ঢাকা, মঙ্গলবার, ২৩ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ৮ আশ্বিন ১৪৩২

Alamin Islam

Senior Reporter

নতুন ভূমি আইন: বাতিল ৭ ধরনের দলিল, বাড়ছে জমি সুরক্ষায় শাস্তি

জাতীয় ডেস্ক . ২৪আপডেটনিউজ
২০২৫ সেপ্টেম্বর ২৩ ১০:০৮:২৯
নতুন ভূমি আইন: বাতিল ৭ ধরনের দলিল, বাড়ছে জমি সুরক্ষায় শাস্তি

বাংলাদেশে জমি ক্রয়-বিক্রয় এবং ব্যবস্থাপনায় এক আমূল পরিবর্তন আনতে যাচ্ছে প্রস্তাবিত নতুন ভূমি আইন। 'ভূমি ব্যবহার স্বত্ব আইন' এবং 'ভূমি অপরাধ, প্রতিরোধ ও প্রতিকার আইন' নামের এই নতুন আইনগুলো দ্রুতই কার্যকর হতে চলেছে। এর প্রধান উদ্দেশ্য হলো জমি সংক্রান্ত জালিয়াতি ও অবৈধ দখল রোধ করা এবং ভূমি লেনদেনে স্বচ্ছতা আনা। এই আইন কার্যকর হলে ৭ ধরনের দলিল স্বয়ংক্রিয়ভাবে বাতিল বলে গণ্য হবে এবং ভূমি অপরাধের জন্য কঠোর শাস্তির বিধান রাখা হয়েছে।

যে ৭ ধরনের দলিল আর কার্যকর থাকবে না:

নতুন আইনের আওতায় যেসব দলিল আইনি বৈধতা হারাবে, তার একটি বিস্তারিত চিত্র নিচে তুলে ধরা হলো:

১. রেজিস্ট্রিবিহীন দলিল: যে সকল জমি ক্রয়-বিক্রয়ের দলিল সাব-রেজিস্ট্রি অফিসে নিবন্ধিত হয়নি, সেগুলো অবৈধ বলে বিবেচিত হবে।

২. জাল খতিয়ান: প্রতারণার মাধ্যমে প্রস্তুতকৃত বা ভুয়া তথ্য সংবলিত খতিয়ান বাতিল বলে গণ্য হবে।

৩. জাল দলিল: যেকোনো ধরনের জাল বা মিথ্যা দলিল নতুন আইনের অধীনে কোনো কার্যকর থাকবে না।

৪. খাস জমি দখলের দলিল: সরকারি খাস জমি অবৈধভাবে দখল করে তৈরি করা যেকোনো দলিল অকার্যকর হবে।

৫. ওয়ারিশদের বঞ্চিত করা দলিল: উত্তরাধিকারীদের ন্যায্য অধিকার থেকে বঞ্চিত করে সম্পত্তি বিক্রির দলিল বাতিল বলে গণ্য হবে এবং এটি একটি ফৌজদারি অপরাধ হিসেবে বিবেচিত হবে।

৬. জালিয়াতিপূর্ণ হেবা বা দানপত্র: হেবা (দান) হিসেবে প্রাপ্ত জমি যদি জালিয়াতির মাধ্যমে গ্রহণ করা হয়, তবে সেই সংক্রান্ত দলিল অকার্যকর হবে।

৭. অন্যান্য প্রতারণামূলক দলিল: উপরে উল্লেখিত ধরনগুলো ছাড়াও, যেকোনো অবৈধ বা প্রতারণামূলক উপায়ে তৈরি দলিল নতুন আইনের আওতায় বাতিল করা হবে।

জমি রেজিস্ট্রেশনের গুরুত্ব ও অত্যাবশ্যকীয় নিয়মাবলী:

নতুন আইন অনুযায়ী, বাংলাদেশে জমি সংক্রান্ত যেকোনো লেনদেন—যেমন বিক্রয় দলিল, বায়না দলিল, হেবা বা দানপত্র, বন্ধক দলিল, উত্তরাধিকার ভিত্তিক বাটোয়ারা বা আপোস বণ্টননামা—সবকিছুই সাব-রেজিস্ট্রি অফিসে রেজিস্ট্রি করা বাধ্যতামূলক।রেজিস্ট্রেশন প্রক্রিয়ায় দলিলে নিম্নলিখিত তথ্যগুলো স্পষ্টভাবে উল্লেখ করতে হবে:

জমির সম্পূর্ণ ও সঠিক বিবরণ।

দাতা ও গ্রহীতার পিতা-মাতার নাম, ঠিকানা এবং ছবি।

জমির মালিকানার ধারাবাহিক ইতিহাস।

জমির চারপাশের সীমানা এবং একটি বিস্তারিত নকশা।

রেজিস্ট্রি ফি ও কর: কার দায়িত্ব কতটুকু?

আইন অনুযায়ী, জমি রেজিস্ট্রেশন ফি, ভ্যাট এবং উৎসে কর পরিশোধের দায়িত্ব বিক্রেতার। বিক্রেতার আয়ের ওপর নির্ভর করে আয়কর আইনের অধীনে করের পরিমাণ নির্ধারিত হবে। তবে, অন্যান্য সকল প্রকার করের দায়িত্ব ক্রেতার ওপর বর্তাবে।

ভূমি অপরাধে কঠোর শাস্তি: জেল ও জরিমানা:

জমি সংক্রান্ত জালিয়াতি, প্রতারণা বা অবৈধ দখলের মতো অপরাধ দমনে নতুন আইনে অত্যন্ত কঠোর শাস্তির বিধান রাখা হয়েছে:

কারাদণ্ড: অপরাধের ধরন অনুযায়ী ৩ মাস থেকে শুরু করে সর্বোচ্চ ৫ বছর পর্যন্ত কারাদণ্ডের বিধান রাখা হয়েছে।

জরিমানা: ১০ হাজার টাকা থেকে শুরু করে ১০ লক্ষ টাকা পর্যন্ত জরিমানা ধার্য করা হতে পারে।

বিশেষ করে, ওয়ারিশদের অধিকার থেকে বঞ্চিত করে সম্পত্তি বিক্রির ক্ষেত্রে দলিল বাতিল হওয়ার পাশাপাশি জড়িত ব্যক্তি ফৌজদারি অপরাধের জন্য দায়ী হবেন এবং কঠোর শাস্তির মুখোমুখি হবেন।

স্বচ্ছ ও নিরাপদ ভূমি ব্যবস্থাপনার দিকে বাংলাদেশ:

বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, নতুন ভূমি আইন কার্যকর হলে বাংলাদেশের ভূমি ব্যবস্থাপনায় এক নতুন দিগন্ত উন্মোচিত হবে। এটি জমি বাজারে স্বচ্ছতা আনবে, জালিয়াতি কমাবে এবং ভূমি লেনদেনে নিরাপত্তা নিশ্চিত করবে। এই আইন ভূমি সংক্রান্ত দীর্ঘদিনের বিবাদ ও প্রতারণা প্রতিরোধে একটি অত্যন্ত কার্যকর পদক্ষেপ হিসেবে কাজ করবে বলে আশা করা হচ্ছে, যা দেশের overall অর্থনৈতিক ও সামাজিক উন্নয়নে ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে।

FAQ উত্তর (FAQ Answers):

নতুন ভূমি আইন কবে কার্যকর হবে?

নতুন ভূমি আইন (ভূমি ব্যবহার স্বত্ব আইন ও ভূমি অপরাধ, প্রতিরোধ ও প্রতিকার আইন) দ্রুতই কার্যকর হতে যাচ্ছে।

নতুন আইনে কোন ৭ ধরনের দলিল বাতিল হবে?

রেজিস্ট্রিবিহীন দলিল, জাল খতিয়ান, জাল দলিল, খাস জমি দখল করে তৈরি দলিল, ওয়ারিশদের বঞ্চিত করে সম্পত্তি বিক্রির দলিল, জালিয়াতিপূর্ণ হেবা বা দানকৃত জমি এবং অন্যান্য অবৈধ/প্রতারণামূলক দলিল বাতিল হবে।

জমি জালিয়াতির শাস্তি কী?

জমি জালিয়াতি বা অবৈধ দখলের জন্য ৩ মাস থেকে ৫ বছর পর্যন্ত কারাদণ্ড এবং ১০ হাজার থেকে ১০ লক্ষ টাকা পর্যন্ত জরিমানার বিধান রাখা হয়েছে।

ওয়ারিশদের বঞ্চিত করে সম্পত্তি বিক্রি করলে কী হবে?

ওয়ারিশদের বঞ্চিত করে সম্পত্তি বিক্রির দলিল বাতিল হবে এবং সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি ফৌজদারি অপরাধে দায়ী হবেন।

রেজিস্ট্রেশনের জন্য কোন তথ্যগুলো আবশ্যক?

জমির সম্পূর্ণ বিবরণ, দাতা-গ্রহীতার পিতা-মাতার নাম, ঠিকানা, ছবি, মালিকানা ধারাবাহিকতা এবং চারপাশের সীমানা ও নকশা দলিলে উল্লেখ থাকতে হবে।

আব্দুর রহিম/

পাঠকের মতামত:

আপনার জন্য বাছাই করা কিছু নিউজ