ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ২৮ আগস্ট ২০২৫, ১৩ ভাদ্র ১৪৩২

বিয়ে করার আগে ৭টি প্রস্তুতি নিতেই হবে, জানুন এখনই

ধর্ম ডেস্ক . ২৪আপডেটনিউজ
২০২৫ আগস্ট ২৮ ১২:২৩:৪৪
বিয়ে করার আগে ৭টি প্রস্তুতি নিতেই হবে, জানুন এখনই

নিজস্ব প্রতিবেদক: বিবাহিত জীবনকে সুখী ও শান্তিপূর্ণ করতে বিবাহের পূর্বপ্রস্তুতি হিসেবে সাতটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ের ওপর আলোকপাত করেছেন জনপ্রিয় আলেম শায়খ আহমাদুল্লাহ। একটি সাম্প্রতিক আলোচনায় তিনি মুসলিম উম্মাহকে ধর্মীয় অনুশাসন ও বাস্তবসম্মত প্রস্তুতির মাধ্যমে একটি স্থিতিশীল পারিবারিক জীবন গড়ার আহ্বান জানান।

শায়খ আহমাদুল্লাহ বলেন যে, একজন বিবাহেচ্ছুক মানুষের জন্য সবচেয়ে বড় ও প্রথম প্রস্তুতি হলো নিজেকে মুত্তাকী ও পরহেজগার হিসেবে গড়ে তোলা। পাপ কাজ এবং আল্লাহর অবাধ্যতা থেকে দূরে থাকার মাধ্যমে নিজেকে একজন ভালো মানুষ হিসেবে প্রস্তুত করা উচিত। তিনি উল্লেখ করেন, যদিও ব্যতিক্রম দেখা যায় (যেমন ফেরাউনের স্ত্রী আছিয়া বা নূহ ও লূত (আ.)-এর স্ত্রী), তবে সাধারণত আল্লাহ তাআলা ভালো মানুষের সঙ্গে ভালো মানুষের মিলন ঘটান।

দ্বিতীয় প্রস্তুতি হিসেবে তিনি আল্লাহর কাছে দোয়া করার গুরুত্ব তুলে ধরেন। বিশেষ করে সূরা আল-ফুরকানের ৭৪ নম্বর আয়াতের শেষ অংশটি বেশি বেশি পাঠ করার পরামর্শ দেন: "হে আমাদের পালনকর্তা, আমাদের স্ত্রীদের পক্ষ থেকে এবং আমাদের সন্তানের পক্ষ থেকে আমাদের জন্য চোখের শীতলতা দান কর এবং আমাদেরকে মুত্তাকীদের জন্য আদর্শস্বরূপ কর"।

তৃতীয়ত, জীবনসঙ্গী বা জীবনসঙ্গিনী নির্বাচনের ক্ষেত্রে দ্বীনদারিতাকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দিতে হবে। শায়খ আহমাদুল্লাহ আফসোস করে বলেন, বর্তমান সমাজে ছেলেরা রূপ-লাবণ্যকে এবং মেয়েরা অর্থ-সম্পদকে বেশি প্রাধান্য দেয়। অথচ রাসুলুল্লাহ (সা.) দ্বীনদারীকে গুরুত্ব দিতে বলেছেন। একজন দ্বীনদার ও অল্পে তুষ্ট সঙ্গীই প্রকৃত সুখ ও সমৃদ্ধি আনতে পারে।

চতুর্থত, বিবাহের আগে জীবনসঙ্গী বা জীবনসঙ্গিনীর অধিকার সম্পর্কে জেনে নেওয়া অপরিহার্য। স্বামী-স্ত্রী একে অপরের অধিকার ও কর্তব্য সম্পর্কে অবগত না থাকার কারণে দাম্পত্য জীবনে অশান্তি সৃষ্টি হয়। তাই ইসলামী শরীয়ত অনুযায়ী একে অপরের অধিকার ভালোভাবে রপ্ত করে নিতে হবে।

পঞ্চমত, পুরুষদের জন্য হালাল উপার্জনের চেষ্টা করা এবং মহিলাদের জন্য গৃহস্থালি কাজকর্মে দক্ষ হওয়া গুরুত্বপূর্ণ। শায়খ আহমাদুল্লাহ স্পষ্ট করেন যে, হালাল উপার্জন মানে লক্ষ লক্ষ টাকা উপার্জন করা নয়, বরং জীবন ধারণের জন্য যথেষ্ট হালাল রিজিকের সংস্থান করা। একইভাবে, নারীদের গৃহস্থালি কাজ জানা পারিবারিক জীবনে সুসম্পর্ক বজায় রাখতে সাহায্য করে।

ষষ্ঠ প্রস্তুতি হিসেবে তালাকের মাসআলা (বিধি-বিধান) সম্পর্কে ভালোভাবে জেনে নেওয়ার ওপর জোর দেওয়া হয়। তিনি বলেন, অনেকে তালাক দেওয়ার পর আফসোস করেন, কারণ তারা এর নিয়মকানুন জানতেন না। তালাকের স্পর্শকাতরতা এবং এর পদ্ধতি সম্পর্কে পূর্বজ্ঞান থাকা পারিবারিক সম্পর্ক রক্ষায় সহায়ক।

সপ্তম এবং সর্বশেষ প্রস্তুতি হিসেবে শায়খ আহমাদুল্লাহ পারিবারিক ব্যবস্থাপনা এবং প্যারেন্টিং সংশ্লিষ্ট কোর্স করার পরামর্শ দেন। নারী ও পুরুষ উভয়কেই এই কোর্সগুলো করার মাধ্যমে বিবাহ-পরবর্তী জীবন, স্বামী-স্ত্রীর সম্পর্ক, শ্বশুরবাড়ির সঙ্গে আচরণ এবং সন্তান প্রতিপালন সংক্রান্ত সম্ভাব্য সমস্যাগুলো মোকাবিলা করার জ্ঞান অর্জন করা উচিত।

শায়খ আহমাদুল্লাহ আশা প্রকাশ করেন যে, এই প্রস্তুতিগুলো গুরুত্ব সহকারে গ্রহণ করলে আল্লাহ রাব্বুল আলামীন আমাদের দাম্পত্য জীবনে সুখ ও শান্তি দান করবেন। তিনি বলেন, দুনিয়ার সবচেয়ে উপভোগের বিষয় হলো একটি সুখী এবং শান্তিপূর্ণ দাম্পত্য জীবন।

আল-আমিন ইসলাম/

পাঠকের মতামত:

আপনার জন্য বাছাই করা কিছু নিউজ