ঢাকা, মঙ্গলবার, ২৩ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ৮ আশ্বিন ১৪৩২

Alamin Islam

Senior Reporter

নতুন ভূমি আইন: যেসব কাগজপত্র না থাকলে হারাতে পারেন আপনার জমি

জাতীয় ডেস্ক . ২৪আপডেটনিউজ
২০২৫ সেপ্টেম্বর ২৩ ০৯:৫৮:৪৬
নতুন ভূমি আইন: যেসব কাগজপত্র না থাকলে হারাতে পারেন আপনার জমি

সাবধান! নতুন ভূমি আইনে এই কাগজপত্র না থাকলে হারাতে পারেন আপনার জমি

ভূমি সংক্রান্ত বিষয়গুলো নিয়ে চলমান অস্থিরতার মধ্যে নতুন ভূমি আইন কার্যকর হওয়ার পর জমি-জমা সংক্রান্ত বিরোধ এবং মামলার ঝুঁকি আরও বেড়ে গেছে। বিশেষ করে প্রয়োজনীয় এবং হালনাগাদ কাগজপত্র না থাকলে ভবিষ্যতে আপনার মূল্যবান জমি হারানোর সমূহ সম্ভাবনা রয়েছে। এই জটিল পরিস্থিতি থেকে নিজেকে সুরক্ষিত রাখতে এবং আপনার সম্পত্তির মালিকানা নিশ্চিত করতে জমির মালিকদের এখনই সর্বোচ্চ সতর্ক হওয়া অত্যন্ত জরুরি।

মালিকানা সুরক্ষায় অপরিহার্য যেসব দলিল:

ভূমি সংক্রান্ত যেকোনো বিষয়ের আইনি বৈধতা প্রমাণ করার জন্য কিছু মৌলিক দলিল থাকা আবশ্যিক। জমির নিরবচ্ছিন্ন দখল, মালিকানা এবং বিক্রয়ের ক্ষেত্রে সঠিক দলিল না থাকলে ভবিষ্যতে দীর্ঘমেয়াদি আইনি জটিলতা তৈরি হতে পারে।

১. রেজিস্ট্রার্ড চুক্তিপত্র (মূল দলিল) ও বায়া দলিল:

জমি ক্রয়-বিক্রয়ের মূল ভিত্তি হলো ক্রেতা ও বিক্রেতার মধ্যে সাব-রেজিস্ট্রার অফিসে স্ট্যাম্পে সই করা 'চুক্তিপত্র' বা 'মূল দলিল'। এটিই আপনার জমির মালিকানার প্রধান আইনি প্রমাণ। এর পূর্ববর্তী মালিকের দলিলকে 'বায়া দলিল' বলা হয়, যা আপনার মালিকানার ধারাবাহিকতা প্রমাণে সহায়ক। জেলা রেজিস্ট্রার অফিস থেকে এই দলিলের সত্যায়িত কপি সংগ্রহ করা সম্ভব।

২. পর্চা ও খতিয়ান:

সরকারি জরিপের ভিত্তিতে প্রস্তুতকৃত জমি সংক্রান্ত নথিকে 'খতিয়ান' বলা হয়। এটি জমির মালিকের নাম, দাগ নম্বর, পরিমাণ এবং শ্রেণী উল্লেখ করে। এই খতিয়ানের অনুলিপিকেই 'পর্চা' বলে। এটি আপনার জমির বৈধ মালিকানা প্রমাণের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ দলিল।

৩. দাখিলা (খাজনা রশিদ):

ভূমি উন্নয়ন কর বা খাজনা পরিশোধের পর তহসিল অফিস থেকে যে রশিদ দেওয়া হয়, তাকে 'দাখিলা' বলে। এটি জমির মালিকানা ও দখলের একটি চলমান প্রমাণ। জমি বিক্রয়ের সময় এই দাখিলা দেখানো বাধ্যতামূলক। এমনকি খাজনা মওকুফ থাকলেও নামমাত্র (যেমন ২ টাকা) ফি দিয়ে দাখিলা সংগ্রহ করা সম্ভব।

৪. ওয়ারিশ সনদ ও সাকসেসন সার্টিফিকেট:

উত্তরাধিকার সূত্রে জমি পেতে 'ওয়ারিশ বা উত্তরাধিকার সনদ' আবশ্যক। এটি স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান, পৌরসভা অথবা সিটি কর্পোরেশনের মেয়রের মাধ্যমে ইস্যু করা হয়। পারিবারিক সম্পত্তি বণ্টনের ক্ষেত্রে এর গুরুত্ব অপরিসীম। তবে, যদি ওয়ারিশ সনদ নিয়ে কোনো আইনি জটিলতা থাকে বা বৃহৎ সম্পত্তির ক্ষেত্রে, আদালতের মাধ্যমে ইস্যুকৃত উত্তরাধিকার সনদকে 'সাকসেসন সার্টিফিকেট' বলা হয়।

৫. মিউটেশন (নামজারি) কপি:

জমির মালিকানা পরিবর্তনের সরকারি রেকর্ড হিসেবে সহকারী কমিশনার (ভূমি) অফিসে 'মিউটেশন' বা 'নামজারি' করানো বাধ্যতামূলক। পূর্ববর্তী মালিক থেকে আপনার নামে জমির মালিকানা স্থানান্তরের জন্য এটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি প্রক্রিয়া। এটি জমির আইনগত মালিকানা প্রতিষ্ঠায় অপরিহার্য।

৬. আদালতের রায় ও ডিক্রি:

ভূমি সংক্রান্ত যেকোনো বিরোধ বা জটিলতা আদালতের মাধ্যমে নিষ্পত্তি হলে সেই রায় বা ডিক্রি চূড়ান্ত দলিল হিসেবে গণ্য হয়। আপনার জমির মালিকানা বা সীমানা নিয়ে কোনো আইনি বিবাদ থাকলে এবং আদালত আপনার পক্ষে রায় দিলে, সেই রায় ও ডিক্রির কপি যত্ন সহকারে সংরক্ষণ করা উচিত।

৭. মৌজা ম্যাপ ও খণ্ডচিত্র:

'মৌজা ম্যাপ' হলো একটি নির্দিষ্ট মৌজার অন্তর্ভুক্ত জমির একাধিক খণ্ডচিত্রের ভিজ্যুয়াল প্রতিচ্ছবি। জমির সীমানা, অবস্থান এবং আকার বোঝার জন্য এটি একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ দলিল। এই ম্যাপ জেলা প্রশাসকের অফিসে সংরক্ষিত থাকে এবং নির্ধারিত ফি দিয়ে এর কপি সংগ্রহ করা যায়। সীমানা চিহ্নিতকরণ বা কোনো আইনি বিরোধে এটি অত্যন্ত সহায়ক।

অতএব, সচেতনতা ও সংরক্ষণ অপরিহার্য:

নতুন ভূমি আইনের বাস্তবতায় জমির দখল, মালিকানা এবং নিরবচ্ছিন্ন ব্যবহার নিশ্চিত করতে উপরে উল্লিখিত এই সাতটি দলিল যথাযথভাবে সংরক্ষণ করা আবশ্যক। বর্তমান ডিজিটাল যুগেও এই মূল দলিলের গুরুত্ব অপরিসীম।

অপরিহার্য দলিলপত্রাদি সঠিক ও হালনাগাদ অবস্থায় না থাকলে কেবল আপনার জমি নয়, প্রজন্মের পর প্রজন্ম ধরে অর্জিত আপনার পারিবারিক সম্পদও হারানোর ঝুঁকি তৈরি হতে পারে। তাই, এখনই আপনার সকল জমির দলিলপত্র পরীক্ষা করুন এবং প্রয়োজনীয় কাগজপত্র সংগ্রহ ও সংরক্ষণে সর্বোচ্চ মনোযোগী হোন।

FAQ (প্রশ্ন ও উত্তর):

১. প্রশ্ন: নতুন ভূমি আইনে জমি হারাতে না চাইলে কোন কাগজপত্র জরুরি?

উত্তর: রেজিস্টার্ড চুক্তিপত্র, বায়া দলিল, পর্চা, খতিয়ান, দাখিলা, ওয়ারিশ সনদ/সাকসেসন সার্টিফিকেট, মিউটেশন কপি, আদালতের রায়/ডিক্রি এবং মৌজা ম্যাপ ও খণ্ডচিত্র।

২. প্রশ্ন: পর্চা ও খতিয়ান কেন গুরুত্বপূর্ণ?

উত্তর: সরকারি জরিপের ভিত্তিতে জমির মালিকানা ও বিবরণ উল্লেখ করে, যা বৈধ মালিকানার মূল প্রমাণ।

৩. প্রশ্ন: দাখিলা (খাজনা রশিদ) কেন দরকারি?

উত্তর: ভূমি উন্নয়ন কর পরিশোধের প্রমাণ এবং জমি বিক্রির সময় বাধ্যতামূলক।

৪. প্রশ্ন: মিউটেশন বা নামজারি কী?

উত্তর: জমির মালিকানা পরিবর্তনের সরকারি রেকর্ড, যা নতুন মালিকানা প্রতিষ্ঠায় অপরিহার্য।

আব্দুর রহিম/

পাঠকের মতামত:

আপনার জন্য বাছাই করা কিছু নিউজ