ঢাকা, শুক্রবার, ১২ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ২৮ ভাদ্র ১৪৩২

MD. Razib Ali

Senior Reporter

দলিল ভোগান্তি শেষ! নতুন নিয়মে দ্রুত পাবেন জমির দলিল

জাতীয় ডেস্ক . ২৪আপডেটনিউজ
২০২৫ সেপ্টেম্বর ১২ ১০:৫০:৫২
দলিল ভোগান্তি শেষ! নতুন নিয়মে দ্রুত পাবেন জমির দলিল

জমি রেজিস্ট্রেশনের পর দলিলের নকল ও মূল দলিল প্রাপ্তিতে দীর্ঘদিনের ভোগান্তির অবসান হতে চলেছে। ঢাকা জেলাধীন সকল সাব-রেজিস্ট্রি অফিস প্রথমবারের মতো একটি সেবাধর্মী বিশেষ উদ্যোগ কার্যকর করেছে, যার ফলে নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে দলিল সরবরাহ করা হবে। একইসাথে, সেবাপ্রার্থীরা ফোন করে দলিলের অবস্থা সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে পারবেন। এই যুগান্তকারী পরিবর্তন আগামী বছরের পহেলা জানুয়ারি থেকে দ্বিতীয় ধাপে কার্যকর হবে বলে সোমবার গণমাধ্যমকে নিশ্চিত করেছেন ঢাকা জেলা সাব-রেজিস্ট্রার অহিদুল ইসলাম।

নতুন প্রক্রিয়ার বিস্তারিত:

ঢাকা জেলা সাব-রেজিস্ট্রার অহিদুল ইসলাম জানান, দলিলের নকল ও মূল দলিল যথাসময়ে দলিলগ্রহীতার হাতে পৌঁছে দেওয়ার লক্ষ্যে জমি রেজিস্ট্রি হওয়ার পর রসিদে ফোন নম্বর সংবলিত একটি সিল দেওয়া হচ্ছে। এই সিলে একটি নির্দিষ্ট মোবাইল নম্বর লেখা থাকবে, যেখানে ফোন করে সম্পত্তির ক্রেতা দলিলের সরবরাহ তারিখ সম্পর্কে জানতে পারবেন।

ভবিষ্যতে, জমির ক্রেতা বা গ্রহীতার ফোন নম্বরও সংরক্ষণ করা হবে। দলিল প্রস্তুত হওয়ার পর প্রথমে মেসেজ পাঠিয়ে এবং পরবর্তীতে সরাসরি ফোন করে দলিল সরবরাহের তারিখ জানিয়ে দেওয়া হবে। ঢাকা জেলা রেজিস্ট্রারের কার্যালয় ছাড়াও জেলার আওতাধীন ২৩টি সাব-রেজিস্ট্রি অফিসের জন্য কোন কর্মচারী এই কল রিসিভ করবেন, তার নাম, পদবি ও ফোন নম্বরসহ একটি চিঠি ইস্যু করা হয়েছে।

অহিদুল ইসলাম আরও জানান, আগামী পহেলা জানুয়ারি থেকে দলিল রেজিস্ট্রির ফরমেটে যেখানে গ্রহীতা বা ক্রেতার ভোটার আইডি লেখা হয়, তার নিচের লাইনে মোবাইল নম্বরও যুক্ত করা হবে। তবে, যারা ব্যক্তিগত গোপনীয়তার কারণে ফোন নম্বর দিতে আগ্রহী নন, তাদের ক্ষেত্রে "ক্রেতা দিতে আগ্রহী নন" লেখা থাকবে।

ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপট এবং বর্তমান চ্যালেঞ্জ:

সূত্র অনুযায়ী, জমি রেজিস্ট্রেশনের ১১৫ বছরের ইতিহাসে এমন সিদ্ধান্ত এর আগে কখনো নেওয়া হয়নি। ১৯০৮ সালে দলিল রেজিস্ট্রি প্রথা শুরু হলেও, একটি অসাধু চক্রের কারণে এই সেক্টরে সবসময় জটিলতা সৃষ্টি হয়েছে, যার ফলে জনগণের প্রাপ্য সেবা পেতে নানামুখী অভিযোগ প্রবল। যদিও এ সেক্টরে অনেক সৎ, যোগ্য ও দক্ষ কর্মকর্তা-কর্মচারীও আছেন। সময়মতো এমন উদ্যোগ নেওয়া হলে দলিলের নকলসহ মূল দলিল পেতে মানুষের ভোগান্তি অনেকখানি কমে আসতো।

জনগণের সেবায় নতুন দিগন্ত:

ঢাকা জেলা সাব-রেজিস্ট্রার অহিদুল ইসলাম জনগণের ভোগান্তি দূর করতে ইতোমধ্যে ঢাকা জেলা রেজিস্ট্রেশন কমপ্লেক্স-জুড়ে নানামুখী সেবা চালু করেছেন। সক্রিয় হেল্প ডেস্ক, সেবাপ্রার্থীদের জন্য বিশুদ্ধ পানি পানের ব্যবস্থা, এবং সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো গণশুনানির ব্যবস্থা। প্রতি মঙ্গলবার তিনি গণশুনানি করছেন, যদিও কাজের প্রয়োজনে এটি তাকে প্রায় প্রতিদিনই করতে হচ্ছে। তিনি স্টাফদের নির্দেশ দিয়েছেন, আগত সেবাপ্রার্থীদের নাম, ঠিকানা ও ফোন নম্বর এন্ট্রি করে রাখতে। ব্যস্ত থাকলে পরে তাদের ফোন করে ডাকা হচ্ছে এবং এর জন্য একটি পৃথক রেজিস্টারও মেনটেইন করা হচ্ছে।

এছাড়া, প্রথমবারের মতো একজন স্টাফকে পাবলিক রিলেশন বা গণসংযোগ রক্ষার বিশেষ দায়িত্ব সোমবার অফিশিয়ালি সুনির্দিষ্ট করে দেওয়া হয়েছে। তিনি প্রতিদিন অসংখ্য মানুষকে সেবা দিয়ে যাচ্ছেন। এর বাইরে, তিনি সপ্তাহে অন্তত তিন দিন সারপ্রাইজ ভিজিট করে ঢাকা জেলার আওতাধীন সাব-রেজিস্ট্রি অফিসগুলো পরিদর্শন করেন এবং সেবাপ্রার্থী সাধারণ মানুষের সঙ্গে কথা বলেন। কারও কোনো অভিযোগ থাকলে তিনি তাৎক্ষণিক সমাধানের জন্য প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দেন।

ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা:

অহিদুল ইসলাম জানান, পুরোনো দলিল ভালোভাবে সংরক্ষণের জন্য ইতোমধ্যে বেশকিছু ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে এবং সংশ্লিষ্ট ভবনটির উপরের দিকে আরও একতলা বর্ধিত করার প্রস্তাব অনুমোদন হয়েছে। এছাড়াও, তিনি পুরো বালাম বহি স্ক্যান করে ডিজিটাল অটোমেশনে নিয়ে যেতে চান এবং এর জন্য পৃথক প্রকল্প হাতে নেওয়া হচ্ছে।

তিনি স্বীকার করেন, "এখনো আমরা মানুষের প্রত্যাশা অনুযায়ী সেবা দিতে পারছি না। এছাড়া সাব-রেজিস্ট্রি অফিস নিয়ে জনমনে দীর্ঘদিন থেকে একধরনের নেতিবাচক ধারণা প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে। এ ধারণা ভেঙে দিতে আমরা কাজ করছি। হয়তো একদিনে কিংবা এভাবে সম্ভব হবে না, তবে শুরুটা করে যেতে চাই।"

তিনি আশাবাদী যে, বর্তমানে রেজিস্ট্রেশন সার্ভিসে অনেক উচ্চশিক্ষিত, প্রতিশ্রুতিশীল এবং পিএসসির মাধ্যমে নিয়োগপ্রাপ্ত হয়ে মেধাবীরা যুক্ত হচ্ছেন, যা ভবিষ্যতে এই সেবার মান উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।

এই নতুন উদ্যোগের ফলে জমির মালিকানা সংক্রান্ত প্রক্রিয়া আরও স্বচ্ছ, দ্রুত এবং জনবান্ধব হবে বলে আশা করা হচ্ছে। এটি নিঃসন্দেহে ভূমি ব্যবস্থাপনায় একটি ইতিবাচক পরিবর্তন আনবে।

আল-মামুন/

পাঠকের মতামত:

আপনার জন্য বাছাই করা কিছু নিউজ