্থ্য।”

চলতি বছরের শুরুতে রাষ্ট্রীয় সফরে কাতারে গিয়ে তিনি দাঁড়িয়েছিলেন বিশ্বকাপের মাঠে, দেখেছিলেন মেসিদের ড্রেসিংরুম। সেই অভিজ্ঞতা আরও বড় স্বপ্ন দেখিয়েছে তাকে।

“২০২২ বিশ্বকাপ টিভিতে দেখার সময় ভেবেছিলাম—যদি আমি সেখানে থাকতে পারতাম! তখন অসম্ভব মনে হয়েছিল। কিন্তু সেই মাঠে দাঁড়িয়ে মনে হলো, হয়তো আমার স্বপ্নগুলো আর এত দূরে নয়।”

বাংলাদেশ নারী ফুটবলের এই সাফল্য তাই কেবল একটি অর্জন নয়, বরং নতুন প্রজন্মের মেয়েদের জন্য সাহস, আশা ও অনুপ্রেরণার প্রতীক। আর সেই গল্পের কেন্দ্রবিন্দুতে আছেন তরুণ অধিনায়ক আফিদা খন্দকার—যিনি প্রমাণ করছেন, ফুটবল বিশ্বে বাংলাদেশের মেয়েরাও স্বপ্ন দেখতে জানে, আর সেই স্বপ্ন পূরণ করতেও পারে।

আল-আমিন ইসলাম/

পাঠকের মতামত:

আপনার জন্য বাছাই করা কিছু নিউজ

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ