ঢাকা, রবিবার, ২৮ ডিসেম্বর ২০২৫, ১৪ পৌষ ১৪৩২

MD. Razib Ali

Senior Reporter

গোল্ডেন হারভেস্ট: জালিয়াতির প্রমাণ, নিরীক্ষকের বিরুদ্ধে বিএসইসির কঠোর পদক্ষেপ

শেয়ারনিউজ ডেস্ক . ২৪আপডেটনিউজ
২০২৫ সেপ্টেম্বর ২০ ১৭:৫৬:৫৪
গোল্ডেন হারভেস্ট: জালিয়াতির প্রমাণ, নিরীক্ষকের বিরুদ্ধে বিএসইসির কঠোর পদক্ষেপ

পুঁজিবাজারে খাদ্য ও আনুসঙ্গিক খাতের অন্যতম তালিকাভুক্ত কোম্পানি গোল্ডেন হারভেস্ট অ্যাগ্রো ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেডের নিরীক্ষক ম্যাবস অ্যান্ড জে পার্টনার্স চার্টার্ড অ্যাকাউন্ট্যান্টসের বিরুদ্ধে কঠোর শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য ফাইন্যান্সিয়াল রিপোর্টিং কাউন্সিলকে (এফআরসি) সুপারিশ করেছে বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)।

বিএসইসির অনুসন্ধানে কোম্পানির আর্থিক প্রতিবেদনে গুরুতর অনিয়ম, মিথ্যা ও জাল তথ্য উপস্থানের প্রমাণ মিলেছে, যা নিরীক্ষক প্রতিষ্ঠানটি শনাক্ত করতে বা প্রকাশ করতে ব্যর্থ হয়েছে। এই ব্যর্থতাকে পুঁজিবাজারে বিনিয়োগকারী ও স্টেকহোল্ডারদের আস্থার প্রতি চরম আঘাত হিসেবে দেখছে নিয়ন্ত্রক সংস্থা।

বিএসইসির এক নির্ভরযোগ্য সূত্র থেকে জানা যায়, গোল্ডেন হারভেস্ট অ্যাগ্রো ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেডের কারখানা ও অফিস প্রাঙ্গণে পরিচালিত এক নিবিড় পরিদর্শনে বিএসইসি বেশ কিছু গুরুতর অসঙ্গতি খুঁজে পায়। এর মধ্যে রয়েছে - কোম্পানিটির সম্পর্কিত এবং অ-সম্পর্কিত উভয় ধরনের পক্ষের সঙ্গে এমন সব লেনদেন প্রদর্শন, যা বাস্তবে ঘটেনি বা সম্পূর্ণ বানোয়াট।

এছাড়াও, কোম্পানির আর্থিক বিবরণীতে প্রকৃত সম্পদের চেয়ে অনেক বেশি বা বিভ্রান্তিকর সম্পদমূল্য দেখানো হয়েছে, যা বিনিয়োগকারীদের ভুল পথে চালিত করতে পারে। সবচেয়ে উদ্বেগজনক দিক হলো, এমন মারাত্মক ভুল ও জালিয়াতি শনাক্ত করা এবং এর বিরুদ্ধে আপত্তি জানানোর আইনি দায়িত্ব থাকা সত্ত্বেও নিয়োগপ্রাপ্ত নিরীক্ষক প্রতিষ্ঠানটি তা করতে সম্পূর্ণভাবে ব্যর্থ হয়েছে বা ইচ্ছাকৃতভাবে উপেক্ষা করেছে।

বিএসইসির পাঠানো চিঠিতে স্পষ্ট উল্লেখ করা হয়েছে, তাদের নিয়ন্ত্রক ক্ষমতা প্রয়োগের অংশ হিসেবে গোল্ডেন হারভেস্ট এগ্রো ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেডের কারখানা, অফিস, হিসাবের বই এবং অন্যান্য প্রাসঙ্গিক নথিপত্র সশরীরে পরীক্ষা করা হয়েছিল। এই ব্যাপক পরিদর্শনে কোম্পানির গুরুতর অনিয়ম এবং আর্থিক প্রতিবেদনে অসত্য তথ্যের উপস্থিতি নিশ্চিত হয়েছে, যা কোম্পানির প্রকাশিত আর্থিক বিবরণীর বিশ্বাসযোগ্যতা ও নির্ভরযোগ্যতার ওপর গভীর নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে।

যেসব তথ্য মিথ্যা ও জাল হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে, সেগুলোর মধ্যে প্রধানত রয়েছে: কোম্পানির সাথে সম্পর্কিত এবং সম্পর্কহীন উভয় পক্ষের সাথে ভুয়া লেনদেনের তথ্য উপস্থাপন; আর্থিক বিবরণীতে সম্পদের একটি মিথ্যা ও বিভ্রান্তিকর চিত্র প্রদর্শন; এবং আইনগতভাবে নিযুক্ত নিরীক্ষকের চরম ব্যর্থতা, যিনি নিরপেক্ষভাবে নিরীক্ষা কার্যক্রম পরিচালনা করে গুরুত্বপূর্ণ অসত্য তথ্য সনাক্ত করতে ও আপত্তি জানাতে পারেননি।

বিএসইসি জোর দিয়ে বলেছে যে, এই ধরনের অনিয়ম কেবল নিরীক্ষিত আর্থিক প্রতিবেদনের বিশ্বাসযোগ্যতাকেই প্রশ্নবিদ্ধ করে না, বরং পুঁজিবাজারে বিনিয়োগকারী ও অন্যান্য স্টেকহোল্ডারদের আস্থা ও বিশ্বাসকেও মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করে।

চিঠিতে আরও বলা হয়েছে যে, সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ বিধিমালা, ২০২০ এর রুলস ১৪(৫) অনুযায়ী, গোল্ডেন হারভেস্ট অ্যাগ্রো ইন্ডাস্ট্রিজের পরিদর্শন প্রতিবেদনের একটি কপি এবং আর্থিক প্রতিবেদনের প্রাসঙ্গিক তথ্য এফআরসিতে পাঠানো হয়েছে। বিএসইসি এফআরসিকে অনুরোধ জানিয়েছে, তারা যেন গোল্ডেন হারভেস্ট অ্যাগ্রো ইন্ডাস্ট্রিজের কারখানা ও অফিস প্রাঙ্গণের পরিদর্শন প্রতিবেদন এবং ২০২০, ২০২১ ও ২০২২ সালে সমাপ্ত হিসাব বছরের নিরীক্ষিত আর্থিক প্রতিবেদনগুলো নিবিড়ভাবে পর্যালোচনা করে।

পর্যালোচনার পর যদি সংশ্লিষ্ট নিরীক্ষা প্রতিষ্ঠান বা তাদের অংশীদারদের দায়িত্বে অবহেলা বা জালিয়াতিতে সম্পৃক্ততা প্রমাণিত হয়, তবে প্রযোজ্য আইন ও মানদণ্ড অনুযায়ী প্রয়োজনীয় ও কঠোর শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করার জন্য এফআরসিকে আহ্বান জানানো হয়েছে।

পুঁজিবাজার বিশ্লেষকদের মতে, কোনো প্রতিষ্ঠানের আর্থিক প্রতিবেদনে জালিয়াতি বা বিভ্রান্তিকর তথ্যের উপস্থিতি বিনিয়োগকারীদের জন্য চরম ঝুঁকির কারণ হয়ে দাঁড়ায়। বিনিয়োগকারীরা সাধারণত এসব তথ্যের ওপর ভিত্তি করেই তাদের বিনিয়োগের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে থাকেন। তাই, যদি নিরীক্ষকরা তাদের দায়িত্ব পালনে ব্যর্থ হন, তবে সামগ্রিকভাবে বাজারে আস্থার গভীর সংকট তৈরি হতে পারে।

বিএসইসি দৃঢ়ভাবে জানিয়েছে, বিনিয়োগকারীদের স্বার্থ সুরক্ষা এবং শেয়ারবাজারে স্বচ্ছতা নিশ্চিত করার জন্য এমন অনিয়মের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ অপরিহার্য। এই কারণেই বিষয়টি এফআরসির দৃষ্টি আকর্ষণ করে অবিলম্বে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়ার জন্য সুপারিশ করা হয়েছে।

এ বিষয়ে মন্তব্য জানতে ফাইন্যান্সিয়াল রিপোর্টিং কাউন্সিলের (এফআরসি) চেয়ারম্যান ড. মো. সাজ্জাদ হোসেন ভূঁইয়ার সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তাকে ফোনে পাওয়া যায়নি।

আল-মামুন/

পাঠকের মতামত:

আপনার জন্য বাছাই করা কিছু নিউজ