ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ২১ আগস্ট ২০২৫, ৬ ভাদ্র ১৪৩২

‘ক্ষমতা ছাড়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছি’—ড. ইউনূস

জাতীয় ডেস্ক . ২৪আপডেটনিউজ
২০২৫ আগস্ট ২১ ২২:৫৭:১৫
‘ক্ষমতা ছাড়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছি’—ড. ইউনূস

নিজস্ব প্রতিবেদক: অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন শেষেই রাষ্ট্রীয় সব দায়িত্ব থেকে সরে দাঁড়ানোর ঘোষণা দিয়েছেন। যুক্তরাষ্ট্রের ইউটাহ-ভিত্তিক সংবাদমাধ্যম ‘ডেসারেট নিউজ’-এ বৃহস্পতিবার (২১ আগস্ট) প্রকাশিত এক নিবন্ধে তিনি এই সিদ্ধান্তের কথা জানান। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তার এই বক্তব্য দ্রুত ভাইরাল হয়ে পড়ে।

ড. ইউনূস তার নিবন্ধে লেখেন, “আমি স্পষ্ট করে দিয়েছি—আগামী জাতীয় নির্বাচন ফেব্রুয়ারিতে অনুষ্ঠিত হবে। এরপর আমি আর কোনো নির্বাচিত বা নিযুক্ত পদে থাকব না।” তিনি তার সরকারের প্রধান লক্ষ্য উল্লেখ করে বলেন, “আমাদের সরকারের মূল লক্ষ্য হলো একটি অবাধ, সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচন আয়োজন করা, যাতে সব রাজনৈতিক দল তাদের পরিকল্পনা তুলে ধরতে পারে এবং দেশি-বিদেশি ভোটাররা নির্বিঘ্নে ভোট দিতে পারে।”

নিবন্ধে তিনি ২০২৪ সালের গণআন্দোলনের প্রেক্ষাপট তুলে ধরেন, যার ফলে আওয়ামী লীগ সরকারের পতন ঘটে। তিনি বলেন, “গত বছরের আগস্টে শিক্ষার্থী ও সাধারণ মানুষের শান্তিপূর্ণ প্রতিবাদের মুখে তৎকালীন স্বৈরশাসক দেশত্যাগে বাধ্য হন। সেই শূন্যতায় ছাত্রনেতাদের অনুরোধে আমি অন্তর্বর্তী সরকারের দায়িত্ব গ্রহণ করি।”

দায়িত্ব গ্রহণের পর সরকারের কার্যক্রম সম্পর্কে ড. ইউনূস জানান, তার সরকার জাতীয় পুনর্গঠনের কাজ শুরু করেছে। তিনি বলেন, “আমরা অর্থনীতি পুনরুদ্ধার, নির্বাচন আয়োজন এবং চুরি যাওয়া সম্পদ উদ্ধারে কাজ করছি।” তিনি ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনালের একটি প্রতিবেদনের উদ্ধৃতি দিয়ে বলেন, “আগের সরকার বছরে ১০ থেকে ১৫ বিলিয়ন ডলার আত্মসাৎ করেছে। এই অর্থ ফেরত আনতেই আমরা যুদ্ধ করছি।”

ড. ইউনূস আরও জানান, তার সরকার আন্দোলনে নিহতদের পরিবারকে ক্ষতিপূরণ প্রদান, বিচারবহির্ভূত হত্যা ও নির্যাতনের তদন্ত এবং প্রশাসনে ন্যায্যতা ফিরিয়ে আনার জন্য কাজ করছে। তিনি উল্লেখ করেন, “যেসব রাজনৈতিক দল গণতন্ত্রের পক্ষে ছিল, তারা আজ আমাদের পাশে। সশস্ত্র বাহিনীও পেশাদার ভূমিকা রেখে আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রেখেছে।”

পররাষ্ট্রনীতির বিষয়ে তিনি বলেন, “আমরা যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, ইউরোপীয় ইউনিয়ন, জাপান, বিশ্বব্যাংক ও জাতিসংঘসহ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থার সহযোগিতা পাচ্ছি।” ড. ইউনূস মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিওর ভূমিকার বিশেষ প্রশংসা করেন।

নির্বাচন আয়োজনের পাশাপাশি একটি বৃহৎ সংস্কার কর্মসূচির কথাও তিনি উল্লেখ করেন। এর মধ্যে সংবিধান সংশোধনের একটি প্রস্তাবও রয়েছে, যার লক্ষ্য হলো বাংলাদেশে যেন আর কখনো স্বৈরাচারী শাসন ফিরে আসতে না পারে তা নিশ্চিত করা।নিবন্ধের শেষে ড. ইউনূস আশা প্রকাশ করে বলেন, “বাংলাদেশ যদি এমন একটি দেশে রূপ নেয়, যেখানে প্রতিটি নাগরিক মর্যাদা ও নিরাপত্তার সঙ্গে বাঁচতে পারে—তবে সেটি হবে জনগণের দৃঢ়তা, কল্পনা ও সাহসের জয়। এই মুহূর্তে যারা আমাদের পাশে আছেন, তারাই আমাদের শেষ আশা।”

মো: রাজিব আলী/

পাঠকের মতামত:

আপনার জন্য বাছাই করা কিছু নিউজ