ঢাকা, বুধবার, ১ অক্টোবর ২০২৫, ১৬ আশ্বিন ১৪৩২

Alamin Islam

Senior Reporter

দলিল ছাড়া জমির মালিকানা: সুপ্রিম কোর্টের নতুন রায় ও ৫ উপায়!

জাতীয় ডেস্ক . ২৪আপডেটনিউজ
২০২৫ অক্টোবর ০১ ১২:৫৪:১৭
দলিল ছাড়া জমির মালিকানা: সুপ্রিম কোর্টের নতুন রায় ও ৫ উপায়!

জমির মালিকানা প্রমাণে শুধু দলিলই শেষ কথা নয়! বাংলাদেশের ভূমি ব্যবস্থাপনায় এসেছে এক নতুন দিগন্ত, যা লাখো ভূমি মালিকের জন্য বয়ে আনছে স্বস্তি। সুপ্রিম কোর্টের যুগান্তকারী রায় এবং আধুনিক ভূমি রেকর্ডের আলোকে এখন পাঁচটি সরকারি স্বীকৃত নথিপত্র দিয়েই জমির বৈধ মালিকানা প্রমাণ করা সম্ভব।

দলিল হারানোর দুশ্চিন্তা অতীত: বিকল্প প্রমাণের নতুন দ্বার

অনেক সময় দুর্বিষহ পরিস্থিতি সৃষ্টি হয় যখন জমির অমূল্য দলিল হারিয়ে যায় অগ্নিকাণ্ডে, বন্যায়, কিংবা পারিবারিক কোন্দলের শিকার হয়ে। এতদিন এমন পরিস্থিতিতে মালিকেরা নিজেদের অসহায় ভাবতেন। কিন্তু এখন আর আতঙ্কিত হওয়ার প্রয়োজন নেই। আপনার কাছে যদি নির্দিষ্ট পাঁচটি সরকারি নথি থাকে, তাহলে আইনের চোখে আপনিই আপনার জমির বৈধ মালিক হিসেবে বিবেচিত হবেন।

আপনার জমির মালিকানা নিশ্চিত করার ৫টি জরুরি নথি:

১. খতিয়ান (CS, SA, RS, BS ইত্যাদি): জমির মালিকানার মেরুদণ্ড হলো এই খতিয়ান। সরকারি জরিপের মাধ্যমে প্রস্তুতকৃত এই দলিলে জমির বিস্তারিত বিবরণ, মালিকের নাম, দাগ নম্বর, পরিমাণ, সীমানা এবং পরিশোধিত খাজনার তথ্য থাকে। এটি আপনার জমির আইনি ইতিহাসের সবচেয়ে নির্ভরযোগ্য প্রমাণ।

২. নামজারি/খারিজ (Mutation Record): উত্তরাধিকারসূত্রে প্রাপ্ত বা ক্রয়কৃত জমি যখন আপনার নামে সরকারি খতিয়ানে আনুষ্ঠানিকভাবে অন্তর্ভুক্ত হয়, তখন তাকে নামজারি বলে। এই প্রক্রিয়াটি আপনার মালিকানার আইনি স্বীকৃতি দেয় এবং আপনাকে সরকারের নথিতে বৈধ মালিক হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করে।

৩. প্রকৃত ভোগদখলের প্রমাণ: কাগজে-কলমের বাইরেও জমির ওপর আপনার দীর্ঘদিনের বাস্তব নিয়ন্ত্রণ বা ভোগদখল মালিকানার একটি গুরুত্বপূর্ণ নির্দেশক। জমি চাষাবাদ, বাড়ি নির্মাণ বা অন্য কোনো বৈধ উপায়ে এর ব্যবহার—এ সবই 'প্রকৃত দখল' হিসেবে গণ্য হয়, যা আপনার মালিকানা দাবিকে শক্তিশালী করে।

৪. নিয়মিত খাজনা পরিশোধের রশিদ (Tax Receipt): সরকারের কোষাগারে নিয়মিত ভূমি উন্নয়ন কর বা খাজনা পরিশোধ করা আপনার জমির বৈধ মালিকানার একটি অকাট্য প্রমাণ। আধুনিক ডিজিটাল পদ্ধতিতে অনলাইনেও এখন সহজেই খাজনা পরিশোধ করে রশিদ সংগ্রহ করা যায়, যা আপনার মালিকানা সংক্রান্ত দায়বদ্ধতার প্রমাণ হিসেবে কাজ করে।

৫. ডিসিআর (Duplicate Carbon Receipt): নামজারি প্রক্রিয়া সফলভাবে সম্পন্ন হওয়ার পর ভূমি অফিস থেকে যে 'ডুপ্লিকেট কার্বন রশিদ' (DCR) প্রদান করা হয়, তা মালিকানা পরিবর্তনের চূড়ান্ত ও সরকারি প্রমাণ হিসেবে বিবেচিত। এটি আপনার নতুন মালিকানার আনুষ্ঠানিক সিলমোহর।

পারিবারিক সম্পত্তির সুষম বণ্টন ও আইনগত অধিকার:

যদি পরিবারের সকল সদস্যের নামে রেকর্ড না থাকে, তবুও অন্যান্য ভাই-বোনদের তাদের পৈত্রিক সম্পত্তিতে সমান অধিকার থাকে। প্রয়োজনে 'বাটোয়ারা মামলা' দায়েরের মাধ্যমে প্রত্যেক অংশীদার তার ন্যায্য হিস্যা আদায় করতে পারেন।

প্রয়োজনে যেসব অতিরিক্ত কাগজপত্র ও হলফনামা লাগতে পারে:

বিশেষ কিছু পরিস্থিতিতে আপনার মালিকানা প্রমাণে নিম্নলিখিত দলিলগুলো সহায়ক হতে পারে:

জাতীয় পরিচয়পত্র, জন্ম নিবন্ধন, অথবা পাসপোর্ট (ব্যক্তিগত পরিচয়ের জন্য)।

নাম সংশোধনের হলফনামা (যদি রেকর্ডে নাম ভুল থাকে)।

ধর্ম পরিবর্তন বা বিবাহ/তালাক সংক্রান্ত হলফনামা (যদি মালিকানার সঙ্গে সম্পর্কিত হয়)।

কোড ম্যারেজ বা যৌথ বিবাহের হলফনামা।

যেকোনো হলফনামা প্রস্তুতের জন্য সংশ্লিষ্ট আইনজীবী অথবা সরকারি কর্তৃপক্ষের পরামর্শ নেওয়া আবশ্যক।

বিশেষ দিকনির্দেশনা:

মনে রাখবেন, জমির দলিল না থাকলেও খতিয়ান, নামজারি, ভোগদখল, খাজনা রশিদ ও ডিসিআর—এই পঞ্চসূত্র আপনার মালিকানা প্রমাণে যথেষ্ট। কোনো জটিলতা দেখা দিলে অবশ্যই একজন অভিজ্ঞ আইনজীবীর পরামর্শ গ্রহণ করুন। এছাড়া, ভূমি অফিস বা স্থানীয় সহকারী কমিশনার (ভূমি) এর সঙ্গে যোগাযোগ করে আপনার জমির মালিকানা সংক্রান্ত সকল তথ্য যাচাই করে নিতে পারেন।

আব্দুর রহিম/

পাঠকের মতামত:

আপনার জন্য বাছাই করা কিছু নিউজ