ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ২ অক্টোবর ২০২৫, ১৭ আশ্বিন ১৪৩২

MD Zamirul Islam

Senior Reporter

নতুন পে স্কেল: ১:৮, ১:১০, ১:১২ অনুপাত হিসাব যেভাবে হয়

জাতীয় ডেস্ক . ২৪আপডেটনিউজ
২০২৫ অক্টোবর ০২ ২১:০৮:২১
নতুন পে স্কেল: ১:৮, ১:১০, ১:১২ অনুপাত হিসাব যেভাবে হয়

১. আলোচনার কেন্দ্রে জাতীয় বেতন কমিশন ২০২৫:

সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের জন্য নতুন বেতন কাঠামো গঠনের লক্ষ্যে গঠিত হয়েছে 'জাতীয় বেতন কমিশন ২০২৫'। এই কমিশন একটি ন্যায়সংগত ও টেকসই সুপারিশ তৈরির উদ্দেশ্যে সকলের মতামত আহ্বান করছে। বিশেষত, সর্বনিম্ন ও সর্বোচ্চ মূল বেতনের অনুপাত নিয়ে সরকারি মহলে শুরু হয়েছে ব্যাপক আলোচনা ও বিতর্ক। এই বিষয়টি সরকারি কর্মজীবীদের মধ্যে গভীর আগ্রহ সৃষ্টি করেছে।

২. অনুপাতের সহজবোধ্য ব্যাখ্যা:

জাতীয় বেতন কমিশনের ওয়েবসাইটে (paycommission2025.bd) প্রবেশ করে চারটি ক্যাটাগরির ৩২টি প্রশ্নের উত্তর দিয়ে মতামত জানানোর সুযোগ রয়েছে। এর মধ্যে ১১ নম্বর প্রশ্নটি হলো, 'প্রস্তাবিত পে স্কেলে সর্বনিম্ন ও সর্বোচ্চ মূল বেতনের অনুপাত কী হওয়া উচিত?' এখানে সম্ভাব্য উত্তর হিসেবে '১:৮, ১:১০, ১:১২ ও অন্যান্য' অপশন রাখা হয়েছে। এই অনুপাতটি মূলত ২০তম গ্রেডের একজন কর্মচারীর মূল বেতনের সঙ্গে সর্বোচ্চ গ্রেডের কর্মচারীর মূল বেতনের সম্পর্ক বোঝায়।

আরও পরিষ্কারভাবে বললে, যদি সর্বনিম্ন (২০তম) গ্রেডের মূল বেতন ১০০ টাকা ধরা হয়:

১:৮ অনুপাতে: সর্বোচ্চ গ্রেডের বেতন হবে ৮০০ টাকা।

১:১০ অনুপাতে: সর্বোচ্চ গ্রেডের বেতন হবে ১০০০ টাকা।

১:১২ অনুপাতে: সর্বোচ্চ গ্রেডের বেতন হবে ১২০০ টাকা।

এই হিসাবকে বাস্তবসম্মত করতে, যদি সর্বনিম্ন স্কেল ১৬ হাজার টাকা ধরা হয়:

১:৮ অনুপাতে: সর্বোচ্চ হবে ১ লাখ ২৮ হাজার টাকা।

১:১০ অনুপাতে: সর্বোচ্চ হবে ১ লাখ ৬০ হাজার টাকা।

১:১২ অনুপাতে: সর্বোচ্চ হবে ১ লাখ ৯২ হাজার টাকা।

৩. নিম্ন গ্রেডের কর্মচারীদের ক্ষোভ ও দাবি:

দীর্ঘদিন ধরে নিম্ন গ্রেডের সরকারি কর্মচারীরা বেতন অনুপাত কমানোর দাবি জানিয়ে আসছেন। তাদের যুক্তি, উচ্চ গ্রেডের কর্মকর্তাদের সঙ্গে তাদের দৈনন্দিন ব্যয়ের পার্থক্য খুব বেশি না হলেও, বেতনের পার্থক্য আকাশ-পাতাল। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন ২০তম গ্রেডের কর্মচারী হতাশা ব্যক্ত করে বলেন, "বাজারের অবস্থা সবার জন্য একই। উচ্চ গ্রেডের কর্মকর্তাদের ব্যয় যেমন বেড়েছে, আমাদেরও বেড়েছে। ১:৮ অনুপাতে বেতন বাড়লেও টাকার পার্থক্য এতটাই বেশি হবে যে আমাদের অর্থনৈতিক সংকট কমবে না, বরং আরও বাড়বে। কারণ নতুন পে স্কেল ঘোষণার সঙ্গে সঙ্গেই সবকিছুর দাম বেড়ে যাবে।"

তারা মনে করেন, যদি 'অন্যান্য' অপশন বেছে নিয়ে কেউ ১:৪ বা ১:১৫-এর মতো অনুপাত পছন্দ করেন, তাতে গড় অনুপাত ১:৮ বা ১:১০-এর কাছাকাছিই থাকবে। ফলস্বরূপ, সর্বনিম্ন গ্রেডের ১৬ হাজার বেসিকসহ মোট ২৫ হাজার টাকা এবং সর্বোচ্চ গ্রেডের দেড় লাখ বেসিকসহ যে বেতন পাবেন, তাতে বৈষম্য থেকেই যাবে।

৪. বর্তমান ও আন্তর্জাতিক প্রেক্ষাপট:

বর্তমানে সর্বোচ্চ পদ (গ্রেড-১) এবং সর্বনিম্ন পদ (গ্রেড-২০)-এর বেতনের অনুপাত প্রায় ১০:১। অর্থাৎ, প্রথম গ্রেডের একজন কর্মকর্তা যে বেতন পান, ২০তম গ্রেডের একজন কর্মচারী তার দশ ভাগের এক ভাগ পান। কমিশন পর্যালোচনা করে দেখেছে যে, প্রতিবেশী ভারতসহ অন্যান্য দেশেও এ ধরনের অনুপাত বিদ্যমান রয়েছে। তাই ধারণা করা হচ্ছে, নতুন কাঠামোতেও এই অনুপাত ৮:১ থেকে ১০:১-এর মধ্যেই থাকবে। গ্রেডের সংখ্যা কমানো হলেও, সর্বোচ্চ ও সর্বনিম্ন বেতনের ক্ষেত্রে একই অনুপাত বহাল রাখার সুপারিশ করার সম্ভাবনা রয়েছে।

৫. অন্তর্বর্তী সরকারের দ্রুত বাস্তবায়নের অঙ্গীকার:

অন্তর্বর্তী সরকার নবম জাতীয় বেতন স্কেল গেজেটের মাধ্যমে দ্রুত বাস্তবায়ন করতে চায়। অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ স্পষ্ট জানিয়েছেন যে, তারা পরবর্তী রাজনৈতিক সরকারের জন্য অপেক্ষা করবেন না। তিনি বলেছেন, নতুন পে স্কেল ২০২৬ সালের শুরু (জানুয়ারি/মার্চ/এপ্রিল) থেকেই কার্যকর হতে পারে। এর জন্য চলতি অর্থবছরের সংশোধিত বাজেটেই প্রয়োজনীয় অর্থ বরাদ্দ রাখা হবে।

৬. কমিশন গঠন ও সুপারিশ জমা দেওয়ার সময়সীমা:

সরকারি কর্মচারীদের জন্য নতুন বেতন কাঠামো নির্ধারণ করতে সাবেক অর্থ সচিব জাকির আহমেদ খানকে সভাপতি করে 'জাতীয় বেতন কমিশন, ২০২৫' গঠিত হয় ২৭ জুলাই ২০২৫ তারিখে। কমিশনকে সাধারণত ছয় মাসের মধ্যে তাদের সুপারিশ জমা দিতে বলা হয়েছে।

জাতীয় বেতন কমিশন ২০২৫ একটি যুগোপযোগী ও ন্যায়ভিত্তিক বেতন কাঠামো প্রণয়নের গুরুদায়িত্ব পালন করছে। সর্বনিম্ন ও সর্বোচ্চ বেতনের অনুপাত নির্ধারণ একটি জটিল বিষয়, যা একদিকে উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাদের প্রত্যাশা এবং অন্যদিকে নিম্নপদস্থ কর্মীদের অর্থনৈতিক বৈষম্য দূরীকরণের আকাঙ্ক্ষাকে প্রভাবিত করে। আশা করা যায়, কমিশন সবার মতামত এবং বর্তমান অর্থনৈতিক বাস্তবতা বিবেচনা করে একটি ভারসাম্যপূর্ণ ও কার্যকর সুপারিশ প্রণয়ন করবে, যা দেশের সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের জীবনযাত্রার মান উন্নয়নে ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে এবং একটি সুষ্ঠু বেতন কাঠামো নিশ্চিত করবে।

আল-মামুন/

পাঠকের মতামত:

আপনার জন্য বাছাই করা কিছু নিউজ

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ